শ্রম অধিকার, মানবাধিকার ও জিএসপি

২০২৪ এর জানুয়ারিতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নতুন একটি জিএসপি আইন প্রবর্তিত হতে যাচ্ছে।  এই আইনটি ২০২১ এর সেপ্টেম্বারে প্রস্তাব আকারে পেশ করা হয়েছে এবং ২০২২ এ আইনটি ইউরোপিইয়ান ইউনিয়নের পারলামেন্ট পাশ করবে (প্রায় নিশ্চিত)। যার ফলে আইনটি ২০২৪ এর জানুয়ারি থেকে ২০৩৪ পর্যন্ত  চালু থাকবে। এই পরিবর্তিত আইনি কাঠামো বাংলাদেশের জন্যে বিশেষ কিছু ঝুঁকি তৈরি করেছে। এই ঝুঁকিটি বুঝতে হলে সবার প্রথমে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ের জিএসপি কাঠামোটি বোঝা প্রয়োজন।    

উন্নয়নশীল ও নিম্ন আয়ের দেশের জন্যে  ইউরোপের তিন ধরনের জিএসপি সুবিধা প্রচলিত রয়েছে। এই সুবিধা গুলো হচ্ছে-

১।     ইবিএ- এভ্রিথিং বাট আর্মস।

 বিশ্ব ব্যাংকের চিহ্নিত নিম্ন আয়ের দেশগুলো এই সুবিধা পায়(নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ পায় না)। এই আইনের অধীনে নিম্ন আয়ের দেশগুলো অস্ত্র বাদে সকল পন্য শুন্য শুল্কে ইউরোপে রপ্তানি করতে পারে। বাংলাদেশে ইবিএ-এর অধীনে ইউরোপে  শুন্য শুল্ক দিয়ে সকল পন্য রপ্তানি করতে পারে।  

JOINT REPORT TO THE EUROPEAN PARLIAMENT AND THE COUNCIL

খেয়াল করে দেখবেন, বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র কম্বোডিয়া ইবিএ সুবিধা পেয়ে থাকে।

২।    জিএসপি -জেনারেল সিস্টেম অফ প্রেফারেন্স – বিশ্ব ব্যাংকের চিহ্নিত নিম্ন ও  নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ এই সুবিধাটি পায়। এই আইনে কিছু কিছু পণ্যে শুন্য শুল্ক এবং ৬৬ শতাংশ পন্যে  ৩.৫% শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। জিএসপিপ্রাপ্ত দেশগুলো টেক্সটাইলে ৩.৫% শুল্ক দিয়ে থাকে। 

৩।    জিএসপি প্লাস- জিএসপিপ্রাপ্ত দেশগুলো জিএসপি প্লাস সুবিধাটি পেতে পারে। কিন্তু এর জন্যে কিছু শর্ত পূর্ণ করতে হয়। নিম্ন আয়ের জিএসপি সুবিধাপ্রাপ্ত দেশগুলো এই স্পেসিফিক শর্তগুলো পূর্ণ করার মাধ্যমে ৬৬% পন্যে শুন্য শুল্কে ইউরোপে রপ্তানির  সুবিধা পায়। এই ৬৬% পন্যের মধ্যে টেক্সটাইল এবং গারমেন্টসও অন্তর্ভুক্ত। জিএসপি প্লাস সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের তালিকা নীচের টেবিলে  দেখতে পাচ্ছি। 

ফলে আমরা দেখতে পেলাম, তিন ধরনের শুল্ক সুবিধার মধ্যে বাংলাদেশ এখন সম্পূর্ণভাবে শুন্য সুবিধায় পন্য রপ্তানি করছে। জিএসপি নতুন (পুরাতন) নীতিমালা অনুসারে, ২০২৬ এ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তরিত হওয়ার পর ৩ বছর অতিক্রম করে ২০২৯ এ যখন বাংলাদেশের ইবিএ সুবিধা প্রত্যাহার হবে, তখন শুন্য শুল্ক পেতে হলে বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাসের শর্তগুলো অর্জন করতে হবে। নইলে বাংলাদেশের উপরে শুল্ক আরোপ হবে।

এই শর্তগুলো হচ্ছে-

২০২৯ থেকে জিএসপি প্লাস পেতে হলে নতুন শর্ত

কোন একটি ক্যাটাগরিতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের জিএসপি সুবিধাপ্রাপ্ত মোট আমদানির ৪৭ শতাংশ যদি শুধুমাত্র একটি দেশ থেকে আমদানি করা হয়, তবে উক্ত দেশ জিএসপি প্লাস সুবিধা পাবেনা। টেক্সটাইলের জন্যে এই হারটি ৩৭% করা হয়েছে। বর্তমানে ইউরোপের জিএসপি সুবিধাপ্রাপ্ত আমদানির ৬১ শতাংসের বেশী বাংলাদেশ থেকে যায়। বিশেষত নিট ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি …  শতাংশ।  ফলে ২০১৯ থেকে ইবিএ সুবিধা হারালে  ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে বাংলাদেশের নিট পোশাককে শুল্ক দিয়ে ঢুকতে হবে। অথবা নিট খাতে মোট রপ্তানি, জিএসপি প্রাপ্ত পরিমানের  ৩৭% নীচে রাখতে হবে, যার ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদেরকে নিজেদের মধ্যে একটি কোটা সিস্টেম তৈরি করতে হবে।

এছাড়াও জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে হলে কোন একটি ক্যাটাগরিতে ৪০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করতে হবে। বাংলাদশের রপ্তানি করা নিট পোশাকে ৪০ শতাংশের উর্ধ্বে মুল্য সংযোজন থাকলেও বেশীর ভাগ ওভেন পোশাকেই ৪০% মূল্য সংযোজন হয় না, ফলে ওভেন ক্যাটাগরি জিএসপি সুবিধা পাবেনা ।

এই দুইটি শুল্কগত শর্তের কারনে ২০২৯ সাল থেকে নিট ও ওভেন উভয় খাতের জিএসপি প্লাস অর্জনের মাধ্যমে বিনা শুল্কে পণ্য রপ্তানি করা কঠিন হয়ে উঠবে। কিন্তু এটাকেও আমরা আমলে নিচ্ছিনা। আমরা আগেই বলেছি যে- ধরে নিচ্ছি, ২০২৯ অনেক দূরে। এই সময়ের মধ্যে অনেক কিছু ঘটতে পারে। এখন যেভাবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বিকৃতি করে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, ঠিক তেমনি পোশাকশিল্প মালিকদের লবিং-এর কারনে বিবিএস কোন এক কি দুই বছর পরিসংখ্যান বিকৃতি করে, আয় কম দেখিয়ে এলডিসি থেকে বেরও হয়ে যেতে পারে। ফলে ২০২৯ এ জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে কি করতে হবে- সেই আলোচনার গভীরে এই মুহূর্তে যাচ্ছি না। আমি বরং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নতুন আইনে অশুল্ক এনফোরস্মেন্ট ম্যাকানিজমকে ঝুকি হিসেবে  চিহ্নিত করতে চাই।

২০২৪ থেকে প্রকৃত ঝুঁকি- পুরাতন আইন থেকে  নতুন আইনে কি পরিবর্তিত হলো

ইতোপূর্বে জিএসপি ও ইবিএ সুবিধা পেতে হলে মানবাধিকার ও শ্রমিক অধিকার সম্পর্কিত ১৫ টি আন্তর্জাতিক চুক্তি সাক্ষর করতে হতো। নতুন জিএসপি আইনে এই চুক্তির পরিমাণ বাড়িয়ে ৩২ করা হয়েছে। সেইটিও কোন সমস্যা নয়। কারন জিএসপি বা ইবিএস সুবিধা পেতে যে ৩২ টি কনভেনশনে সাক্ষরের দরকার পরে, তার মধ্যে ৩১ টিতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই সাক্ষর করেছে। অন্যটিতেও করবে। চুক্তি সাক্ষর কোন সমস্যা নয়। কিন্তু নতুন আইনে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এমন একটি প্রভিশান রেখেছে যাতে লেখা হয়েছে- যে দেশগুলো সাক্ষরিত চুক্তিগুলোর প্রকৃত বাস্তবায়ন করবেনা এবং নিয়মিতভাবে সুশাসন ও পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটিয়ে যাবে, সেই সকল দেশের জিএসপি (ও ইবেএ সুবিধা) একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে তুলে নেওয়া হবে।

এমন নয় যে এই আইনগুলো লঙ্ঘনের কারনে জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহারের বিষয়টি আগে ছিলনা। ২০২০ এর ১২ আগস্ট ইয়োরোপিয়ান ইউনিয়ন ক্রমাগত মানবাধিকার লংঘনের কারনে কম্বোডিয়ার ইবিএ সুবিধা প্রত্যাহার করেছে। 

বাংলাদেশের জন্যে ফ্যাট টেইল রিস্কটি হচ্ছে- ২০২৪ এর আইনি কাঠামোতে ইইউ মানবাধিকার, শ্রমিক অধিকার ও শ্রম অধিকার বিষয়ে আরো কঠোর হওয়ার নিয়ম করেছে।

ইইউ জানে বাংলাদেশসহ বিবিধ দেশ শ্রমিক অধিকার, পরিবেশ অধিকার-সহ যত ধরনের কনভেনশন রয়েছে সবগুলোতে সাক্ষর করে এসেছে। কিন্তু এই দেশগুলোতে কনভেনশনে  চুক্তি সাক্ষরের কোন বাস্তব প্রতিফলন দেখাতে হয় না। কনভেনশনে যাই লেখা থাকুক, দেশের ভেতরে  শিল্প  মালিকেরা যেভাবে চায় সেভাবেই নিয়ম নীতি চালানো হয়। ফলে নতুন আইনে মনিটরিং ম্যাকানিজম শক্তিশালী করা হয়েছে ও  এনফোরসমেন্টের বিষয়টি কঠোর করা হয়েছে। এবং কোন দেশ যদি নিয়মিত আইন ভঙ্গ করে, তবে দ্রুত জিএসপি প্রত্যাহারের ম্যাকানিজম তৈরি করা হয়েছে। 

legislative proposal, Chapter V., Article 19.1(a)).

বাংলাদেশকে নিয়ে ইউর প্রধান কন্সারন মূলত শ্রমিক অধিকার নিয়েই। বাংলাদেশের শ্রম আইন, ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিয়েই। কিন্তু, বাংলাদেশের জন্যে ফ্যাট টেইল রিস্ক হচ্ছে জিএসপি পেতে বিবিধ চুক্তিতে বাংলাদেশ যে সাক্ষর করেছে, সেই বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের উপরে মনিটরিং বৃদ্ধি পাবে। এর চুক্তিগুলোর মধ্যে আছে  International Covenant on Civil and Political Rights (1976), Freedom of Association and Protection of the Right to Organise Convention, 1948 (No. 87) , Freedom of Association and Protection of the Right to Organise Convention, 1948 (No. 87) , Freedom of Association and Protection of the Right to Organise Convention, 1948 (No. 87)। 

আশঙ্কার কারন রয়েছে, ২০২৪ থেকে ফলে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির যে পতন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ- এই বিষয়গুলো বাংলাদেশের জিএসপির আলোচনায় যুক্ত হবে। এই বিষয়গুলোতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দাবীগুলো মেনে না নিলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে ইইউ কঠোর অবস্থানে যাবে, তার বেশ কিছু চিহ্ন দেখতে পাওয়া গিয়েছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশে ইউরোপিয়ান এম্ব্যাসেডার চারলস হুইটলি, একটি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেছেন, জিএসপি প্লাস সুবিধাটি পাওয়া বাংলাদেশের জন্যে পিকনিক হবেনা।

চার্লস হুইটনি উক্ত সংবাদ সম্মেলন আরো বলেছেন বাংলাদেশের জিএসপি প্লাস পাওয়া মানবাধিকার, পরিবেশ ও শ্রমিক অধিকার-সহ অনেক বিষয়ের উপরে নির্ভর করবে। ফলে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নতুন জিএসপি আইনের নিয়মিত মনিটরিং-এর একটি অংশ হয়ে উঠবে, যা সামগ্রিক শিল্পের জন্যে একটি ঝুঁকি। 

কিন্তু জিএসপি বা জিএসপি প্লাস সুবিধা কেন বাংলাদেশের জন্যে জরুরী

২০১১ থেকে ২০১৮ তে ইবিএ সুবিধার উপরে ভিত্তি করে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে রপ্তানি ৯ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

সিপিডির রিসার্চ ডিরেক্টর খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের মোট ইবিএ সুবিধা হারালে ইউতে বাংলাদেশের রপ্তানি বছরে ৫.৭% হার হ্রাস পেতে পারে। কারন তার ফলে শুন্য শতাংশের স্থলে বাংলাদেশকে ৮.৭% হারে শুল্ক দিতে পারে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের জিএসপি হারালে, দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের রপ্তানি মুখী পোশাক  শিল্পে বেশ ভয়ংকর প্রতিক্রিয়া হবে। কারন প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর মধ্যে ইউরোপ বাংলাদেশের জিএসপির উপরে নির্ভরতা অনেক বেশী। ইয়োরোপিয়ান ইউনিয়নের নিজস্ব গবেষণায় ২০১৮ সালে ইউতে রপ্তানি করা বিবিধ দেশের মধ্যে বিশেষত বাংলাদেশের  জিএসপি নির্ভরতার বিষয়টি উঠে এসছে।

https://trade.ec.europa.eu/doclib/docs/2018/january/tradoc_156536.pdf

পূর্বের টেবিলে দেখতে পাচ্ছি, যেখানে ইউরোপে ভারতের শুল্কে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত রপ্তানির পরিমাণ ৩৭.৬%, ভিয়েতনামের ২৪%, সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি করা ৯৬.৪% ইবিএ সুবিধা প্রাপ্ত হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের মত উচ্চ নির্ভরতা রয়েছে পাকিস্তান(৮৭.৩%) ও কম্বোডিয়ার(৯৪.৯%)। কিন্তু খেয়াল করার বিষয় হচ্ছে, পাকিস্তান জিএসপি প্লাস সুবিধা অর্জন করে এই নির্ভরতা টিকিয়ে রেখেছে। ফলে তাদের বাংলাদেশের মতো নতুন করে জিএসপি প্লাস অর্জন করার ঝুঁকি নেই। অন্যদিকে কম্বোডিয়া ইতোমধ্যেই মানবাধিকার ঘটিত কারনে জিএসপির সুবিধা হারিয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশের জিএসপির আকার সব চেয়ে বেশী।

পরবর্তী  টেবিলে ইবিএ সুবিধার অধীনে  ইউরোপের  সার্বিক জিএসপি সুবিধার চিত্রটি দেখা যাচ্ছে।  

এই  চিত্রে দেখতে পাচ্ছি, ইবিএ আইনের ধারায় ২০১৮ সালে  শুন্য শুল্কের মাধ্যমে প্রাপ্ত রপ্তানির ৬১.৮% বাংলাদেশ থেকে গিয়েছে- যেখানে কমবোডিয়ার শেয়ার ১৮.৪%, মিয়ানমারের ৭.১%। যেটা আরো ইন্টেরেস্টিং তা হলো- ২০১৮ সালে সার্বিক জিএসপি সুবিধার হিসেবে ১৭.৪০ বিলিয়ন ইউরো ব্যবসা করা বাংলাদেশ, ৪৩.৬০ ইউরো ব্যবসা করা ভারতের চেয়ে বেশী পরিমাণ জিএসপি সুবিধা অর্জন করেছে। এর অর্থ ইউরোপের বাজারে ব্যবসার যে সম্প্রসারণ হয়েছে, তা মূলত জিএসপি নির্ভর । মূলত এই জিএসপি সুবিধাটি উচ্চ মুল্যের মুদ্রামানের বিষয়টির ঋণাত্মক প্রভাব কাটাতে বড় ভুমিকা রেখেছে। 

বিবিধ আন্তর্জাতিক বায়িং হাউজের শীর্ষ একজিকিউটিভরা আমাকে জানিয়েছেন, বর্তমানে ইউরোপিয়ান বাজারে  বাংলাদেশের  কম্পিটিটিভ  এডভান্টেজ মূলত  জিএসপি সুবিধা দিয়ে তৈরি হয়। কোন কারনে জিএসপি সুবিধা(ইবিএ) হারালে বাংলাদেশের আরএমজি বড় হুমকির মুখে পরবে। যদিও তারা এই মতও দিয়েছেন যে, রাতারাতি  বায়ারদের জন্যে বাংলাদেশের মত ক্যাপাসিটি রাখা সোর্স নতুন করে তৈরি করা মুশকিল। কোন একটি দেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে টিকে গেলে তাকে এতো সহজে প্রতিস্থাপন করা যায় না। ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ যে পরিমাণ রপ্তানি করে, তা অন্য কোন দেশ দিয়ে হুট করে প্রতিস্থাপন করা সহজ হবে না।

অনেকেই মত দিয়েছেন, জিএসপি হারালে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে নিট পোশাক ভিত্তিক টি-শার্টে। বর্তমানে এই ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের যে মনোপলি আছে (মোট টি-শার্ট আমদানির ৫৯%), তা ধরে রাখা যাবেনা।

 

পূর্বের চিত্রে দেখতে পাচ্ছি, ২০১১ সালে ইউরোপিয়ান বাজারে ৪৪% কটন টি-শার্ট বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে, যা ২০২০ এ ৫৯ শতাংশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের আরএমজির কর্মকর্তাদের ভয়, জিএসপি হারালে  নিট রপ্তানি ২০২৪ এর আইনে উল্লেখিত  একটি ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ ৩৭% সীমানাতে নেমে আসলে, নিটের পুরো ভ্যালু চেইনেই বিপর্যয় নামবে। কারন বাংলাদশের টেক্সটাইল মূলত নিটের উপরে ভিত্তি করে দাঁড়িয়েছে। ।

অনেকে মতামত দিয়েছে, ভিয়েতনাম এই সুবিধাটি নেবে। কারন ভিয়েতনামের সাথে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বানিজ্য চুক্তি রয়েছে এবং ভিয়েতনাম আগ্রাসী ভাবে নিট সক্ষমতা প্রসার করতে নতুন  বিনিয়োগ করছে। কিন্তু সার্বিক ভাবে বিবিধ রাষ্ট্রের সুবিধা অসুবিধা বিবেচনা করে একটি তুলনামূলক গবেষণা ব্যতীত কোন রাষ্ট্র কি সুবিধা পাবে তা বলা সম্ভব নয়। কিন্তু জিএসপি সুবিধা হারালে নিশ্চিতভাবে আমদানিকারকদের জন্যে বাংলাদেশের মুল্য বৃদ্ধি পাবে, ফলে তারা রপ্তানিকারকদের মুল্য কমাতে বলবে। এবং বড় বড় ফ্যাক্টরিগুলো তখন তাদের পূর্বের ধারা বজায় রেখে মুল্য ছাড় দিতে থাকবে এবং অত্যন্ত কম মুল্যে অর্ডার সংগ্রহ করবে। এর ফলে তাদের প্রফিটিবিলিটি কমবে এবং রাষ্ট্রের ভ্যালু এডিশান কমবে। কাজেই ২০২৪ সাল থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে জিএসপি একটি ফ্যাট টেইল ইভেন্ট হিসেবে দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.