হেজেমনিক পাওয়ারের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে, হেজেমনি আপনাকে ডিলিজটিমাইজ করার ক্ষমতা রাখে। এবং নিজের অপকর্মকে নরমালাইজ করতে পারে।
বাংলাদেশে সরকার পক্ষের যে হেজেমনিক পাওয়ার, সে তার বিপক্ষকে ডিলিটিমাইজ করতে তিনটি শক্তি ব্যবহার করে
১। এ জামাত শিবিরের লোক। অথবা এর পেছনে জামাত শিবির আছে।
২। এ সিআইএ ব্যাকড, অথবা আমেরিকা ব্যাকড।
৩। এ ডিজিএফআই এর লোক।
এই তিনটা ফ্যাক্টরই এক সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এদের হাতে বাংলাদেশের অনেক অপকর্ম হয়েছে। কিন্তু, বিগত ১০ বছরে এদের সক্ষমতা ম্লান হয়েছে বা চরিত্র চেঞ্জ হয়েছে।
লেটস টেক জামাত শিবির। বর্তমানে জামাত দেশের ভেতরে ও বাইরে ভগ্নপ্রায় একটি দল। তাদের ক্ষমতা সব সময়েই ওভার স্টেটেড ছিল, বর্তমানে তাদের অবস্থা আরো খারাপ। তাদের আর্থিক সক্ষমতা সাংগঠনিক সক্ষমতা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। দেশের বাহিরেও তাদের সক্ষমতা নিয়ে গল্প বলা হয়, সেই গুলো অনেক টুকুই কল্প কাহানী। ফলে আজকে জামাতের ফিনান্সিয়াল ব্যাকিং নিয়ে, অথবা জামাতের সাংগঠনিক ব্যাকিং নিয়ে এইটা সেইটা করা হবে- সেই বয়ান কল্পিত শত্রুকে ধরে রেখে নিজের পক্ষের লোকের ফাইটিং স্পিরিট ধরে রাখার জন্যে এবং অপোনেন্টকে ডিলিজিটিমাইজ করার একটি বহুল চর্চিত টেকনিক। এইটা বাংলাদেশে এখনো কাজ দেয়। যেহেতু কাজ দেই, তাই প্রথম আলো হইতে শুরু করে, আওয়ামী লীগ যে কোন এন্টিটিকে ডিলিটিমাইজ করতে এইটা নিয়মিত ব্যবহার করে।
আসেন আমেরিকা। বর্তমানে আমেরিকার বিদেন এডমিনিস্ট্রেসানের প্রধান স্ট্রাটেজিক গোল হচ্ছে কোয়াড। চায়নাকে কন্টেন করার জন্যে কোয়াডে আমেরিকার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্টনার ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়াকে খুশি করার জন্যে আমেরিকা টার্কি থেকে পাকিস্তানে হেলিকপ্টা বিক্রয়ের চুক্তি বাস্তবায়ন হতে দেয় নাই। আজকে , আমেরিকা বাংলাদেশকে ভারতের রক্ষিতা হিসেবে বন্ধক দিয়ে দিয়েছে। ফলে , ভারতীয় ইন্টেরেস্টকে আমেরিকা কোন মতেই বাংলাদেশে সুপারসিড করবে না। দ্বিতীয়ত, আমেরিকা এখন আগের মত শক্তিও রাখে না। আপনাদের ভুলে যাওয়ার কথা না, শেখ হাসিনা কিন্তু, ইউনুস ইস্যুতে সরাসরি মারকিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর হিলারির সাথে পাঙ্গা নিয়েছিল। কিচ্ছু হয়নাই। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, বাংলাদেশের সামান্যতম স্ট্রাটেজিক গুরুত্ব নাই। নোবাডি গিভস এ শিট এবাউট ইন্ডিয়াস ইলিজিটিমেট মিস্ট্রেস। এবং বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার যা যা দেওয়ার-শেখ হাসিনা তার সব কিছুই দিয়েছে। ফলে, এই খানে আর এমন কিছুই নাই, যেইটার জন্যে আমেরিকার বাংলাদেশের সরকারের কে আছে সেইটা নিইয়ে মাথা ঘামাতে হবে। ফলে, বাংলাদেশে আমেরিকা এমন কিছু করবেনা, যেখানে ভারতের স্বার্থ ভগ্ন হয়।
কিন্তু, তবুও দেখেন, তাসনিম খলিলের সাথে যখন একটার পর একটা যুক্তিতে হেরে গেলো তখন নিঝুম মজুমদার এবং একাত্তর টিভি মিলে, তাসনিম খলিল ও নেত্রা নিউজকে সিআইএ ব্যাকড এন্টিটি হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করলো।
থার্ড এবং লাস্ট ডিজিএফআই এর ব্যাপারটা সব চেয়ে ইন্টেরেস্টিং। আমি অনেক জ্ঞানী ব্যক্তিদের দেখেছি যারা মনে করেন, বর্তমান ডিজিএফআই একটা স্টেট উইদিন দা স্টেট-যেইটা আওয়ামী লিগের কন্ট্রোলের বাহিরের নিজস্ব এজেন্সিতে অপারেট করে। এইটা এক সময়ে সত্য থাকলেও, বিগত ১০ বছরে শেখ হাসিনা সেইটা কমপ্লিটলি অলটার করেছে। ডিজিএফআইকে এখন আমি ডাকি আওয়ামী আর্মি লীগ।শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আর্মির মধ্যে তার সব চেয়ে লয়েল লোক গুলোরে দিয়ে ডিজিএফআই সাজাইছে। এবং শেখ হাসিনার অফিস থেকে সরাসরি ডিজিএফআই কন্ট্রোল করা হয়।সেখানে শাহরিয়ার কবিররা গিয়ে বসে থাকে, আওয়ামী লিগের নেতারা ডিজিএফআইকে দিয়ে গুম খুন হুমকি ধামকি ইত্যাদি মবিলাইজ করায় তাদের পলিটিকাল অপোনেট দূর করে, বিজনেস অপোনেন্টকে সাইজ করে, যারা সরকারি পয়সায় আওয়ামী লিগের মিডনাইট ইলেকশান প্ল্যান করে, সেই ডিজিএফআই- হাসিনার রেজিমের বিরুদ্ধে – সিক্রেটলি কিছু করতেছে- এমন কিছু ভাবতে হইলে অনেক বড় গাড়ল হইতে হয়। যাকগে মানুষের বেসিক কমন সেন্সকে প্রশ্ন করা আমার উদ্দেশ্য না।
আমার উদ্দেশ্য দেখানো যে হেজমনিক পাওয়ারের বৈশিষ্ট্য। হেজেমনিক পাওয়ার একটা পরিবর্তনশীল সমাজে এই মিস্কন্ট্রাক্ট গুলো ধরে রাখে। এই গুলো বিভিন্ন দিকে ছুড়ে দেয় , তার বিপক্ষকে ডিলিজিটিমাইজ করার জন্যে।
আজকে সাম্প্রতিক কালের একটি রাজনৈতিক ইনিশিয়েটিভ নিয়ে প্রথম আলো ঠিক এই কাজটিই করেছে। খুব সাটল ভাবে এই রাজনৈতিক উদ্যোগটির বিষয়ে জামাতের ভূমিকা আছে এবং আমেরিকার ভূমিকা আছে- এই দুইটি যোগসূত্র যোগ করে দিয়েছে। যার ফলে অনেক মানুষের মনে অঙ্কুরেই ধারনা হবে- এই উদ্যোগটি জামাত ব্যাকড বা আমেরিকা ব্যাকড। প্রথম আলোর মত একটি পত্রিকাররেফারেন্সের ভিত্তির উপরে একাত্তর টিভি আরো অনেক কল্পকাহিনী নির্মাণ করবে।
এইটা প্রথম আলো পারে কারণ প্রথম আলোর হেজেমনিক ক্যাপাসিটি আছে। আমি ঠিক জানিনা এই রাজনৈতিক উদ্যোগের সাথে আসলেই আমেরিকা বা জামাতের সংযোগ আছে কিনা। কিন্তু এইটা আমি জানি, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের যে কোন রাজনৈতিক উদ্যোগকে- জামাত এবং আমেরিকান ব্যাকড হিসেবে চিহ্নিত করে ডিলিজিটিমাইজ করে।
এই ডিলিজিটাইমাইজেশানের সেন্ট্রাল যুক্তি হচ্ছে- এই দেশে কারো কোন এজেন্সি থাকতে পারেনা। এজেন্সি সব সময়ে বাহিরের বা কোন অন্ধকার শক্তির।
আমি বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বিরোধী যে কোন রাজনৈতিক ঐক্য প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানাই। বিশেষত এমন কোন রাজনৈতিক শক্তি যদি আজকে তৈরি হয়, যেইটা বর্তমান স্ট্যাটাসকো কে সামান্য ধাক্কা দিতে পারে এমনকি যেই শক্তি বিএনপিকে পাছায় লাথি দিয়ে ঘুম থেকে জাগাবে সেইটাকে আরো স্বাগত জানাই।
আমি ঠিক একই কারণে, সকল দুর্বলতা সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিবিহাল থাকা সত্ত্বেও, ঐক্যফ্রন্টকে স্বাগত জানিয়েছিলাম।
আমি খুব ক্লিয়ার আওয়ামী লীগ আরো মিনিমাম দশ বছর থাকার মত শক্তি রাখে । কিন্তু এই অচলাবস্থাকে ভাঙতে দেশের রাজনৈতিক শক্তি থেকে আসা সৎ উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই।
তাই, আমি আমার জাজমেন্ট হোল্ড করবো, অপেক্ষা করবো দেখতে আসলে তাদের ভ্যালু কি ? তাদের পজিশান কি।এরা যাহাই হোক, আমি নিশ্চিত এরা খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। এই টিমে যাদের দেখলাম তাদের অনেককেই আমি খুব একটা পছন্দও করিনা।
কিন্তু যে কোন কিছুকেই পূর্ণ হয়ে উঠার আগেই, আওয়ামী লিগের সেট করা হেজেমনিক প্রশ্ন গুলো দিয়ে হয় জামাত, নয় ডিজিএফআই, নয় আমেরিকার ব্যাকড এই ট্যাগ লাগায় দিয়ে ডিলিজিটিমাইজ করার এই সক্ষমতা, প্রক্রিয়া এবং পদ্ধতিকে আমি খুব ভয়ের চোখে দেখি।
আমি তাই প্রশ্ন করতে চাই কেন বাংলাদেশের মানুষের কোন নিজস্ব এজেন্সি থাকতে পারেনা? কেন সব কিছুই হয় আমেরিকা নয়, ডিজিএফআই, নয় জামত ব্যাকড হইতে হবে ?
প্রথম আলোদের এই হেজেমনিকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা আমাদের নাই।
কিন্তু আমাদের এই শক্তি আছে, হেজেমনির সোর্সকে ক্রমাগত প্রশ্ন করে যাওয়ার এবং এই চিন্তার অন্তঃসার শুন্যতা স্পষ্ট করার। তাই, এই প্রশ্নটি আমাদের ক্রমাগত করে যেতে হবে। নইলে আজকে এই উদ্যোগটি শুধু নয়, আগামীতে কোন উদ্যোগ ই দাঁড়াবেনা।
এইটা একটা দীর্ঘ যাত্রা। আরো অনেক বছর এই জাতির কপালে দুক্ষ আছে । এই দেশের সব কড়ি বর্গা পার্ট পার্ট করে ভেঙ্গে সেইটা দিয়ে বন ফায়ার করে, বনভোজন করে আর কিছু যখন লুট করার মত থাকবেনা, সেই দিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়বে। কিন্তু, এর মধ্যে অন্তত আমাদের হেজেমনিক চিন্তার এই জঞ্জাল গুলো, স্নায়ু যুদ্ধের সময়কালের এবং প্রি ২০১৪ এর রেলিক গুলো যেন পরিষ্কার হয় সেইটা আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।