আমার মতে, Pinaki Bhattacharya – পিনাকী ভট্টাচার্য এবং জনাব ফরহাদ মজহার উভয়ের কিছু আর্গুমেন্ট ঠিক, কিছু ভুল ।প্রথমে কার কোন আর্গুমেন্ট গুলো ঠিক তা দেখে নেই।
একজন পাবলিক প্রোফাইল ব্যক্তির মৃত্যুর পরে, তাকে নিয়ে কিছু লেখা যাবেনা কারণ উনি কবর থেকে এসে কিছু ডিফেন্ড করতে পারবেন না এই যুক্তি আমি ফান্ডামেন্টালি ত্রুটিপূর্ণ মনে করি ।নিউজ সাইকেলের দ্রুত উত্থান পতনের গ্রাফ অনুসারে, একজন পাবলিক প্রফাইল ব্যক্তির মৃত্যুর পর পরেই, তাকে নিয়ে একটি আলোচনা শীর্ষে পৌঁছাবে এবং খুব দ্রুত আলোচনাটি হারিয়ে যাবে । নিউজ সাইকেলের পিক পিরিয়ড থাকতে থাকতেই তার কাজকে যারা মহৎ মনে করেছেন, তারা তার সুনাম করবেন। তার কাজকে যারা সমস্যাপূর্ণ মনে করেছেন, তারা তার কর্ম সাধনায় কি ত্রুটি ছিল তা তুলে ধরবেন। এইটা জাস্ট নরমাল।
মিজানুর রহমান খানের মৃত্যুর পরে, তাকে নিয়ে সকল মহলে প্রশংসার যে বন্যা – সেখানে প্রথমে বন্ধু Khandaker Raquib উদাহরণ সহ তুলে ধরেছেন যে-মিজানুর রহমান খান কিভাবে ফ্যাসিস্ট বয়ান নির্মাণ করেছেন যার উপরে আওয়ামী লিগ আজকে ১৬ কোটি মানুষের জীবন, জীবিকা সম্ভাবনা সব কিছু ধ্বংস করেছে।এবং পিনাকীদা আলোচনাটি বড় করেছেন, কিভাবে মিজানুর রহমানের তৈরি করা বয়ান এবং কর্ম আওয়ামী লিগের পক্ষে গ্যাছে। মিজানুর রহমানের মৃত্যুর পরে পরেই সেই সমালোচনার সমালোচনা হয়েছে। আমি মনে করি, এই সমালচনার যে উত্তর পিনাকিদা দিয়েছেন তা যথেষ্ট যৌক্তিক।
যে প্রথম আলো বা মিজানুর রহমানদের মত প্রখাত সাংবাদিকেরা তাদের হেজেমনি ব্যবহার করে তাদের নিজেদের বয়ানটা বলেই যান, কাঊণ্টার বয়ানটা আমলেও নেন না, পাত্তাও দেন না। এবং উনি বেচে থাকতেই এবং প্রথম আলোর বাকি সাংবাদিকেরা বেচে থাকতেই তাদের পর্যাপ্ত সমালোচনা হচ্ছে, এবং সেই গুলো তারা এখনো আমলে নেন না বা কখনই জবাব দেন না।তাদের নিজস্ব ইকো চেম্বারে পিঠ চাপড়ে দেন মাত্র । ফলে তার মৃত্যুর পরেও তার সমালোচনা করা যাবেনা কারণ “তিনি কবর থেকে এসে উত্তর দিতে পারবেন না”- ভাবনাটি যৌক্তিক নয়। আমি নিজের কথা বলতে পারি। মিজানুর রহমান খানের মৃত্যুর পরে আমি ব্যথিত হয়েছে , এতো অল্প বয়সে করোনাতে একজন শীর্ষ সাংবাদিক প্রান হারালেন বলে। মৃত্যুর পরে মিজানুর রহমান খানের জীবন এবং কর্ম নিয়ে চারিদিকে যে প্রশংসাবানি শুনেছি তাতে আমার মনে হয়েছে, পুরো আলোচনাটা এক মুখি হয়ে গ্যাছে। কারণ তার কর্মের সমালচনার যৌক্তিক ভিত্তি রয়েছে।
আমার কাছে সব সময়ে মনে হয়েছে, যে দেশে প্রধান বিচারপ্রতিকে সরকার ডিজিএফআই দিয়ে প্লেনে তুলে বিদেশে পাঠায় দেয়, তারপরে তার কাছের লোককে গুম করে তার মুখ বন্ধ রাখে , যে দেশের মিডনাইট ইলেকশানের সংসদ শেখ হাসিনার মনোবাঞ্ছা পুরন করার একটা সিল মাত্র সেখানে রাষ্ট্রের সংবিধান এবং আইন ব্যবস্থা নিয়ে ক্রিটীকাল এনালি এবং সেই দেশে কোন মামলার মেরিট কি সেইটা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা সংবিধান এবং আইন নিয়ে জনগণের মনে একটি প্যারালাল রিয়ালিটি তৈরি করে।এই প্যারালাল রিয়ালিটি রিয়েল ওয়ার্ল্ডে আমরা যে আনফ্রিডম গুলো অনুভব করি সেই আনফ্রিডম গুলি কে ভার্চু সিগনালিং দিয়ে রিপ্লেস করে দেয়। এই পার্যালাল থেকে রিয়ালিটি যারা মুক্তি চায় তাদের মুক্তির স্বপ্ন কে এমন ভাবে বিকৃত করে যে মানুষ স্বাধীনতা ও স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারেনা।
অনেক আগেই লিখেছিলেম ছোট কালে দুর্বল খেলারি বলে, আমাকে খেলায় নেওয়া হত দুধ ভাত খেলোয়ার হিসেবে যে বোলিং করবে ব্যাটিং করবে, কিন্তু তার কোন রান ও উইকেট কাউন্ট হবেনা। সংবিধান এবং আইন নিয়ে মিজানুর রহমান এবং তার সহকর্মীদের আলোচনা সেই দুধ ভাত খেলার ইলিউশানকে জনগণের সামনে একটি রিয়েল ম্যাচ হিসেবে তুলে ধরে। এইটা তারা পারেন সকল বিরোধী মতবাদের পেপারকে বন্ধ করে দেওয়ার কারনে প্রাপ্ত কম্পিটিশান হীন খোলা মাঠ এবং পূর্বের নৈতিকতায় অর্জিত হেজেমনির কারনে -যে নৈতিকতা এখন আর তারা ধারন করেন না। আমি আরগু করেছি, দুধ ভাত খেলার এই ইলিউশান ফ্যাসিস্ট দের প্রকৃত রিয়ালিটি ঢেকে রাখে।কিন্তু আমি সেইটা নিয়ে লিখি নাই। কারণ, আমার কাছে মনে হয়েছে এখন এইটা লেখা অসৌজন্যমূলক। এবং আমি যদি লিখি আমার কাছের কিছু মানুষ কষ্ট পাবে। আমি তাদের আহত করতে চাই না। আমি এমনিতেই আগের মত সব বিষয়ে মতামত দেই না, লিখলে আমি ফরহাদ মজহারের মত একটা সৌজন্য মূলক কিছুই লিখতাম।উনার সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় নাই।কিন্তু ফরহাদ মজহারের আছে। তাই জনাব ফরহাদ মজহার একটি সৌজন্যমূলক আলাপ করেছেন। তিনি লিখেছেন মিজানুর রহমানের মৃত্যুতে তিনি আহত হয়েছেন, যেইটা আমি মনে করি পারফেক্টলি অলরাইট । এতো দূর সহমর্মিতা ও সৌজন্যতা আমরা দেখাতেই পারি। দেখাতেই হবে।
পিনাকীদার প্রব্লেম হচ্ছে, তিনি এই সৌজন্য দেখানোতে প্রব্লেম পেয়েছেন। তার মতে ফরহাদ মজহার সাপ এবং ব্যাং এর মুখে চুমু খাচ্ছেন।পিনাকী দা তারপরে একজন মার্কিন কোন সমাজবিজ্ঞানীর রেফারেন্সে আর্গুমেন্ট দিয়েছেন যে, শত্রুকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন সত্ত্বা মনে করতে হবে। এবং আমরা যদি মনে করি, শত্রু বেচে থাকলে সে আরো ক্রিমিনাল অফেন্স করবে তাহলে শুধু পরাজিত করলেই হবেনা, তাকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে।পিনাকিদার মতে এইটা সকল মানুষ করে। এবং যেহেতু আমরা সকলে মানুষ। উনার যুক্তি অনুসারে আমাদের সকলকেই তাই করতে হবে। শত্রুকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। এবং শত্রুকে নিশ্চিহ্ন করার পর্যন্ত থামা যাবেনা।
পিনাকীদার আর্গুমেন্ট মতে,বর্তমান ফ্যাসিবাদ বিরোধি লড়াই এ তিনি শত্রু কে কে সেইটা ডিফাইন করেছেন। এবং তাদের নিশ্চিহ্ন করার আগে তিনি ক্ষান্ত হবেন না।মিজানুর রহমানের বিষয়ে পিনাকিদার বক্তব্য যৌক্তিক মনে হলেও, ফরহাদ মজহারের সৌজন্য দেখানোকে এক ধরনের ফ্যাসিস্ট এপলজি হিসেবে দেখানো এবং শত্রুকে নিশ্চিহ্ন করার এই চিন্তা পদ্ধতি ও রাজনীতিকে প্রচন্ড প্রব্লেমেন্টিক মনে করি।
উনার আর্গুমেন্টে তিনটি ভয়ংকর সমস্যা পাই যা আমি পূর্বেই চিহ্নিত করেছি।১। তিনি কাকে কাকে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করতেছেন।২। তিনি যে সিগনাল দিচ্ছেন, তিনি নিশ্চিহ্ন করার আগে থামবেন না। এবং তার কোন কম্প্রোমাইজের জায়গা নাই। সেই সিগনাল তার চিহ্নিত শত্রুর নিজের সারভাইবালের এবং টিকে থাকার সব চেয়ে বড় ইনসেন্টিভ কিনা ?৩। যারা বিদ্যমান ব্যবস্থার সাফারার কিন্তু, নিরবে সাইড লাইনে বসে আছে, সেই ৯০% মেজরিটি কি ভাবছে না ” যে আরেক জনকে নিশ্চিহ্ন করার রাজনীতি করে, সে আমাকে নিশ্চিহ্ন করবেনা, তার গ্যারেন্টি কি ? তাই আমি বরং স্ট্যাটাসকোতেই বসে থাকি। কারন স্ট্যাটাস কো অন্তত আমাকে নিশ্চিহ্ন করছেনা”?এই গুলো নিয়ে আমি পিনাকিদার সাথে পূর্বে দীর্ঘ বিতর্ক করেছি, তারপরে উনার ভক্ত কুল আমাকে নিয়ে যথেষ্ট হাসি ঠাট্টা করেছে। কিন্তু আমি স্টিল উনার আরগুমেন্টের সমস্যা গুলো কি আবার আলোচনা করবো দ্বিতীয় পর্বে। কিন্তু, যেটা বলবো তা অল্পে বলে যেতে পারি সম্পর্ক, বন্ধুতা , মানবিকতাবোধ হীন শত্রু নিশ্চিহ্ন কারি লড়াই এর আলাপ দিয়ে পিনাকিদা তার পাঠকদের এক্সাইট করছেন, এর ফলাফল একটা বড় শুন্য।সে আলাপ দ্বিতীয় পর্বে।