আওয়ামী লীগের নেতারা যে শাহেদ, পাপিয়া, পাপলু, বা জিকে শামিমদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করেন, সেই বক্তব্যটিকে আমি সমর্থন করি।
এর একটি তাত্ত্বিক ভিত্তি আছে। ফরাসি সোশিয়লোজিস্ট অলিভার রয় আইসিসের সদস্যদের পরিচয় ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, রেডিক্যাল ইসলামিস্টরা আইসিস তৈরি করেনি, বরং সারা দুনিয়ার চোর ছ্যাঁচড় বদমাশ গুলো রেডিক্যালিজমের ইসলামাইজেশন করেছে।
এরা একটা রাজনৈতিক শুন্যতার এর সময়ে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে, তাদের সকল ধরনের কু-প্রবৃত্তির বাহন হিসেবে আইসিসের খেলাফতের সাম্রাজ্যকে কে বেছে নিয়েছে।
অলিভার রয় দেখিয়েছেন, আইসিসের অনেক সদস্য আইসিসে জয়েন করার পূর্বে নিয়মিতভাবে বারে যেত, মদ খেত এবং পাশ্চাত্যের বিভিন্ন ধরনের ভোগবাদি আচার পূর্ণভাবে উপভোগ করতো।অলিভার রয়, আইসিসের সদস্যদের নিয়ে সার্ভে করে দেখেছেন ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে এদের আইডিয়া খুবই কম।
তার মতে, আইসিস তাদেরকে যথেচ্ছাচারের বাহন তৈরি করে দিয়েছে।যেটাকে তিনি বলেছেন রেডিক্যালাইজেশন এর ইসলামাইজেশন। যেটা পাশ্চাত্যে জনপ্রিয় ইসলামিক রেডিক্যালাইজেশন থিওরির সম্পূর্ণ বিপরীত মুখি একটি ভাবনা।
অলিভার রয়ের আইসিস নিয়ে এই গবেষণার এর সাথে আওয়ামী লীগের ভেতরে বাংলাদেশের সকল লুটেরা বাটপার চোর ভূমি দখলকারী সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেওয়ার মিল দেখা যায়। যদিও শেখ হাসিনা নিজেই দলে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখান, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখার জন্য তার একটি বড় সন্ত্রাসী বাহিনী প্রয়োজন , যারা সন্ত্রাসের ভয় দেখিয়ে জন অসন্তোষ চাপা দিয়ে রাখবে।
এবং এই সন্ত্রাসী বাহিনীকে নিয়মিত ভাবে মুখে আধার দিয়ে যাওয়ার জন্যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে লুট করতে হয়। এই লুটকে ধামাচাপা দিতে আবার চেতনা, উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলা সহ অনেক গুলো প্রোপাগান্ডার প্রয়োজন পরে। এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল লুট, প্রপাগান্ডা এবং সন্ত্রাসি বাহিনীকে চালানোর জন্যে তিনি নিজেই দেশের প্রতিটা সেক্টরে বাস্টারডাইজেশান প্রসেসে ঐ সেক্টরের সব চেয়ে দুর্নীতি পরায়ণ এবং বিকারহীন লুটেরাদের ক্ষমতায়ন করেছেন।
এবং তাদের পূর্ণ ভাবে দখল ও লুটের স্বাধীনতা দিয়েছেন। এই ক্ষমতায়নের প্রসেসে ভদ্র লোকের কাভার ধরে রেখে- লুটের, মিথ্যার, পাচারের সক্ষমতাই ছিল এক মাত্র যোগ্যতা। আজকে তাই, বাংলাদেশের সকল শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী আওয়ামী লিগের নেতা। শীর্ষ ব্যাঙ্ক লুটেরা, শেয়ার বাজার লুটেরারা, ভূমি দস্যুরা মন্ত্রী- শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বিশেষ সহকারী। প্রতিটা এলাকায় সব চেয়ে নিকৃষ্ট লুটেরা মুজিব কোট পরে শেখ হাসিনার প্রতি এলিজিয়েন্স ঘোষণা করেই ফ্রি স্টাইলে দখল লুট করে বেড়াচ্ছে। পুলিশ, র্যাব, আর্মি, পুলিশ, কোর্ট তাদের সেই তস্করযে সহায়তা করছে।
আমার নিজের এলাকাতেও সব চেয়ে নিকৃষ্ট চোর এবং দখলদারেরা সবাই আওয়ামি লিগ ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের পদবি রক্ষা করে চলে। কেউ তাদের কিচ্ছু বলার সাহস পায় না।
শেখ হাসিনা তাদের ক্ষমতায়ন করেছেন – উল্টো দিকে তারা অস্ত্র, প্রোপাগান্ডা এবং দখল দিয়ে এই সাম্রাজ্যকে রক্ষা করেছে। যে দেশে মানুষ অক্সিজেন না পেয়ে, তীব্র যন্ত্রণায় মরে যায় সেই দেশে এরা ৫৭ লক্ষ টাকা, ৪৫ লক্ষ টাকার ঘড়ি পরে।
ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, শেখ হাসিনা এমন একটা প্লাটফরম তৈরি করেছেন, যাতে বিভিন্ন স্তরে সকল ধরনের দখলদার, লুটেরা, ধর্ষক, প্রতারকদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। অলিভার রয়ের ভাষায় আওয়ামী লিগের মধ্যে লুট, দখল বা দুর্নীতি ঢুকে যায় নাই, বরং লুট এবং দখলের আওয়ামী করন হয়েছে। অনেকে বর্তমান রেজিমকে ফ্যাসিস্ট হিসেবে চিহ্নিত করেন। আমি নিজেও এটা নিয়ে বিতর্ক করেছি। কিন্তু, এই অভিযোগটি ভুল। এই রেজিমকে ফ্যাসিস্ট রেজিম বললে, বিশ্বের বিখ্যাত ফ্যাসিস্টরা কবরের নিচে নাড়াচাড়া শুরু করবে। শেখ হাসিনার রেজিম ফ্যাসিজমের আড়ালে সিম্পল একটা মাফিয়া তন্ত্র। ফ্যাসিস্টরা প্রচণ্ড আইডিয়ালিস্ট একটা গ্রুপ।
যারা জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের ধারনা থেকে সকল বিরোধী মত দমন করে বটে কিন্তু, তারা যেহেতু স্বজাতির শ্রেষ্ঠত্বের ধারনায় বিশ্বাস করে তাই তারা তাদের নিজের জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটায়। কিন্তু, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার রেজিমের এক মাত্র উদ্দেশ্য দেশের শেষ সম্পদটা শুষে খেয়ে বিদেশে পাচার করে দেওয়ার আগ পর্যন্ত ক্ষমতা ধরে রাখা।ভারতের মোদীকে আপনি একজন পটেনশিয়াল ফ্যাসিস্ট হিসেবে চিহ্নিত করতে পারবেন। কিন্তু, শেখ হাসিনার ফ্যাসিজমটাও একটা ফইন্নির ফ্যাসিজম। ফ্যাসিজম নয়, মাফিয়া তন্ত্র। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, কেন তাহলে রেজিম মাঝে মাঝে তাদের বেশ কিছু মধ্যম শ্রেণির লুটেরাদের ধরপাকড় করে। ।
এইটা তিনটা কারনে হয়। ১। কাভার ভেঙ্গে ফেলা। ২। বখেরার মুখ ছোট করে নিয়ে আসা। ৩। গ্রুপের অন্তর দ্বন্দ্ব।
কাভার ভেঙ্গে ফেলাটা মাফিয়াদের জন্যে সব চেয়ে বড় অপরাধ। নারী, মাদক এবং দখলের কাভার দেওয়ার জন্যে মাফিয়াদের জলপাই ব্যবসার কাভারের প্রয়োজন হয়।এই অবৈধ ব্যবসার আড়ালে মাফিয়ারা নিজেকে সমাজের সম্মানিত নাগরিক হিসেবে প্রোজেক্ট করে। তাই, মাফিয়াদের একটি মূল নিতি হলো , যারাই এই কাভারটা ভেঙ্গে ফেলে বা যারাই কোন কারনে ধরা খায় , মাফিয়ারা সাথে সাথে তাদের ডিযওউন করে। দেখবেন,রিজেন্ট সাহেদ অথবা জেকেজি সাব্রিনা বা পাপলু এমপির অপরাধ কিন্তু বাংলাদেশে চিহ্নিত হয় নাই।
ইতালিতে বা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন অবৈধ করোনা সারটিফিকেট ধারি বাংলাদেশিদের ধরে ফেরত পাঠানো শুরু করলো তখনই কিন্তু শাহেদ এবং সাব্রিনাদের খবর মিডিয়াতে ছাড়া হয়েছে। এর পূর্বে কিন্তু এরা সরকারের সব চেয়ে প্রতিনিধিত্বশিল গ্রুপের সরাসরি প্রশ্রয়ে তাদের দুর্নীতি চালিয়ে গ্যাছে। কিন্তু যখন বিদেশে মিথ্যা সারটিফিকেট ধরা খাওয়ার পরে আন্তর্জাতিক ভাবে বাংলাদেশের নকল করোনা সারটিফিকেট আলোচিত হয়েছে তখনই, লীগকে দেখাতে হয়েছে বাংলাদেশের মেডিকাল সিস্টেম পরিচালনা কারি দল আওয়ামি লীগ মূলত সৎ। কিছু সাব্রিনারা বা সাহেদরা অন্যায় করেছে, আমরা তাদের গ্রেপ্তার করেছি।
ইতালিতে যদি বাঙালি ভাইরা ধরা না খেত, শাহেদ বা সাব্রিনার কিছুই হতো না। শাহেদ আগামী এমপি ইলেকশনের প্রস্ততি নিচ্ছিল। সে ফাইনালি সিট পেতো কিনা, তা আওয়ামী লিগের ইন্টারনাল ডিসিশন কিন্তু, তাকে সিলেক্ট করতে আওয়ামী লিগের কোন প্রব্লেম ছিল না। বরং তার লুট দখল এবং জচ্চুরি এবং সেইটা ঢাকার জন্যে স্মুথ বাটপারির যে ইতিহাস এবং তার কানেকশান বলে সে আসলে একজন আইডিয়াল ক্যান্ডিডেট ছিল আগামি নির্বাচনের জন্যে।
ক্যারিয়ার ল্যাডারে সাহেের চেয়ে এগিয়ে আছে, পাপুল এমপি। কিন্তু, সেও যদি কুয়েতে ধরা না খেত আরো লক্ষ লক্ষ অভিবাসীকে শূন্য করে, আরো অনেক হাজার কোটি টাকা সে দখল করে নিতো যার বড় একটা ভাগ, সরাসরি শেখ হাসিনা পেপারে ছবি তুলে চাঁদা আকারে গ্রহন করতেন- যেইটা তিনি এতদিন নিয়েছেন।
দ্বিতীয় এবং তৃতীয় কারনটি সহজ। এতো বড় লুটেরা বাহিনী রক্ষা করতে গিয়ে, অনেক সময় বখেরা এতো বেশি ভাগ হয়ে যায় ফলে অনেকেই অসন্তুষ্ট হয় । ফলে, সিস্টেমের সব চেয়ে শক্তিশালি এন্টিটি গুলো মাঝে মাঝে বখেরাতে ভাগের পরিমাণ বাড়ানোর জন্যে কিছু মুখকে ছেঁটে দেয়। এবং অনেক সময়েই লুটের বখেরার ভাগাভাগি দ্বন্দ্বে কিছু মুখ কাটা পরে। জিকে শামিম বা পাপিয়ারা সেই ছাটাই প্রক্রিয়ার শিকার।
আওয়ামী লিগের ভেতরে যাদের হাইব্রিডদের নিয়ে যারা কান্নাকাটি দেখেন, তাদের কষ্ট হচ্ছে, তাদের মত পিউর আওয়ামী লিগারের বদলে হাইব্রিডরা কেন লুট করবে। তারা শাহেদ, পাপিয়া বা জিকে শামিমের কোটি কোটি টাকা দেখে আফসোস করে, ইস একটা হাইব্রিড হয়ে এরা হাজার কোটি টাকা মেরে দিলো কিন্তু পিউর আওয়ামী লিগার হয়ে আমি মারতে পারলাম না ? এইটা তো অন্যায়। কিন্তু, ইন রিয়ালিটি শেখ হাসিনার একটা বড় দক্ষতা হলো, তিনি মেধার মূল্য দিয়েছেন, আওয়ামী লীগ নন আওয়ামী লীগ বাছেন নাই। প্রতিটা সেক্টরে যারাই লুট দখল তস্করযের সর্বোচ্চ দক্ষতা দেখিয়েছে জাতিয় সক্ষমতার বেজন্মা করন প্রক্রিয়াতে তিনি তাদের ক্ষমতায়ন করেছেন।
ভদ্রলোকের প্রফাইল রক্ষা করে, সফল ভাবে লুটের বা দখলের বা দুর্নীতির উদাহরন দেখাতে পারলে, আওয়ামি লিগের বাহিরের লোকদেরকেও তিনি দলীয় পদবি দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন। তাই, আওয়ামী লীগ দল হিসেবে সন্ত্রাসী এবং লুটেরা হয়ে উঠেনি। বরং সকল লুটেরা এবং সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগের মধ্যে আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে। ফলে অলিভার রায় এর তত্ত্ব মতে, এরা আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশকারী এই বক্তব্যটি সঠিক। যেটা ভুল সেটা হচ্ছে শেখ হাসিনা নিজেই এদেরকে আহ্বান জানিয়েছেন কারণ এদের দখল এবং লুটের উপরে ভিত্তি করেই বর্তমান সরকারের অবৈধ ক্ষমতা টিকে আছে।