হেফাজত কে আমি সাম্প্রদায়িক শক্তি বলে মনে করি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকেও আমার প্রচণ্ড সাম্প্রদায়িক শক্তি মনে হয়।
মারক্সিস্ট বামপন্থিরা শ্রেণী হীন সমাজের কথা বললেও, ধর্ম প্রশ্নে প্রচণ্ড সাম্প্রদায়িক।
বিএনপির মধ্যেও আমি বিভিন্ন রকম সাম্প্রদায়িকতা দেখি।
কিন্তু সাম্প্রদায়িকতাকে ইটসেলফ আমি কোন সমস্যা হিসেবে দেখিনা। কারণ, সাম্প্রদায়িকতা মানবের খুব বেসিক টেন্ডেন্সি। সাম্প্রদায়িকতা সমস্যা হিসেবে দেখানোতে অনেক গুলো ভুল রাজনৈতিক প্রকল্প তৈরি হয়।
প্রতিটা রাজনীতি, প্রতিটি পরিচয়, প্রতিটি আদর্শ নিজ এবং অপর তৈরি করে। নিজের সম্প্রদায়ের বা গ্রুপের বা নিজের সমাজের প্রতি টান সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণ ও গ্রুপ থিঙ্কিনের ভিত্তি। ফলে সাম্প্রদায়িকতা, বা এমন কি সিলেক্টিভ মানবতা এই গুলো খুবই বেসিক হিউম্যান টেন্ডেন্সি। আপনি যত বড় মানবতা তালেবরই হন না কেন, লক্ষ লক্ষ বছরের ইভিউলুশনে তৈরি এই ইন্সটিঙ্কট গুলোর বাহিরে আপনি যেতে পারবেন না।
এই সাম্প্রদায়িকতা ইটসেলফ কোন সমস্যা না। সমস্য সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষে। সমস্যা আপনি যখন সম্প্রদায় হিসেবে, আপনার চিহ্নিত করা “অপর” সম্প্রদায়ের নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার অধিকার হরণ করতে চাইবেন, সেইটা অপরাধ হয়।
ফলে, প্রশ্ন নয় যে, হেফাজত সাম্প্রদায়িক শক্তি কিনা। হেফাজত অবশ্যই সাম্প্রদায়িক শক্তি যেভাবে মারক্সিস্ট বামপন্থি এবং আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বা হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ সাম্প্রদায়িক শক্তি বরং প্রশ্ন হচ্ছে হেফাজত বা আওয়ামী লীগের রাজনীতি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ তৈরি ও চর্চা করে কিনা ।
এই প্রশ্নে, খুব পরিষ্কার ভাবে আমরা দেখতে আরি, হেফাজত এবং আওয়ামী লীগ এই দুইটি পক্ষই শুধু মাত্র সাম্প্রদায়িক নয়, তারা বিভিন্ন ভাবে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ চর্চা রয়েছে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, হেফাজত যখন একটি মিছিলে ফটো সাংবাদিককে কলেমা পরতে বলে,তাতে সুস্পষ্ট সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ দেখা যায়।
একই সাথে আওয়ামী লীগ যখন, ছাত্র লিগের ক্যাডার বাহিনী থেকে রিক্রুট পুলিশ লিগকে লেলিয়ে দিয়ে পাখির মত গুলি করে মাদ্রাসার ছাত্রদের হত্যা করে সেখানেও সুস্পষ্ট সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ দেখা যায়।
হেফাজতের সাম্প্রদায়িকতা থেকে সেকুলার আওয়ামী লিগের সাম্প্রদায়িকতা আমি অনেক ডেঞ্জারাস মনে করি।
কেন ?
কারণ একটা সমাজের একটা শক্তি থেকে আসা সাম্পদায়িক বিদ্বেষ যাকে কন্টেন করার অসংখ্য ম্যাকানিজম এই রাষ্ট্রের ও সমাজের আছে। অন্য দিকে, আওয়ামি লিগের সাম্প্রদায়িকতা যেইটা ঢাকা ইউনিভারসিটির বিক্ষোভে লাঠিচার্জ আর টিয়ার গ্যাসে সন্তুষ্ট থাকে কিন্তু মাদ্রাসা থেকে উদ্ভূত ইসলামিক দলের বিক্ষোভ পাখির মত গুলি করে মানব হত্যা করে- সেইটা রাষ্ট্রের একচ্ছত্র ভায়োলেন্সের আইনি, আর্থিক, সশস্ত্রতার এডভানটেজ নিয়ে একটি অগণতান্ত্রিক অনির্বাচিত শক্তির ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার জন্যে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ থেকে উদ্ভূত । এই সাম্প্রদায়িকতা হেফাজতের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ থেকে অনেক অনেক ভয়ঙ্কর।
হেফাজতের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ থেকে আওয়ামী লিগের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ অনেক বেশী ভয়ঙ্কর মনে করার অপর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, হেফাজত টাইপের যে কোন দলের তালেবানি রাষ্ট্রবাসনার বিরুদ্ধে এই সমাজের ব্যাপক প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু আওয়ামী লিগের সাম্প্রদায়িকতাকে কন্টেন করার কোন শক্তি এই সমাজের নেই।
বাংলাদেশের সমাজ একটি নিড বেজড সমজ। এই সমাজের মেজরিটিকে এখনো রুটি রুজির সংগ্রামের প্রশ্ন ডিল করে, ধর্ম বা আইডেন্টি ডিল করতে হয়। এবং এই দুইটার স্বার্থ যদি সাঙ্ঘরশিক হয়- রুটি রুজির বাস্তবতা প্রায়োরিটি পায়। ঠিক এই কারণেই কোন ধর্মিয় দল বাংলাদেশের কোন ইলেকশানে ১০% এর উপরে ভোট পায় নাই। কজ মানুষ জনে, ধর্মীয় দলের হতে তার রুটি রুজির সংগ্রাম বিপন্ন হলে তার অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে।
অন্য দিকে সেকুলার আওয়ামী লিগের হাজার বছর বাঙালি এবং চেতনা রাষ্ট্র বাসনার বিরুদ্ধে সামান্যতম প্রতিরোধ এই সমাজে গড়তে পারে নাই। তারা ১৬ কোটি জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করে আছে-৮ বছর। এতো বছরের যে সামাজিক শক্তি ছিল- তাতে সেকুলার, হেফাজত মানেনাই- যে তার বিরোধিতা করেছে তাকে নিশ্চিহ্ন করেছে। এবং এই নিশ্চিহ্ন করনের পেছনে তার জাস্টিফিকেশান ছিল- হেফাজতের মত শক্তিকে ঠেকানো- যে শক্তি কে সমাজ এতো বছর ধরে কন্টেন করেছে।
তাই। হেফাজতের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ থেকে আওয়ামী লিগের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ অনেক ডেঞ্জারাস এবং আমাদের রাষ্ট্রের একটি একজিস্টেন্সিয়াল থ্রেট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
অন্য দিকে। হেফাজত বা যে কোন ধর্মীয় দলের তালেবানি রাষ্ট্রবাসনা একটা উইশ ফুল থিঙ্কিং। এই যে দেখেন, দেশের জাতীয় মসজিদের মুসল্লিদের বিক্ষোভে, ১০০০ গুলি ছরা হয়েছে। সেইটা কিন্তু রয়টারে নিউজ হয় নাই। কিন্তু দেশের কোন নিউজপেপার জানার আগে রয়টার জেনেছে, একটি মন্দিরে হামলা হয়েছে। সেইটা নিয়ে প্রতিক্রিয়া হয়েছে। হেফাজতের বিরুদ্ধে কলেমা পরানোর অভিযোগ এসেছে আমরা সবাই এই প্রশ্ন টাকে ডিল করেছি। এই স্ট্যাটাসে আমি , খুব স্ট্রং এভিডেন্স না থাকা সত্ত্বেও সেইটাকে নিয়ে আলোচনা করছি ।
আমি কোন ভ্যলু জাজমেন্টে জাচ্ছিনা। আমি জাস্ট উল্লেখ করতেছি যে, হেফাজত বা যে কোন ইস্লামিক দলের তালেবানি রাষ্ট্র বাসনাকে কন্টেন করার জন্যে শুধু সমাজ নয়, আন্তর্জাতিক, রাষ্ট্রীয়ও, আইনি অসংখ্য মেকানিজম আছে। এমনকি পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের শ্রম ও ঘামের উপরে এই রাষ্ট্রের নাগরিকদের বড় অংশের আর্থিক অস্তিত্ব নির্ভরশীল। এই বাস্তবতা গুলো সমাজ জানে, ফলে সমাজ তালেবানি রাষ্ট্র প্রকল্প নিয়ে যারাই এসেছে, তাদেরকে এত বছর ধরে সফল ভাবে ডিল করে গ্যাছে। কোন মেজর সমস্যা হয় নাই।
কিন্তু আওয়মি লীগ বিগত দশ বছরে ইসলামি জঙ্গি নিধনের নামে, অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছে। আবরার যদি নিহিত না হইতো তাকে শিবির হিসেবে সারা রাত পেটায়, পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হইতো, পরের দিন নিউজ ও হইতো না। ১৭ জন নাগরিককে গত এক সপ্তাহে হত্যা করা হয়েছে।
ফলে আওয়ামী সেকুলারের এই সাম্প্রদায়িকতা ডিল করার কোন মেকানিজম বিশ্বের কোন সংস্থার নাই। বরং আওয়ামী লীগ বিশ্ব সংস্থা গুলোর কাছ থেকে, অবৈধ শাসনের লেজেটিমিসি আহরণ করে ইসলামি জঙ্গি মোকাবেলার নাম দিয়ে। রিয়ালিটি হচ্ছে, আওয়ামী লীগ যত খুন করবে, তার অবৈধ ক্ষমতা দখলের বৈধতা তত বৃদ্ধি পাবে।
আওয়ামী লীগের হাতে জঙ্গী খুনের এই সার্কুলার লজিক আমার নিজের অস্তিত্বের জন্য বিপদজনক।
অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখা একটি শক্তি যে, সাম্প্রদায়িক কারণে যে কাউকে খুন করতে পারে, এইটা আমার জন্যে হেফাজতের তাল্বেবানি রাষ্ট্রের বাসনা থেকে অনেক বেশী রিস্কি। কজ আমি জানি, আমাকেও খুন করে এক দিন শিবির হিসেবে, রাজাকার দের একজন হিসেবে চালায় দেওয়া যাবে। আমার সন্তানকে, আমার বন্ধুকে একই ভাবে হত্যা করা যাবে।
এইটার কোন প্রটেকশান মেকানিজম এই সমাজের নাই।
তাই আমার কাছে, আওয়ামী লিগের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ একটা একজিস্টেনিয়াল থ্রেট। হেফাজত আমার কাছে, বড় সমস্যা না। কারণ, আমি সমাজের উপরে পূর্ণ আস্থা রাখি- যে এই সমাজ জানে কিভাবে তালেবানি রাষ্ট্রবাসনাকে, হেফাজত টাইপের এন্টিটিদের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষকে সামাজিক ভাবে মোকাবেলা করতে হবে।
কিন্তু, এই আওয়ামী লীগের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ কে মোকাবেলার ন্যুনতম শক্তি এই সমাজের নাই।
এই সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ এই রাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্যে বিপদ জনক।