তরুন ,নবীন এই শব্দ গুলোরে কুষ্ঠরোগের মতো এভয়েড করা দরকার। এই শব্দ গুলোর মধ্যে একটা আদারাইজেশান আছে, যে তুমি ছোট, তুমি পারবানা, তোমার যথেষ্ট ম্যাচিউরিটি নাই, তুমি ফিট না- ইত্যাদি।
এডওয়ার্ড সাইদ ওরিয়েন্টালিজমে দেখাইছিল, কিভাবে প্রাচ্যের মানুষকে একটা নির্দিষ্ট ভাবে রিপ্রেজেন্ট করার মাধ্যমে তাদের শুধু আলাদা ভাবেই দেখানো হয়না-সেই দেখানোটা আসলে প্রমান করে এরা পিছয়ে পড়া বা অসভ্য। এইটা একটা অদারাইজেশান বা ভিন্নকরন।
তরুন, তারুন্য, নবীন এই শব্দ গুলোর মাধ্যমেও আমাদের রাজনিতিতে এই কাজটা করা হয়। বর্তমান ছাত্রছাত্রিদের বিদ্রোহেও এ একই কাজ করা হইতেছে। মন্ত্রীরা যখন কোমলমতি শিক্ষার্থী, মেধাবি ছাত্র ছাত্রী, তরুন প্রজন্ম ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করেন, তখন তাদের একটা ইম্যাচিউরিটিকে নির্দেশ করে বোঝাতে চান যে এই আন্দোলনকারীদের নিজেদের ইন্টেরেস্ট বোঝার মত ম্যাচুরিটি হয়নাই । তারা এই ছাত্রছাত্রিদের নাগরিক সত্ত্বাকে আলাদা করে, সেইটাকে কোমল মতি শিক্ষার্থীদের বন্ধু হারানোর ক্ষোভ হিসেবে দেখাতে চান।
রিয়ালিটি হচ্ছে, এই ছাত্র ছাত্রীদের আন্দোলন নাগরিক অধিকারের আন্দোলন। উত্তরা রোডের এক্সিডেন্ট তাদের অনেক দিনের ক্ষোভের একটা টিপিং পয়েন্ট মাত্র। নইলে, এরা কেন ট্রাফিক মোড়ে গিয়ে সিগণাল দিচ্ছে, বা রাস্তা ঠিক করতেছে বা জ্যাম কনট্রোল করতেছে। তাদের এই এক্টিভিজমের সাথে তাদের ছাত্রত্ব বা শিশুত্ব বা কৈশোরত্ব বা তরুণত্বের কোন সম্পর্ক নাই। এইটা নাগরিক অধিকারের আন্দোলন। একটা ১৪ বা ১৫ বছরের কিশোর, রাষ্ট্রের সাথে বোঝা পড়ায় কি পাওয়ার কথা কি পাইতেছে সেইটা একটা ৫৫ বছরের ঝুনা রাজনীতিবিদ থেকে কম বুঝে না। সে এখন রাস্তায় নামছে, নাগরিক হিসেবে। তার ছাত্র পরিচয়টা তার প্রটেকশান মাত্র।
আজকে শুধু এই ছাত্রদেরকেও না, আমরা যারা এখন চল্লিশ পার হইছি, দুই তিন পোলার বাপ হইছি, টাইম মত বিয়ে করলে আমাদের যাদের মেয়েদের বিয়ের বয়স হইত আমাদেরকেও এখনো, তরুন প্রজন্ম বলে অবিহিত করা হয় শুধু মাত্র আমাদের বক্তব্যকে মারজিনালাইজ করার জন্যে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বঙ্গবন্ধুর বয়স ছিল, ৫১, ওসমানীর ৫৩, তাজুদ্দিনের ৪৬, জিয়াউর রহমানের ৩৫। সেক্টর কমান্ডারদের কারো বয়সই, ৪০ এর উপরে ছিল না। তারা যুদ্ধ করে একটা দেশকে মুক্ত করেছেন, কিন্ত আমাদের দেশের ৪৫ বছরের রাজনীতিবিদকে বলা হয় তরুন প্রজন্ম। এই ছাত্ররা যারা আজকে রাস্তায় নেমেছে, তাদেরকেও এখন শিশু, তরুন বলে মারজিনালাইজ করার চেষ্টা করা হইতেছে।
বলা হইতেছে,এরা এখনো পলিটিকাল স্টেট্মেন্ট দেয়ার মত বালেগ হয় নাই। রিয়ালিটি হচ্ছে, এরা নাগরিক হিসেবে তাদের স্টেট্মেন্ট দিতেছে, স্টুডেন্ট হিসেবে না। রিয়ালিটি হচ্ছে, উত্তরার যে কিশোরী রাস্তা সুইপ করতেছিল, সে একজন ওবায়দুল কাদের থেকে ভালো মিনিস্ট্রি চালাইতে পারবে। কোটা আন্দোলনের নেতারা শেখ হাসিনার থেকে ভালো দেশ চালাইতে পারবে।রিয়ালিটি হচ্ছে আমাদের দেশের যে রাজনীতিবিদেরা মিনিস্ট্রিতে বসেন, তাদের অধিকাংসের ঐ বিষয়ে পলিসিগত এবং একজেকিউটিভ ধারনা থাকেনা। ফলে তারা আলটিমেটলি বিজনেস ইন্টেরেস্টের হাতে তার ডিপার্টমেন্টের ডিসিশান মেকিং ছেড়ে দেন এবং সচিবদের কথায় পাপেট হয়ে চলেন। আমি কম বেশী রাজনীতিবিদদের সাথে মিসছি এবং মিশে এই উপলব্ধি হইছে যে এই রাজনীতিবিদদের মূল এক্সপেরিয়েন্স হইলো সাঙ্গোপাঙ্গো নিয়ে শোমানশিপ, মাস্তানি, আর মুখে মুখে বাকোয়াজি করা।
আজকে, তারা স্টুডেন্টদেরকে কোমলমতি শিক্ষার্থী, মেধাবি ছাত্র ছাত্রী, তরুন প্রজন্ম এই সব বলে যে ফিরে যাইতে বলতেছেন, তাতেও তাদের মূল ধান্দা হচ্ছে-নাগরিক হিসেবে এই ছেলে মেয়েরা যে অধিকার দাবী করছে সেই দাবীগুলোকে কোমল মতি ছাত্রের অভিমান হিসেবে দেখিয়, সেই গুলো সাপ্রেস করা। নইলে, তারা এদের সাথে বসতো , আলোচনা করতো। এবং ন্যায্য দাবী গুলো মেনে নিতো। কিন্ত তারা সেইটা করতেছেনা, তারা জাস্ট নিজের পজিশানের অথরিট ব্যবহার করে, এই ছাত্র ছাত্রিদের নাগরিক অধিকারের দাবী-যা মূলত এই দেশের সকল সুস্থ চিন্তার মানুষের দাবী- সেই গুলোকে সাপ্রেস করতেছে।
আজকে টাইম আসছে, এই অবারচিন অযোগ্য লোক গুলোকে এদের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে, ব্যাগ এন্ড ব্যাগেজ এই দেশ থেকে পালিয়ে তাদের সুইস ব্যাংকে রাখা টাকায় নির্বাসনে থেকে যাওয়া। এই ছেলে মেয়ে গুলোর হাতে দেশটা ছেড়ে দিলে, তারা এই দেশটাকে এই সব করাপ্ট জ্পাঞানপি রাজনীতিবিদদের থেকে অনেক বেশী ভালো ভাবে চালাতে পারবে।এইটা আমি রেঠরিকালি বলি নাই। মিন ইট।2018 augustনিরাপদ সড়ক আন্দোলন।