কভিডের সব চেয়ে ভয়ঙ্কর প্রভাবটি বের করে নিয়ে আসে গবেষণা সংস্থা সানেম। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ারক অন ইকনমিক মডেলিং ২০১৬ সালের খানা জরিপের ৪৬,০০০ পরিবারের উপরে একটি জরীপ পরিচলনা করে। এই জরীপ অনুসারে অর্থবছর নভেম্বার-ডিসেম্বার ২০২০ এ দারিদ্রের হার ৪০.৮৯% এ উঠে আসে। এর পূর্বে, ২০০৫ সালে দারিদ্রের হার ছিল, ৪২ %।
অর্থাৎ , কভিডে সৃষ্ট মাত্র ৬৮ দিন লক ডাউনের ছয় মাস পরে যে সময়ে অল্প কিছু সেক্টর বাদে প্রায় সব গুলো সেক্টরের ব্যবসা সম্পূর্ণ উন্মুক্ত এই সময়ে নভেম্বার ডিসেম্বারে জরিপে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের দারিদ্র বিমোচনের ১৫ বছরে অর্জন হারিয়ে গ্যাছে ।
প্রশ্ন হচ্ছে, যে দেশ কভিডের প্রভাব মোকাবেলায় বিশ্বের সফল দেশ গুলোর মধ্যে একটি দৃষ্টান্ত সেই দেশে কেন, মাত্র ৩ মাসে ৪ কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়বে ?
তুলনার জন্যে আমরা ভারতের চিত্রটি দেখতে পারি।
পিউ রিপোর্টের গবেষণা অনুসারে , কভিডের প্রভাবে ২০২০ এ ভারতের দারিদ্রের হার জানুয়ারি ২০২০ এর প্রাক্কলিত ৪.৩% থেকে ৯.৭% এ নেমে আসে এবং ৭.৫ কোটি মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে চলে যায়।
এই সময়ে ভারতের মধ্যবিত্তের পরিমাণ ৩.২ কোটি কমে আসে।
কভিডের কারণে, ভারতে যদি বাংলাদেশের সমপরিমাণ প্রভাব পরতো তবে ভারতে ৭.৫ কোটির স্থানে ৪০ কোটি নাগরিক দরিদ্র হতো ।
অথচ বাংলাদেশে মাত্র ৬৮ দিন লক ডাউনের প্রভাবে আপার পভার্টি রেট ২৪.৫ শতাংশ থেকে ৪২ শতাংশে এসেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কি এমন ভঙ্গুরতা যার ফলে মাত্র ছয় মাসে দারিদ্রের হার ১৫ বছরের অগ্রগতি হারিয়ে ৪ কোটির স্থলে ৮ কোটিতে পৌঁছেছে।
কেন মাত্র ৬৮ দিনের লক ডাউনের প্রভাবে ৪ কোটি মানুষ মানুষে দরিদ্র সীমার নীচে গিয়ে ২০০৫ সালের পর্যায়ে পৌঁছেছে।
যেখানে কভিডকালের যে সময়ে বাৎসরিক দেশজ উৎপাদনে ৫.৪% প্রবৃদ্ধি হয়েছে , সেই সময়ে ভারতের মোট বাৎসরিক দেশজ উৎপাদন -১০.২৯ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে – সেই সময়ে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের পরিমাণ ভারতের তুলনায় এতো বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ কি ।
প্রশ্ন হচ্ছে কেন এই সময়ে, বাংলাদেশের দারিদ্র্য ১৮% কমে আসবে এবং ৪ কোটি মানুষ নতুন করে মানুষ দরিদ্র হবে ?
বাংলাদেশের দরিদ্রদের এই ভঙ্গুরতার কারণ কি ?
প্রশ্ন হচ্ছে, এই বিষয়ে অর্থনীতিবিদদের কোন ধরনের ক্ষোভ নেই কেন ?
এই ডাটা গুলো এড়িয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের যে বিশাল ফাঁদ পাতা হয়েছে তার ব্যাখ্যা কি ?
বাস্তবতা হচ্ছে, সানেমের এই শুমারিটি প্রকাশিত না হলে, বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন শীৎকারের মাঝখানে জনগণের তীব্র দারিদ্রের বাস্তবতাটি কখনই জানা যেত না।
স্বাভাবিক ভাবেই, বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রচলিত বয়ানের সাথে অমিল হওয়ায় সানেমের এই গবেষণাটি মূলধারায় প্রকাশিত হলেও, তা অসংখ্য সেন্সশনাল ঘটনা প্রবাহের আড়ালে হারিয়ে গ্যাছে। অথবা ইচ্ছাকৃত ভাবে আড়াল করা হচ্ছে।
আমার অপ্রকাশিত বই থেকে একটি অংশ তুলে ধরলাম, প্রথম আলোর উন্নয়ন শীৎকারের প্রেক্ষাপটে