কিশোর এবং মুশতাকের উপরে যে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়েছে, তাকে প্রথম আলো কিভাবে হিউম্যানাইজ করেছে সেইটাকে সাংবাদিকতার ইতিহাসে একটা আর্ট পিস হিসেবে বাধিয়ে রাখা উচিত।
কিশোরকে যখন বেধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন,
“ঠাট্টাচ্ছলে কার্টুনিস্ট কিশোর তখন জানতে চান, ‘আপনারা কারা? আমাকে কি কোনো শুটিংয়ের জন্য নেওয়া হচ্ছে?’”‘
কিশোরকে যখন নির্যাতন করা হচ্ছিল তখন কিশোরকে তুই বলে সংবোধন করা হচ্ছিল।
“কিশোর একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বলেন, টাকাপয়সা দিলে তিনি তাঁদের কার্টুন বোঝানোর কোর্স নিতে পারেন।”
কিশোরের সাথে যখন মুশতাক আহমেদের দেখা হয় তখন।
মুশতাক আহমেদ তাঁকে বলেন, ‘মুখ গোমড়া করে রেখেছিস কেন? আমরা কি কোনো অন্যায় করেছি? বুক চিতিয়ে দাঁড়া। হাসি হাসি মুখে।’
বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছিল বলে মুশতাক জানিয়েছিলেন কিশোরকে।
—
পুরো স্টোরি টাকে প্রথম আলো কিভাবে হিউমানাইজ করেছে, তা আমরা একটু গবেষণা করে দেখতে পারি।
দুই ধরনের হিউম্যানাইজেশান প্রথম আলোর এই আরটিকেলে আমরা দেখেছি।
১। সব চেয়ে তীব্র নির্যাতনের বিষয়টার গ্রাফিকাল ডিটেইলস এভয়েড করা। বিষয়টা মোলায়েম করে উল্লেখ করা যেন জারনালিস্টিক ইন্টেগ্রিটি থাকে। কেউ বলতে না পারে, বিষয়টা তো লিখেই নাই। আবার একই সাথে অত্যচার এবং নির্যাতনের ভয়াবহতাটা ফুটে না উঠে।
ডেইলি স্টারের আরটিকেলে আমরা দেখেছি,
> মুশতাক ভাইয়ের যৌনাঙ্গে ইলেক্ট্রিক শক দেয়া হয়েছিল
> মুশতাক ভাইকে প্রচন্ড মারধোর করা হয়েছিল
> মুশতাক ভাই অত্যাচারের সময় নিজের প্যান্টে মলত্যাগ পর্যন্ত করেছিলেন
কিন্তু এই পুরো ভয়াবহ অত্যাচারের উল্লেখটাকে প্রথম আলো প্যাকেজ করেছে।
আমরা কি কোনো অন্যায় করেছি? বুক চিতিয়ে দাঁড়া। হাসি হাসি মুখে।’
বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছিল বলে মুশতাক জানিয়েছিলেন কিশোরকে।
বৈদ্যুতিক শক এবং হাসি গুলো এতো কাছাকাছিযে প্রথম আলো আর্টিকেলে পড়লে মনে হবে, বুক চিতিয়ে দাঁড়ায় মুশতাক যখন হাসতে পেরেছে তাই, বৈদ্যুতিক শক দেওয়া খুব নরমাল কোন ব্যাপার।
তাই, বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে বলার পরে বৈদ্যুতিক শক খাওয়ার বিষয়টা পড়লে মনে হবে, মুশতাককে বোধ হয় জাস্ট ছোট বাচ্চারদের ব্যাটারির চার্জ দিয়ে শক দিছে। তাই উনি বিষয়টাতে মোটেও আক্রান্ত হন নাই।
২।দ্বিতীয় হিউম্যানাইজেশান হইলো হিরো নির্মাণ। প্রথম আলো মুশতাক ভাই যে অত্যাচারের মুখেও হাসতে পেরেছে, বুক চিতিয়ে দারাতে পেরেছে এই গুলো বলে, যৌনাঙ্গে নির্যাতনে পায়খানা করে দেয় নাই এই গুলো এভয়েড করে দেখাতে চেয়েছে- মুশতাক আহমেদ একটা হিরো।
এইটা অনেকেই করেন। প্রথম আলো টচার হওয়া ব্যক্তি ভয় পাই নায় দেখায় মুশতাক আহমেদকে গ্লোরিফাই করেছে, অনেকে মৃত্যুকে গ্লোরিফাই করেন।
আমি মনে করি, টর্চারে কেউ ভয় পেয়েছে বা পায়খানা করে দিয়েছে বা সব বলে দিয়েছে এইটাই স্বাভাবিক। টর্চারে যে ডিহিউমানাইজেশান হয় তাতে আমি নির্যাতিত ব্যক্তির কোন অসম্মান দেখি না। এই ডিহিউমানাইজেশান টাই হিউম্যান।আমাকে টর্চার করলে আমি ভয় পাবো , চিৎকার করে কাঁদবো এবং বলবো আমাকে মাফ করে দিতে। জাস্ট টর্চার থেকে মুক্তি পেতে ।
এইটাই হিউম্যান।
ইন রিয়ালিটি কোন নির্যাতনে কোন গ্লোরি খুঁজার দরকার নাই, কোন হিরো খুঁজার দরকার নাই।
মুশতাকে আহমেদকে যে যৌনাঙ্গে শক দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে তাতে যিনি তিনি পায়খানা করে দিয়েছেন এইটাই হিউম্যান।
কিন্তু প্রথম আলো প্রথমে টর্চারটাকে হালকা করে উল্লেখ করেছে। তারপর টরচারের এক্সপেরিয়েন্সটার মুখে মুশতাক ভাইয়ের রেজিস্টেন্স দেখিয়ে তাকে গ্লোরিফাই করার চেষ্টা করেছে।
ভয়াবহ নির্যাতনের এই পুরো স্টোরি টাকে প্রথম আলো বিভিন্ন হাল্কা চুটকি দিয়ে যেইভাবে হিউমানাইজ করেছে। সেইটার নিন্দা জানায় রাখলাম।
একই সাথে কুডোয টু ডেইলি স্টার ফর ডুইং ইট দা রাইট ওয়ে।