বছর কয়েক আগে, আল্লামা শফি যখন বললেন, নাস্তিকদের কতল করা ওয়াজিব হয়ে গ্যাছে , আমি অনেক লেখা পড়া করে বিভিন্ন তাত্ত্বিক দের আলোচনা ঘেটে হাদিস এবং কোরানের রেফারেন্সে দিয়ে বল্লাম যে, আল্লামা শফি যা বলেছেন সেইটা ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভুল।
তখন আমার অনেক আলেম ঘরানার বন্ধু এসে বললেন, আল্লামা শফির বিরুদ্ধে বলার মত জ্ঞান আমার নাই।আল্লামা শফির মত, আলেমের মতের বিরুদ্ধে বলার মত এতো স্পর্ধা কিভাবে দেখাই ?
বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির অসততা চিহ্নিত করতে, আমি যখন বল্লাম যে, সাম্প্রদায়িকতা সমস্যা না, সমস্য সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষে । কিন্তু বাংলাদেশে আমরা সাম্প্রদায়িকতা এবং সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ মিলায় ফেলছি।
তখন পারভেজ আলম লিখলেন, আমি জানি বুঝি কম তবুও আমি , আমার জ্ঞান বুদ্ধির বোঝার সীমানার বাহিরের বিষয়ে কথা বলি। এবং সিরিয়াস তাত্ত্বিক বোঝাপড়া এবং গবেষণা বাদে আসমানি আলাপ দিয়েছি।
গত বছর করোনার কালে, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিত বন্দোপধ্যায় যখন বাংলাদেশে এসে বলে গেলেন টাকা ছাপিয়ে হলেও,
দরিদ্রদের সামাজিক সাপোর্ট দিতে হবে, সেইটা নিয়ে আমি বনিক বার্তায় একটা আর্টিকেল লিখলাম। তখন আমার কিছু অর্থনীতিবিদ বন্ধু/বান্ধবি আমার বিষয়ে লিখলেন অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করি। অর্থনীতি আমার মৌলিক ডিসিপ্লিন না ।
ইন্টেরেস্টিংলি অভিজিত বন্দোপধ্যায় দের প্রেস্ক্রিপ্সনের যে সমালোচনা আমি করেছিলাম, তার রেজাল্ট কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে যে ইনফ্লেশান সেইটা কিন্তু, স্বল্প পরিমান উৎপাদনের বিপরীতে অতিরিক্ত অর্থ ছাপানোর ফলেই হচ্ছে । এবং দরিদ্ররাই তাতে বেশী সাফার করছে। আমি নাসিম তালেবের রেফারেন্সে বলেছিলাম যে অভিজিৎদের স্কিন ইন দা গেম নাই। তারা এই এডভাইজ করে চলে যাবে কিন্তু দায় নিতে হবে আমাদের। বাংলাদেশে বিগত তিন মাসে মূল্যস্ফীতিতে যেইটা এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। ফলে দেখা যাচ্ছে, আমার অল্প বিদ্যাটি মোটেও ভয়ঙ্করি ছিলনা। বরং অভিজিতদের বেশী বিদ্যা ভয়ঙ্করি ছিল।
কিন্তু, পারভেজের আলাপের সুবাদেই একটা ডিফেন্স আমার দিতে হচ্ছে। কেন, কিসের ভিত্তিতে , আমি এত গুলো বিষয়ে কথা বলি?
প্রথমত, আমি পড়ি। আমি প্রতি দিন একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এমাউনট অফ পড়াশোনা করি। এবং ইউটিউব ভিডিও দেখি। কিন্তু আমার পরার ঢং টা আলাদা ।
আমি ইউজুয়ালি মৌলিক বই গুলোর চেয়ে বইয়ের ক্রিটিক বেশী পড়ি। মনে করুন, আমি মার্ক্সের দাস ক্যাপিটাল পড়ি নাই। কিন্তু দাস ক্যাপিটালের যে ক্রিটিক গুলো আছে, ক্রিটিকের যে উত্তর গুলো আছে সেই ডিবেট গুলো আমি অনেক খুটিয়ে খুটিয়ে পরেছি। শুধু তাই না, আমি কন্সটেন্টলি রিটেন নোট নেই। আমার নোট টেকিং এপ, এভারনোটে এই মুহূর্তে প্রায় ৫ হাজার রেফারেনস আছে বিবিধ বিষয়ে। এইটা একটা মাত্র এপ যেটা আমার কিনতে হইছে। ফ্রি ভার্সন দিয়ে হচ্ছিল না।
মৌলিক তত্ত্বে যা ইতোমধ্যে গৃহীত হয়ে গ্যাছে তাতে আমার আগ্রহ কম। আমার আগ্রহ থাকে কন্ট্রাডিক্সান গুলোতে ক্রিটিকাল প্রশ্ন গুলোতে। সেই গুলো নিয়ে ইউটিউবে ডিবেট দেখি। কমেন্ট পড়ি।অনেক সময়ে একটা ছোট্ট প্রশ্নে প্রায় সাত আটদিন কেটে যায়। এইটা একটা ডিফারেন্ট পদ্ধতি, যেইটার মুল উদ্দেশ্যে আমার নিজের মনের অস্বচ্ছতা দূর করা।
বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতার যে প্রশ্নে, পারভেজ আলম দাবী করলেন, আমি কিছু নাই পইড়া হুদাই আসমানি কায়দায় একটা কথা কইয়া দিলাম যার কোন বেইল নাই , এই ভাবনা গুলো ২০১৫ এর খুব সম্ভবত, অভিজিতের মৃত্যুর পরে। সেই সময়ে এই বিষয়ে, আমি একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এমাউন্ট অফ পড়াশোনা করেছি। এবং সেইটা নিয়ে ধর্ম, মানব ও সাম্প্রদায়িকতা এই ধরনের কোন টাইটেলে সিরিজ নোট লিখেছিলাম।কিন্তু তারপরে আমি মুভ অন করছি। কারণ আমি অনেক ডিসিপ্লিনে ঘোরা ফেরা করি।
বাংলাদেশের তাত্ত্বিক দের আলাপের কিছু ঢং আছে। তারা তাদের আলোচনাকে নির্দিষ্ট কিছু টার্ম এবং রেফারেন্স দিয়ে একাডেমাইজ করেন। এই গুলো ভারি শোনায়। সেই শব্দ গুলো ব্যবহার করলে, সেইটা একাডেমিক মনে হয়। আমি সচেতনে সেইটে এভয়েড করি।
কিন্তু, আমার জন্যে বিষয়টা খুবই আপত্তিকর, কেউ কোন আলোচনায়, আমার মুখে একটা বই সিল কইরা কইয়া দেয়, এইটা পইড়া আসেন । তারপরে আলাপ করেন। নইলে হুদাই টাইম নষ্ট কইরেন না।
কজ আপনি কোনমতেই জানেন না, যে আমি বইটা পড়ছি নাকি পড়ি নাই। এবং যদি নাউ পড়ে থাকি । আমি নিঃসন্দেহে যে আলাপ দিয়েছি সেইটার জন্যে , সেই বিষয়ের মুল প্রশ্ন গুলো এডরেস করে লেখাপড়া করে আলাপ দিয়েছি। সেই লেখাপড়াতে আপনার রেফারেন্স যদি গুরুত্বপূর্ণ হয় সেইটাও এড্রেস করা হয়েছে।
বাংলাদেশের সেকুলার ঘরানার চিন্তক দের বড় অংশের চিন্তা শুধু অস্বচ্ছ নয়, এই কন্ট্রাডিকশানটাকেই তারা মনে করেন যোগ্যতা বা জ্ঞান।সেই অসচ্ছতা তারা একাডেমিকতার মোড়কে ঢেকে রাখেন।
এর মুল কারণ, তারা যে ধারনা গুলো পলিটিকালি ডিফেন্ড করেন, সেই গুলো চরম ভাবে গোঁজামিলপূর্ণ , অস্বচ্ছ এবং কন্ট্রাডিকশনে ভরা। ফলে, যার চিন্তা যত কন্ট্রাডিকশনে পূর্ণ এবং সেই কন্ট্রাডিকশান যত বেশী গোঁজামিল দিয়ে যে ব্যখা করতে পারবেন – তিনি সেকুলার ঘরানার তত বড় আলেম।
কিন্তু আমরা যারা ওয়ার্কিং ক্লাস মানুষ, আমাদের বিশ্ব অভিজ্ঞতায় অস্বচ্ছতা সবচয়ে বড় পাপ। ফলে, একজন একজন ওয়ার্কিং ক্লাস মানুষ হয়ে যখন আমাকে যখন চিন্তার কাজ করতে হয় , আমি যে প্রশ্নেই হাত দেই সেই প্রশ্নেই দেখি, গোঁজামিল, অস্বচ্ছতা এবং কন্ট্রাডিকশান।
ফলে সেইটা আমার জায়গা থেকে ক্লিয়ার করার চেষ্টা করি।
কিন্তু, খুব সরল গদ্যেও যদি বলে থাকি, বি সিউর এই টার পেছনে কপিয়াস এমাউন্ট অফ স্টাডি আছে।
কিন্তু একটা জিনিষ আমার নাই, সেইটা হচ্ছে আমার কোন চিন্তার সাথে কোন ইগো এটাচ করা নাই। আমি অনেক কিছুই ভুল বলি। এবং কেউ যদি আমাকে ভুল ধরায় দেয়, আমি হ্যাপি টু বি কারেক্টেড। কারণ এইটা আমাকে এনরিচ করতেছে।
আমার সব চেয়ে বড় প্রাইড হচ্ছে ফেসবুকের বন্ধু এবং অনুসরণকারিরা যারা অনেকেই আমার থেকে অনেক জ্ঞানী। আমি কোন ভুল করলেই তারা আমাকে পয়েন্ট আউন্ট করেন। ফলে, তাদের কারণে আমি ক্রমশ শুদ্ধ হতে থাকি।
আমি কিন্তু আমার বায়োলিজিকাল এনিম্যালটাকে অস্বীকার করিনা। আমি জানি, ইভলুসানের যে প্রসেসে আমার বায়োলজিক্যাল মেশিন তৈরি হয়েছে সে বায়াস ছাড়া থাকতে পারবেনা তার গ্রুপ থিঙ্কিং থাকবে।
ফলে আমি অনেক সময়ে একটা ভেন্টেজ পয়েন্ট থেকে এই বায়োলজিকাল জিয়া হাসানকে দেখি, সে কি কি কন্ট্রাডিকশান শো করতেছে। এবং আমি তার মধ্যে অনেক কন্ট্রাকডিকশান পাই। সেই সব বিষয়ে তাকে আমি শুদ্ধ হইতে বলি। মাঝে মাঝে সে পারে, মাঝে মাঝে পারেনা। ফলে তার সাথে আমার অনেক বোঝাপড়া বাকি আছে।
আমাদের বয়সে এসে, আমি বেশী পরেছি, তুমি কম পরেছো এই আলোচনা গুলো মারাত্মক বিরক্তিকর। ফলে বন্ধুদের বিরক্তি উৎপাদনের রিস্কটা মাথায় রেখেই, এক বারের মত একটু বলে যাচ্ছি, আমার নন একাডেমিক টোনে যে আলাপ, সেইটা আপনি গ্রহণ করেন, বর্জন করেন, বিতর্ক করেন, বা এভয়েড করেন সেইটা আপনার ইচ্ছা – কিন্তু কোন কিছুই আসমানি না। আমার পরিবারের অনেক স্যাক্রিফাইসের বিনিময়ে এই ধারনা গুলো নিয়ে আলাপে আসি।
প্লিজ নেভার আমার মুখের উপরে একটা বই তুইলা বলবেন না, এইটা পড়ে আসেন, তারপরে আলাপ হবে। আমি যদি একটা বিষয় বলে থাকি, বি সিউর আমি এইটা হোম ওয়ার্ক করে বলি।
প্লিজ, কেউ এখানে পারভেজকে ব্যক্তি আক্রমণ করবেন না। এবং আমি এই আলোচনাটার কোন কাউন্টার উত্তর দিবো না।