বিশ্বব্যাপী ক্যাপিটালিজম এর সাফল্যের প্রধান কারণ হচ্ছে ক্যাপিটালিজম মানুষের লোভ কে প্রমোট করে। এবং ঐ লোভটাকেই একটা প্রয়োজনীয় শক্তি হিসেবে দেখায় এবং ঐটাকে আপনার অর্ন্তনিহিত, বৈশিষ্ট্য বলে স্বীকৃতি দেয়। সংবিধানে যাই লেখা থাকুক, আমরা আগা, পাশ তলা পুঁজিবাদ- নগ্ন কদর্য আভরণহীন, ক্ষুধার্ত নেকড়ের দলের মত নিয়ন্ত্রণহীণ- নির্লজ্জ পুঁজিবাদ। সাভারের রানা প্লাজায়, এখন পর্যন্ত জানা ৪০০ মানুষের মৃত্যুতে, পুঁজিবাদের ওই কদর্য রূপটাই পরিস্ফুট হয়ে ওঠে।
আপনি সবাই এই হত্যার দোষে দায়ী।
সাভারের ঘটনায় যারা যারা রানা প্লাজার মালিক রানাকেই শুধু দায়ী করছেন, তারা নিজেদের সাথে ছলনা করছেন। যারা শুধু পোশাক মালিকদেরকে দায়ী করছেন একই আত্ম প্রতারণা করছেন। বাস্তবে আমরা পুরো বাংলাদেশ রাষ্ট্র, আমাদের কড়ি-কব্জা, শিরা-উপশিরা, ব্রেইন, কলিজা, হাড্ডি সব কিছুসহ এই পুরো সিস্টেম এই হত্যাকাণ্ডের জন্যে দায়ী। এই সিস্টেমের সাথে জড়িত আমরা সবাই – যারা এই লোভের কাছে আত্ম সমর্পণ করেছি- এই হত্যার দোষে দায়ী।
আমি আজ কিছু কালপ্রিটদেরকে বিশ্লেষণ করবো। সবার আগে আসবে এই সীমাহীন লোভ এর প্রধান পক্ষ- রাজনীতিবিদ, প্রশাসন এবং মিডিয়ার দুষ্ট চক্র। যাদের হাতে জন্ম নিয়েছে ইনস্টিটিউশনালাইজড করাপশন ।
একটা সময় ছিল। সরকার কর্মচারী এবং রাজনীতিবিদেরা এক জন আরেক জনকে ভয় পেত এবং নিরাপদ দূরত্ব মেইনটেইন করতো। এই দূরত্ব ধীরে ধীরে কমে এসে, তিন পক্ষ সম্মিলিত হয়ে, এখন এক অপূর্ব সম্প্রীতি এস্টাবলিশ হইছে। সাভারেও আমরা দেখি, মুরাদ জং দিছে রাজনৈতিক সাপোর্ট, ইউএনও দিছে প্রশাসনিক সাপোর্ট, ঠেঙ্গানির জন্যে ছিল পুলিশ- এবং এদের সাপোর্ট দিয়ে রানা করেছে ভূমি দখল। সেই ভুমি দখলের টাকায় হইছে, রানা টাওয়ার। এবং সেই রানা টাওয়ার এর ভাড়ায় চলে হরতাল মুরাদ জং এর হরতাল বিরোধী মিছিল এবং পোস্টারিং বা ক্যাডারদের খরচ । খোঁজ নিয়ে দেখেন, এই ইউএনওর নিয়োগ দিতে স্থানীয় সরকার এ সুপারিশ করছে মুরাদ জং, এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে কথা বলে মুরাদ জং ঐ থানার ওসির ট্রান্সফার ঠেকাইছে। কারন, রানাদের মত ক্যাডার দের এই লেভেল এ এক্সেস থাকেনা।
আমি একটা পোস্ট এ লিখেছিলাম,গত ৪০ বছরে দুর্নীতির সাংস্কৃতিক চর্চার পর, গত পাঁচ বছরে দুর্নীতির ইনস্টিটিউশনালাইজেশান হইছে। এরপর বেশ কিছু বন্ধু আমার সমালোচনা করছে।
তাদের ক্ষোভ, আমি কেমনে মিন করলাম যে , তার আগের বছর গুলোতে দুর্নীতি কম হয়েছে। আমার পোস্টটা তারা ভুল বুঝেছেন, কারণ আমি কোন মতেই মিন করিনাই যে তার আগের বছর গুলোতে বি এন পি বা তত্ত্বাবধায়কের আমলে দুর্নীতি কম হইছে। আমার পয়েন্টটা হইলো, গত পাঁচ বছরে দুর্নীতির ইনস্টিটিউশনালাইজেশন হইছে। দুর্নীতি কমা বাড়া বা দুর্নীতিয়ের ইন্সটিটিউশানালাইজ হওয়া আলাদা জিনিষ।
রাজনীতিবিদ আর প্রশাসনের এই মহা সম্মিলনের সূচনা হয়েছিল, ঐ মখা আলমগীরের হাত ধরেই।
১৯৯৬ সালে, ঠিক বর্তমানের মত তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আন্দোলনের সময় মহিউদ্দীন খান আলমগিরের নেতৃত্বে অনেক গুলো সচিব প্রশাসনের নিউট্রালিটিকে ডিনাই করে তৈরি করে জনতার মঞ্চ করে এবং আওয়ামী লীগের দাবির প্রতি সম্মতি দেয়। বাংলাদেশের প্রশাসনের ইতিহাসে সেইটা একটা যুগান্তকারী ঘটনা। এবং আমি নেট সার্চ করে দেখছি, প্রথিবীর আর কোন দেশে এই রকম প্রিসিডেন্স নাই।
তখন এতো টকশো আর মিডিয়া ছিলনা। কিন্তু সচেতন মানুষেরা এইটার প্রচণ্ড সমালোচনা করেছিলেন। তাদের সমালোচনা যে সঠিক ছিলো তার চাক্ষুষ প্রমাণ আজ সাভারের ধসে পড়া ভবনে ৪০০ টি লাশ এবং শাহিনুর এর অনাথ সন্তান।
মখা তার আনুগত্যের পুরস্কার পেয়ছেন। ৪০০ কোটি টাকার ফার্মার্স ব্যাংক, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রিত্বসহ ফ্লাট, প্লট, আর জানা না জানা কত সম্পদ। কিন্তু,এই জাতিকে যুগে যুগে মখার এই জঘন্য অন্যায়ের দায় টানতে হবে।
রাজনীতিবিদ দের সাথে প্রশাসনের যে সম্মিলনের সূচনা করেছিলেন, তা সৃষ্টিশীলতা, অধ্যবসায় এবং সাধনার অপূর্ব সমন্বয়ে একটা চরম উৎকর্ষতার প্রয়োগ দেখা দেয়, আওয়ামী লীগের এই টার্ম এ।
আগে সরকারি দুর্নীতিতে কনট্রেকটাররা, কন্ট্রাক্ট পাওয়ার বিনিময়ে একটা পার্সেন্টেজ আমলা বা রাজনীতিবিদদের দিতো। এখন যেটা হয়, তা হলো, আমলা এবং রাজনীতিবিদেরা মিলে পুরো কনট্রাকটর একটা ভ্যালু ঠিক করে এবং এই ভ্যালুটা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে,কনট্রেকটারকে ডাক দিয়ে বলে, আপনি এই কাজটা মিনিমাম কত টাকায় করবেন।
তারপর তারা কন্ট্রাক্টরের সাথে নেগোশিয়েট করে। ফলে দেখবেন, এখন সরকারি সব কন্ট্রাক্ট এ, কন্ট্রাক্ট নিছে কোন রাজনীতিবিদ এর কোম্পানি এবং কাজ টা করছে কোন প্রফেশনাল কোম্পানি। চট্টগ্রামে বহদ্দার হাটে, যে ফ্লাইওভারটা পড়লো, তার কাজ ছিলো চট্টগ্রামে এর এক কালের প্রখ্যাত ছাত্রনেতা প্রয়াত জাহাঙ্গীর সাত্তার টুকুর কন্ট্রাক্ট। কাজটা এক্সিকিউট করছিলো একটা প্রফেশনাল ডেভেলপার।
এবং এই টার্ম এ এসে মিডিয়া সরকার এর বশ্যতা স্বীকার করে, এই তিন পক্ষের দুষ্ট চক্র টি সম্পন্ন করে। এবং সমাজে দুর্নীতির ব্যাপারে একটা সামগ্রিক এক্সেপ্টেন্স আসে। এই পারটিকুলার দুইটি বিশিষ্টের অর্জনের কারনেই, দুর্নীতির ইনস্টিটিউশনালাইজেশন সম্পন্ন হইছে বলে বলছি।
এই টার্ম এ, শেখ হাসিনার সরকারের একটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে, আমলা এবং দুর্নীতিবাজদের অপেনলি প্রশ্রয় দেয়া হইছে।তার আগে প্রশ্রয়টা ছিল ইমপ্লিসিট এবং গোপন। এইটা প্রকাশ পেলে হই চই পরে যেত। কিন্তু, আওয়ামী লীগ এর এই টার্ম এ বিষয় টা ছিল প্রকাশ্য। তত্ত্বাবধায়কের আমলে যেসব সরকারি আমলারে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হইছিল, তাদেরকে সরকার প্রধান ডাইরেক্টলি ওপেন মিটিং এ বলছে, আপনাদের উপর অত্যাচার হইছে, আপনারা নির্ভয়ে কাজ করেন। তাদের প্রমোশন ও দেয়া হইছে। সরকার ডাইরেক্টলি তাদের ফিলিং দিছে, আমরা আপনাদের প্রটেক্ট করবো আনলিশ ইয়োর গ্রিড।
সরকারের শীর্ষ থেকে এই প্রশ্রয় পেয়ে, রাজনীতিবিদ, আমলা, কর্মচারীরা মিলে একটা এলাইয়েন্স করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখল করছে, জনগণের সম্পদ লুটপাট করছে। কিন্তু তাদের একটা জিনিস মিসিং ছিলো।সেইটা হইলো মিডিয়া।
মিডিয়াকে বশ করতে, আওয়ামী লীগ ব্যবহার করে, তার কালচারাল ক্যাপিটাল বাঙ্গালীয়ানা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির নৈতিক অবস্থান।আওয়ামী লীগ এর পেটোয়া বুদ্ধিজীবীরা এই দখল কাজে আর্মস ক্যাডার এর ভূমিকা নেয়। এবং যারা নত হয় নাই, তাদের উপর প্রেশার সৃষ্টি করা হইছে বিভিন্য ভাবে । প্রথম আলোর মত পত্রিকা যারা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ এর মত ভূমিকা নিয়ে জনগণ এর মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে, তারা এই টার্ম এ ছিল নীরব। পদ্মা সেতুর দুর্নীতি বাদে দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রথম আলোর ভূমিকা ছিল, ন্যক্কার জনক। একজন মন্ত্রীর দুর্নীতিও এক্সপোজ করা হয় নাই। এমনকি অন্য পেপারে র যা আসছে, টাও তারা কখনও ফলো আপ করে নাই তারা । প্রথম আলো নিউয না করলে, নিউয নিউয হয়ে উঠে না। আমার ধারনা প্রথম আলোকে বশ করা হইছে, ট্রান্সকম গ্রুপ এর বিজনেস ইন্টারেস্ট এ হাত দিয়া। সরকার ট্রান্সকম কে ভয় দেখাইছে, যদি তেড়িবেড়ি কর তো তোমার বিজনেস ধসিয়ে দিব। ট্রান্সকম তার হায়ার কোটি টাকার বিজনেস এম্পায়ার ভেঙে পরার রিস্ক নেয় নাই।
তাছাড়া অধিকাংশ মিডিয়া তার নৈতিক শক্তি ও হারাই ফেলছে রাজনীতিবিদদের সাথে নিজেই এই লুটপাট যন্ত্রের একটা অংশীদার হয়ে পড়ার পর। ফলে দুর্নীতির নিয়ে এক্টিভিজম যেইটা বাংলাদেশের মিডিয়ার ৭০ বছরের বৈশিষ্ট্য তা এই টার্ম এ ছিল অনুপস্থিত । এই জন্যেই এপিএস এর হাতে ৭০ লক্ষ টাকা ধরা খাওয়ার পরেও, ডাইরেক্ট প্রমান আসার পরেও সুরঞ্জিত এখনও মন্ত্রী আছে।
কিন্তু রাজনীতিবিদ এবং প্রশাসন, মিডিয়াকে বশ করার পর, রোম এ গিয়ে রোমান হওয়ার মানসিকতা থেকে মিডিয়া কর্মী এবং সাংবাদিকেরাও, রাজিনিতিবিদ এবং প্রশাসনের সাথে যুক্ত হয়ে দুর্নীতির এই ত্রিপার্টি এলাইয়েন্স সম্পন্ন করে এবং মিডিয়া কর্মী ও সাংবাদিকেরা দুর্নীতির একটা বড় পার্টি হয়ে দাঁড়ায়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নাগরিক সমাজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে এক্টিভিজম করছিলো তার দুর্নীতির এই প্রাতিষ্ঠানিকিকরন দেখে, নীরবে পরাজয় মেনে নেয়। এবং দুর্নীতির এই ত্রিপার্টি এলাইয়েন্সের কাছে বশ্যতা স্বীকার করে । এবং সমাজে দুর্নীতির একটা এক্সেপট্যান্স সৃষ্টি হয়।
যুদ্ধে পরাজিত, সব হারানো, পঙ্গু যোদ্ধার মত হতাশ হয়ে সচেতন নাগরিক সমাজ নিজেকে প্রতারিত ভেবে নিজেরাই নিজেদের লেভেলে দুর্নীতিবাজ হওয়ার প্রস্তুতি নেয়। এক জন মানুষ আরেক জনকে ঠকিয়ে, তার সার্ভাইভাল নিশ্চিত আর প্রতিযোগিতায় নামে। সে দেখতে পায়, তার ভালুর কোন মুল্য নাই। এইটা কদর্য ক্যাপিটালিজম। সারভাইভাল অফ দা ফিটেস্ট।
টাকা হয়ে ওঠে সব চেয়ে বড় শক্তি। টাকায় হয়ে ওঠে নিয়ন্তা। নীতি-নৈতিকতা, মানবিকতা বা সব ধরনের ভ্যালু সমাজে অপাংতেয় হয়ে আসে ।
ইতি পূর্বে দুর্নীতিকে সাধারণ মানুষ সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখত। পেপার-পত্রিকায় দুর্নীতিবাজদের সামান্যতম প্রশ্রয় দেয়া হতোনা। কিন্তু সেইটা এখন চেঞ্জ হইছে। আমাদের সমাজে দুর্নীতি এখন গ্রহণযোগ্যতা পাইছে।
এবং এই সময়ে, সমাজে গণ মানুষের ধারণায় দুর্নীতির প্রতি একটা ব্যাপক গ্রহণ যোগ্যতা চলে আসে। একটা সময় ছিলো, দুর্নীতিবাজ জানলে মানুষ মেয়েকে বিয়ে দিত না, কিন্তু অধিকাংশ ফ্যামিলিতে এইটা চেঞ্জ হইছে। এখন মেয়ের বাপ ই বলে ,” সরকারি কাজ করে, ঘুষ না নিলে তো ওর চাকুরী চলে যাবে। এইটা কোন ব্যাপার না। আর অর সংসার চলবে কেমনে ? বেতন পায় বা কয় টাকা ?”
সমাজ যখন দুর্নীতিকে একসেপ্ট করে নিল, তখন দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানীকিকরন হইছে তো বলতে হবেই।
অনেকে বলবেন, আচ্ছা আপনি বলতে চাচ্ছেন তাহলে আওয়ামী লীগ সব কিছুর জন্যেই দায়ী। আগের সবাই ধুয়া তুলসী পাতা ছিলো। আপনিতো ঘোর আওয়ামী লীগ বিরোধী মানুষ মশাই।
প্লিজ ভুল বুঝবেন না। আমি জাস্ট বলছি, এই প্রচেষ্টা গত ৪০ বছর ধরেই চলিতেছিল। এই খানে যা যা বলা হইছে, তার প্রতি টি আগের বছর গুলো তেও ছিল। কিন্তু, গত পাঁচ বছরে, এই ত্রিপার্টি নেক্সাসের একটা অভূতপূর্ব মিলন দেখা দেয় এবং দুর্নীতির চর্চা এইটা একটা চরম উৎকর্ষতায় পৌঁছায় মূলত মিডিয়াকে বশ করতে পারার কারণে। তাছাড়া যারা দুর্নীতিবাজ তাদের কিন্তু কোন দল নাই।তারা আওয়ামী লীগ এর আমলে আওয়ামী লীগ, বি এন পির আমলে বি এন পি হয়ে যায়। অন্যে কেও আসলে তারা তার পক্ষ ও নিবে।
তো সাভারের কথা বলতে এই গরু রচনা কেন টানলাম।
কারণ, দুর্নীতি ইনস্টিটিউশনালাইজ হয়ে যাওয়ার কারণে, আজ যে ১৪ টা সরকারি অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্সের পারমিট নিতে হয়ে তাদের কাছে দুর্নীতি তাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রার একটা অংশ হয়ে দাঁড়ায়ছে। সেইফটি থাকলেও, সে টাকা নিবে, না থাকলেও টাকা নিবে। তাহলে শিল্প মালিকরা চিন্তা করে, টাকা যখন দিতেই হবে তাহলে কেন আমি খরচ করবো । ফর একজামপল, রানা প্লাজার পাঁচটা ফ্লোরে বসানো হইছে জেনারেটর। এইটাই একটা সিম্পল অব্জারভেশান । যে কোন ফ্যাক্টরি ইন্সপেকশনে এইটা ধরা পড়ার কথা। এইটা এনভায়রনমেন্ট এর সার্টিফিকেট পাওয়ার কথা না। বাংলাদেশে কোন বিল্ডিংয়ের পাঁচটা ফ্লোর জেনারেটর তোলা হইছে আমার জানা নাই। কিন্তু রানা তার মুরাদ জংএর খুঁটির জোরে সব অসম্ভবকে সম্ভব করছে। তার লোভকে ঠেকানোর মত কেউ ছিলনা।
খেয়াল করে দেখেন। বিল্ডিংটার যখন একটা কলাম ফাটল দেখা দিছে, কে আসছিল সার্টিফিকেট দিতে ? ইউএনও। ইউএনও এসে বলে গেছে যে, বিল্ডিংয়ের কিছু হবেনা। একজন ইউএনও, একটা উপজেলার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। সে বলার পর কিন্তু আর কারও কিছু বলার থাকেনা।
আরেকটা দিক থেকে দেখেন, আমাদের পাওয়ার সেক্টরে যে দুর্নীতি চলছে, তাই কিন্তু আজ ঢাকা শহরে বিল্ডিংয়ে, বিল্ডিংয়ে নিজস্ব জেনারেটর বসার মূল কারণ।
১৯৯৩ সালে আমাদের টোটাল পওয়ার ছিলো ৪০০০ মেগা ওয়াট, এখন ২০১৩ তে আমরা পৌঁছেছি ৬০০০ বা ৭০০০ মেগা ওয়াট এ। একই সময় ভিয়েতনাম ৩০০০ মেগা ওয়াট থেকে এখন পৌঁছেছে ১৫০০০ মেগা ওয়াট এ। ওরা কেন পারছে , আমরা কেন পারি নাই ? এই দুর্নীতি। ঐই দুর্নীতি যদি না হতো, তাহলে আমাদের পাওয়ার থাকত। রানা টাওয়ারের ফ্লোরে ফ্লোরে জেনারেটর বসাতে হতো না এবং এই জেনারেটরের ভারে রানা টাওয়ার ধ্বসে পড়তোনা। সাহানা ১১০ ঘণ্টা, তার অকিঞ্চিৎকর জীবনের প্রদীপটাকে জ্বালিয়ে রেখে,ক্ষোভে, দুঃখে, লজ্জায়, ঘৃণায়, শোকে পুড়ে মরতোনা তার সন্তানের বাকি জীবন কেমনে কাটবে এই ভীতি বুকে নিয়ে।
সব কানেক্টেড। সব কানেক্টেড।
একে আপনি বলবেন, প্রশাসনের ব্যর্থতা, কুশাসন। কিন্তু আমি বলব ক্যাপিট্যালিস্ট সিস্টেমের বিল্ট ইন লোভ।
যে লোভ হচ্ছে ক্যাপিটালিজমের ভিত্তি। তাকে নিয়ন্ত্রণ না করে যে সিস্টেম আমাদের দেশে বানানো হয়েছে, তার একটা নগ্ন কদর্য রূপ।
রানা প্লাজা, কলাম বা কনক্রিটের ভারে ভেঙ্গে পরে নাই, ভেঙ্গে পরেছে ক্যাপিটালিজমের বাঁধন হারা কদর্য লোভের ভারে।
আপনি যদি আমারে বলেন, শুধু মাত্র এই বিল্ডিং , গার্মেন্টস এর মালিকের লোভের কারণে ধসে পড়েছে, আপনি ভুল করবেন। এইর লোভ আমার, আপনার, আপনার ভাইয়ের, আব্বার, দুলা ভাইয়ের সবার। আমরা পুরো জাতি, ক্যাপিটালিজমের লোভের কালচারে ঢুকে পড়ছি।এখন আমার আপনার সবার সামনে একটাই ইসু। তা হইলো সারভাইভাল অফ দা ফিটেস্ট। ফিট হওয়ার এক মাত্র নিক্তি টাকা। এইটা এখন লাভ আর লোভের সমাজ। যে যার কাছ থেকে যেমনে পারতাছে মারতাছে। সবাই ১০০% চায়, তার বিনিময়ে এক টাকাও দিতে চায়না।
পোশাক শিল্পীদের কথা কি বলবেন, বাসার কাজের লোককে ২৪ ঘণ্টা খাটায় আমরা ৬০০ টাকা দেই পেটে ভাতে।
এই লোভের সংস্কৃতি,এই মার মার কাট কাট, আমারে সব দে, নইলে ছিল্লা কাইট্টা লবণ লাগাই দিমু সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে অনেক বড় সোল সার্চিং করতে হবে।
দ্বিতীয় পর্বে আমরা দেখব, প্রশাসনের এই লোভের সাথে কিভাবে যোগ হয়েছে , সুপার নর্মাল প্রফিট এর আশায় গার্মেন্টস সেক্টরে লোভ। এবং কিভাবে ইন্ডাস্ট্রিটা সকল ধরনের নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত করে গড়ে উঠছে , ম্যাক্সিমাম প্রফিটের লোভ এর উপর ভিত্তি করে। যাতে বলি হচ্ছে মানবতা এবং শ্রমিক এর ন্যায্য অধিকার। যা আসবে পরবর্তী পর্ব।
ক্যাপিটালিজম এক্সপোজড -সাভার ট্রাজেডি পার্ট ২- গারমেন্টস এ লোভ এর বলী শ্রমিকের ন্যুনতম অধিকার