নৈতিকতাবাদির চিন্তা পদ্ধতি

নৈতিকতাবাদির চিন্তা পদ্ধতি দিনে দিনে আমার কাছে সমস্যাপূর্ণ মনে হচ্ছে। এবং তাদেরকে দিন দিন আমি সন্দেহের চোখে দেখি।

নৈতিকতা বাদি কারা ?

নৈতিকতাবাদিরা হচ্ছে সেই গ্রুপ যারা  সকল প্রশ্নের নৈতিক ভিত্তি টাকে খোজ করে। সেই খোজের ভিত্তিতে সমাজে ভালো খারাপ নির্ধারণ করে।

বাংলাদেশে নৈতিকতাবাদি বলতে আমি দুইটি গ্রুপকে চিহ্নিত করি, এক বামপন্থি, দুই হেফাজতে ইসলামি।

এদেরকে চিহ্নিত  করতে আমার কাছে অস্কার  ওয়াইল্ডের রেথরিক উল্টো করে  ব্যবহার করা,   একটা ইংরেজি সংজ্ঞা আছে, যার কোন ভাল বাংলা ট্রান্সলেশান আমি করতে পারি না।

নৈতিকতাবাদি হচ্ছে তারা – who knows the value of everything but the cost of nothing.

যেমন, হেফাজত ইসলামির মূর্তি/ভাস্কর্য  ইস্যু। তারা জানে, এইটা তাদের জায়গা থেকে অনৈতিক এবং সেই জন্যে তাদের এক্টিভিজম। কিন্তু, বাংলাদেশে যদি তারা  ভাস্কর্য বন্ধ করে দেয়, তার ফলে, গ্লোবালি এবং স্থানীয় রাজনীতিতে কি প্রভাব পরবে এবং তার ফলে তাদের কার্যক্রম ক্রমকে উদাহরণ হিসেবে  দেখিয়ে ফ্যাসিবাদ কিভাবে আন্তর্জাতিক প্রপাগান্ডার মধ্যমে  ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করবে,  সেইটা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা  নেই।

ঠিক তেমনি জ্বলন্ত কড়াই থেকে ফুটন্ত উনুন তত্ত্ব দিয়ে যারা আওয়ামি শাসনকে দিরঘায়িত করতে পলিটিকাল স্যাটেল্মেন্ট তৈরি করেছে, তারা কিন্তু এক দিক থেকে রাইট- আসলেই- বিএনপি প্রমান করতে পারে নাই- তারা আওয়ামি লীগ থেকে খুব বেশী কিছু বেটার হবে। কিন্তু দা কষ্ট- ওয়েল আমরা অনেক আগের থেকেই জানতাম এই রাষ্ট্রে বাধাহীন ভাবে কোন শাস্তির ভয় ছাড়া লুট, দখল , খুন ধর্ষণের  বৈধতা পেয়ে কি পরিনতি হবে।

কি মুল্য দিতে হবে আমরা জানতাম। এই দেশের একটা সিএনজিওয়ালা পর্যন্ত জানতো। 

কিন্তু, এরা এই পরিনতির কথা নৈতিকতাবাদিরা  জানতোনা। তাদের কাছে তাদের জায়গা থেকে  ভ্যালুটাই আসল।

আমি আরো অনেক উদাহরণ দেখাতে পারবো, নৈতিকতাবাদি চিন্তার বিপদ কি।

তার মানে নয়, সমাজে নৈতিকতাবাদি চিন্তার  প্রয়োজন নেই।

এবসোলিউটলি নট।

নৈতিকতা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

কিন্তু,  প্রব্লেম হচ্ছে, যখন নৈতিকতাবাদিরা তাদের চিন্তা পদ্ধতির কারনে, সমাজকে ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট ছাড়া দেখতে পারেনা। তখন তার কাছে, সকল প্রশ্ন হয়ে যায়,  শত্রু মিত্র নির্ধারণের । সে আর কোন গ্রে দেখতে পায় না, দেখতে পায়না কত মানুষ বাস্তবতার কারনে নিজের এবং সমাজের নৈতিকতার কাছে কম্প্রোমাইজ করে বসে আছে।

কিন্তু নৈতিকতাবাদিদের কাছে, যারা কম্প্রোমাইজ করেছে তারা সকলেই শত্রু ।

এই কম্প্রমাইজের ভিত্তিতে  সমাজেও একটা নিজস্ব  নৈতিকতার ধারা থাকে যার ভিত্তিতে সমাজ গ্রহন বর্জনের সিমানা নির্ধারণ করে। সমাজের এই নৈতিকতা অর্থসামাজিক বাস্তবতার ভিত্তিতে তৈরি হয়।

কিন্তু, নৈতিকতাবাদিরা সমাজের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় তৈরি,  এই নৈতিকতার ধারা থেকে অনেক এগিয়ে থাকে। এই দিক থেকে তারা সোশ্যাল রেভুলুশানারি। এবং তাই,  অনেক দেশেই তাদের হাতে বিপ্লব হয়েছে।

কিন্তু প্রব্লেম হচ্ছে, বাংলাদেশের মত দেশে নৈতিকতাবাদিদের বিপ্লবতো দুরের কথা সামান্য পরিবর্তনের ক্ষমতা নেই, তাই  তারা  শুধু মাত্র স্ট্যাটাসকো রক্ষা করে। এবং তারা ক্ষুদ্র এবং চলমান  পরিবর্তনের বাধা হয়ে দাড়ায় কারন, এখানে  ফ্যাসিস্টরা এতো শক্তিশালি তাদের সামান্যতম পায়ের নখের ময়লা পরিস্কারের ক্ষমতা নৈতিকতাবাদিদের থাকেনা।

তাই তারা ফাইনালি সব সময়েই,  ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো শক্তিটিকে অনৈতিক হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বাতিল করে দেয় এবং আল্টিমেটলি স্ট্যাটাস কো টেকায় রাখে।

অন্যদিকে ফ্যাসিস্টরা  কিন্তু,  নৈতিকতার শক্তি  জানে। এবং  তারা জানে, নৈতিকতা সমাজে শক্তি উৎপাদন করে। এবং আরো জানে, নৈতিকতাবাদিরা যখন ফ্যাসিসট বিরোধীদের  যথেষ্ট নৈতিক না বলে দাবী করে  বাতিল করে, এইটা তাকে একটা আপার‍ হ্যান্ড দেয়।

তাই বুদ্ধিমান ফ্যাসিস্ট নৈতিকতাবাদিদের ক্যারট এবং স্টিক পদ্ধতিতে লাইনে রাখে এবং নিজের এডভান্টেজের জন্যে নৈতিকতাবাদিদের সামাজিক শক্তিকে ব্যবহার করে।

হেফাজত এবং বাম উভয়েই এই জায়গা থেকে ফ্যাস্টিস্ট কে এনাবল করে , নৈতিকতাবাদিদের নিয়ে এইটাই আমার বাংলাদেশে সব চেয়ে বড় আপত্তি ।

নৈতিকতাবাদিদের আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, তারা শুধু মাত্র নৈতিকতা দিয়ে শত্রু মিত্র নির্ধারণ করে না, তারা নিজেদেরকে নৈতিকতাবাদের এজেন্ট মনে করে।

আমি সমাজে অনেক ব্যক্তিকে দেখেছি, যারা হেফাজত বা বামপন্থিদের থেকে নৈতিকতার মূল প্রশ্নে, হেফাজত বা বাম থেকে অনেক শুদ্ধাচারী এবং সৎ। কিন্তু তারা নিজেদের নৈতিকতাবাদি মনে করেনা। এবং তারা সেই ভাবে সমাজকে জাজ করে না।

এইটা বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞার  মত , যে অনেকেই বুদ্ধি দিয়ে জিবিকা নিরবাহ করে কিন্তু বুদ্ধিজীবী সেই যে বুদ্ধিজীবীর রোল প্লে করে- নৈতিকতাবাদিরা এই জাজমেন্টের ভুমিকার মাধ্যমে সমাজে জাজ হয়ে দাড়ায়। 

এইটাই নৈতিকতাবাদিদের সাথে নৈতিক ব্যক্তিদের পার্থক্য। এরা ব্যক্তি হিসেবে, খুব বেশী যে নৈতিক তা নয় কিন্তু, এরা নৈতিকতাবাদির রাজনৈতিক ভুমিকা পালন করে এবং সমাজে পক্ষ বিপক্ষ নির্ধারণ করে এবং সমাজ কে জাজ করে।

ফ্যাসিস্টকে টিকায় রাখা শক্তিকে এতো দূর ক্ষমতা  দিতে আমার আপত্তি আছে। 

সমাজে নৈতিকতার ভুমিকা অপরিসীম। নৈতিকতাবাদিরা সব সময়েই সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে কারন, নৈতিকতা ক্ষমতা উপাদন করে।

কিন্তু আমি সব সময়েই সেই ব্যক্তিকে সন্দেহের চোখে দেখবো – who knows the value of everything but  the cost  of nothing.

Leave a Reply

Your email address will not be published.