মেড ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ড এর উপর রক্তের দাগ -লিবারেল বিশ্ব মানবতার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ বাংলাদেশের শ্রম নৈতিকতা

Relatives of Mohammed Abdullah cry as they gather around his coffin in Savar, Bangladesh AP

গত ৪২ বছরে জাতি হিসেবে, রাজনীতিবিদ আর টাকা ওয়ালাদের    ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট কামড়াকামড়ি করতে করতে যখন আমরা একজন আরেক জনের পিঠে ছুরি  মারতাছি তখন কোরিয়া, জাপান, ইউরোপ, মিডল ইস্ট, ফার   

ইস্ট , ওয়েস্ট এমনকি আফ্রিকার  দ্রুত উন্নয়শীল দেশ গুলো সমৃদ্ধি অর্জন

করতে করতে  বেসিক নীডের বাহিরের জিনিস গুলোতে নজর দেয়া শুরু করছে এবং লিবারেল ভিউজ এবং আইডিয়াজ গুলোধীরে ধীরে আত্মস্থ করতাছে।

স্পেশালি নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা  প্রচন্ড ভাবে লিবারেল। আমি  জানি অনেকেই গ্রিসের কথা টানবেন এবং ইউরোপের পতনের কথা টানবেন, কিন্তু খেয়াল রাখবেন, পতনের পরেও তাদের  সমাজ নিজেদের মধ্যে

 সবচেয়ে হত দরিদ্রের  সোস্যাল সিকউরিটি নিশ্চিত করে। সমৃদ্ধি অর্জনের সাফল্য ব্যর্থ্তা নিযে তাদের যে বিক্ষোভ

, তা ৭০০০ টাকা  বেতনের চাকরি পাওয়া না পাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ না।কেচি গেটে আটকে থাকা শ্রমিকের দরজার চাবি, পিএম এর কাছে থাকবে নাকি ট্রেড ইউনিয়নের নেতার কাছে থাকবে সেই নিয়ে  বিক্ষোভ না।

এই কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে,

১৯৯০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত

উত্থান-

পতন সব কিছুর মধ্যে দিয়ে বিশ্ব একটা ওভারঅলসমৃদ্ধি অর্জন

করছে এবং যার প্রেক্ষাপটে বিশ্বের অনেক দেশে কোটি  কোটি মানুষ দরিদ্রতা থেকে বেরিয়ে মধ্যবিত্ততে পা দিছে, মধ্যবিত্তরা উচ্চবিত্ত হইছে এবং জীবনকে পুর্ণভাবে উপভোগ করতেছে। এইটা ধরিত্রির জন্য যে সাসটেনএ্যাবল না, সেইটা আবার অন্য বিতর্ক্।

অর্থনৈতিক  

সমৃদ্ধি অর্জনের  অন্যতম একটা বৈশিষ্ট্য হলো

,

 মানুষ

,

তার ফিজিওলজিকাল  নিড গুলো অর্জনের পর  নিজের সাইকোলজিক্যাল নিড গুলোর প্রতি নজর দেয়।

সারা বিশ্বে, এই লিবারেল আইডিয়া জাত  মানুষগুলো এখন প্রচণ্ড ভাবে এনভাইরনমেন্ট নিয়ে কনসাস, মানবতা নিয়ে ভাবে। কর্পোরেট কোম্পানির লাভের কারণে মানবতার বলি হয় তা নিয়ে আন্দোলন করে , আমেরিকার তেলের জন্য আগ্রাসনের কারণে  মধ্যপ্রাচ্যে ইরাকের আগ্রাসন ও  হত্যা এবং পেলেস্টাইনে ইস্রায়েল এর  বর্ণ্ বৈষম্য এর  বিরুদ্ধে অনেকেই সোচ্চার।

 এই লিবারেলাইজ জনগোষ্টি কিন্তু আবার এই কর্পোরেট কোম্পানি গুলোর বড় একটা টার্গেট মার্কেট। তাই এখন, দাম, ভ্যালু, কোয়ালিটি এই সব থেকে পার্সেপশন ব্রান্ড, ইমেজ এই গুলো বড় হয়ে দাঁড়াইছে। 

কর্পোরেট কোম্পানিরা তাদের প্রডাক্ট সেল এর সোস্যাল ডায়নামিকস বোঝার  জন্য কোটি কোটি ডলার খরচ করে – তারা  এই  টার্গেট মার্কেটের মন মানসে কি চলে, তা নিয়ে সম্পূর্ণ্ ভাবে ওয়াকিবিহাল।

কিন্তু পয়েন্টটা হলো, এই লিবারেল ভিউ পয়েন্টের মধ্যে, আমাদের দেশ সম্পর্কে যেই সব কেচি গেটে আটকে রেখে কাজ করানোর সময়  আগুনে ১১০ জন এর মৃত্যু বা ভেঙ্গে পরা বিল্ডিং ে জোর করে কাজ করতে ঢোকানর পর কংক্রিট  চাপা পরে ৫০০ জনের মৃত্যুর মত  নেতিবাচক কিন্তু বাস্তব খবরগুলো শুনে ঘেন্যায়, বিস্ময়ে  শিউরে উঠে। 

আজ তাই বাংলাদেশের, পোশাক বানানোর জন্য, ডেকে এনে ৫০০ থেকে ১০০০ মানুষের হত্যার এই ঘটনাটা এবং সেইটা নিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে প্রতিটি নিউজপেপার, টিভি চ্যানেল এবং ইন্টারনেটের ব্লগারদের লেখা সহ একটা ভিজিবল প্রচারণা এইজন গোষ্টির মনে ব্যাপক ভাবে ইফেক্ট করা টা স্বাভাবিক।

আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ক্রিসচিয়ানা আমানপুরের সাথে কথা বলতে গিয়ে তার অজ্ঞানতা

,

উদাসীনতা এবং ঝগড়া-ঝাটি পুর্ন্ মনোভাব দেখানো, 

পোপের সারমন

, সাহায্য নিতে অস্বীকার করা হতে শুরু করে, লাশ খুজে না পাওয়া শ্রমিকদের পরিবার পরিজনের উপর লাঠির আঘাত – সবকিছু আজ এক হয়ে বাংলাদেশ ব্রান্ড এর উপর রক্তের দাগ মেখে দিছে এবং বাংলাদেশ এর জন্য বিশাল বড় পি আর ডিজাস্টার হয়ে দাঁড়াইছে।

তাদের প্রচারণায় একটা জিনিস প্রাধান্য পাইছে তা হলো, ১ লক্ষ ফ্যাক্টরির জন্য ১৮ জন ফ্রাক্টেরি ইন্সপেকটর থাকা।

প্রধানমন্ত্রীকে ক্রিস্টিয়ানা আমানপুর এই প্রশ্ন করছিলো,

প্রধানমন্ত্রী সেইটার উত্তর দেয় নাই। বরং তৃতীয় বিশ্বের ট্রাডিশনাল স্বৈর  শাসকের মতো হামবড়া

ভাবে তিনি  বলে গেছে, আমরা সব  করছি, তুমি কি আমার থেকে বেশি জান, তোমাদের আমেরিকাতেও তো এক্সিডেন্ট হয় ?

আমাদের সরকারের আমলে পোশাক শিল্পের কর্মীদের জন্য ফ্ল্যাট বাড়ি পর্য্ন্ত

বানায় দিছি।

কিন্তু ১ লক্ষ ফ্যাক্টরির জন্য ১৮ জন ইন্সপেকটরের এই প্রচারণাটার জবাব পিএম দেয় না। প্রধানমন্ত্রী বলতে পারতেন, এই ইনফরমেশনটা ভুল। আমাদের পোশাক শিল্পে ৪০০০ ফ্যাক্টোরি আছে।  ১ লক্ষ নয়। এই ইনফরমেশনট ছড়াইছে  নিউ ইয়র্ক টাইমসে আমাদের আরেক মহা সুশীল ফজলে হোসাইন আবেদের আর্টিকেল থেকে।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প নিয়ে এই সময়ে এই ধরনের একটা ভুল ইনফরমেশান ছড়ানো টা   বিশাল বড় ইরেসপনসিবিলিটি।  আবেদ সাহেবের এই অন্যায়টার দায় আমাদের অনেক বছর টানতে হবে ।

বাংলাদেশ নিয়ে এই পৃথিবীর কেউ বদারড না। 

আমরা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন একটা বদ্বীপ। একটা গার্মেন্টস কেনার সময়, কেউ চিন্তা করে যায় না,  আমি বাংলাদেশী গার্মেন্টস কিনবো না, থাইল্যান্ডের গার্মেন্ট কিনবো।  কিন্তু এই লিবারেল আর্বান মিডল ক্লাস,

রিটেইলের আইল থেকে

, যে কাপড়টায় হাত দিবে, তাতে যখন দেখবে মেড ইন বাংলাদেশ- তখন তার মনে ভেসে উঠবে সাভারের কনক্রিট চাপামানুষের লাশের ছবি।

তখন সে একবার দ্বিধা করবে।  এই একবার দ্বিধাটা এই কর্পোরেট প্রফিট মুখি রিটেইলারের জন্য যথেষ্ট বড় উদ্বেগের ব্যাপার।  তার বাংলাদেশ থেকে সোর্স্ করার কোনো বাধ্যবাধকতা নাই। অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশ এক্সিট্রিমলি চিপ,

তাই ওরা এইখান থেকেই কিনবেই।

 ভুল ধারনা। অবিশ্বাস্য রকম ভুল ধারনা।

ডিজনি অলরেডি গেছে। ডিজনি শুরু, ডিজনি যে গেছে এইটাতো তার জন্যে একটা পিআর স্টান্ট। 

সে এই পোশাক শ্রমিক, এই শিল্প, কোনো কিছু নিয়ে বদারড না। তার একমাত্র টেনশনতার ব্রা্ন্ড। সে জানে, সে প্রডাক্ট সেল করে না, সে তার ব্রান্ড সেল করে।

সে পিছু হঠছে।   কারণ সে তার এই লিবারেল কাস্টমার বেজ কে দেখাতে চায়, আপনার শিশুর গায়ে আপনি কোনো রক্ত দিয়ে তৈরী কাপড় কিনে দিচ্ছেন না,  আপনি অনেক ভাল। আপনি দুনিয়ার ভাল মন্দ নিয়ে কনসারনড, আমরাও কনসারনড।

এইযে ডিজাস্টার,  এই টা অনেক বড় ডিজাস্টার। আমরা  যদি মনে করি, কিছু লিপ  সার্ভিস দিয়ে এইটা পার হয়ে যাবো, তো ভুল  করবো। পোশাক শিল্প আমাদের দেশের ৪০ লক্ষ শ্রমিকের আয় উপার্জনের  এর একমাত্র অবলম্বন। পোশাক শিল্প যদি ধসে পরে, তো সবার আগে এফেকটেড হবে, গ্রাম থেকে আসা বাসা বাড়ির কাজের লোকের নির্যাতন থেকে পালিয়ে বাঁচা খুব ভালনারেবল একটা জনগোষ্টি।

যদি অরডার কমে আসে

, যদি ভালো বায়াররা চলে যায়, মালিকের প্রফিট একটু কমবে বটে, কিন্তু পাজেরো হাকানো মালিকের পাজেরো সেল করতে হবে না।

কিন্তু, লে অফ  করা ফ্যাক্টোরিতে বেতন না পেয়ে  আকাশ ধসে পড়বে সেই শাহিনাদের, যে মরে গিয়ে বাচতে পারেনি।  

তাদের উপর যে অন্যায় আর অত্যাচার হইছে, তা এখনো চলতেছে। সাভারের ঘটনায তাদের জীবনে কোনো চেঞ্জ  হয়নি। তাজরিনের পরেও  হয় নি, তার আগের অনেক কিছুতেও কিছু হযনি। এদের আমাদের প্রটেক্ট করতে হবে।

আমাদের তা্ই এখুনি প্রযোজনীয় স্টেপগুলো নিতে হবে। এর মধ্যে ট্রেড ইউনিয়নের অধিকারটা মাস্ট। 

একটা মন্ত্রনালয় করাটা একটা  মাস্ট।চিন্তা করতে পারছেন, কি অর্থব সব সরকার আমাদের ?  গত ৩০ বছরে পোশাক শিল্প আমাদের অর্থ্নীতিতে কত বড় জায়গা দখল করে নিছে, কিন্তু একটা সরকার একটা মন্ত্রনালয় বা অধিদপ্তর করতে পারে নাই।

যারা যারা মনে করতেছেন দূর, কিছু হবে না।  ঐ লোভী, বায়াররা ঠিকই, সস্তা কাপড়ের জন্যবাংলাদেশ ছেড়ে যাবে না্, তারা দুনিয়া কে চিনতে ভুলকরছেন। ঘোর বিপদের সামনে আমরা দাঁড়িয়ে, কারেক্ট সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে এই শিল্পকে বাঁচাতে হবে। শ্রমিকদের স্বার্থ্ উদ্ধার  করতে হবে। এবং একই সাথে বাংলাদেশ ব্রান্ডের এই পিআর ডিজাস্টারটা থেকেও উদ্ধার করতে হবে।

এর থেকে বাচার উপায় আছে।  অস্বীকার করলেও মরন, ভুল ডিসিশান নিলেও মরন্।

এখন সরকার বা বিজিএমইএ বুঝবে তারা  কোনটা করবে? ভুল ডিসিশানগুলো নিবে, নাকি অস্বীকার করবে? নাকি পোশাক শিল্পে লেবার রাইটস এবং ওয়ারকিং এনভাইরনমেন্ট উন্নত করে, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার দিয়ে, ইয়ারলি সেলারি রিভিউ করার ব্যবস্থাসহ শ্রমিক অধিকার এবং মজুরির স্টেপগুলো নিয়ে শ্রমিকদেরকে আস্থায় এনে সত্যিকারের পরিবর্তন  সুচনা করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.