বন্ধুর সাথে কনভারসেশান স্মৃতি

কিছু দিন আগে আমার একজন বন্ধুর সাথে কনভারসেশান স্মৃতি থেকে লিখছি।

-আছেন?

-আছি।

-কিছু দিন আগে আপনি বলেছিলেন, বাংলাদেশে একটা অর্থনৈতিক ক্রাইসিস আসন্ন। কিন্তু এখন তো দেখতে পাচ্ছি , সব কিছুই ভালো চলছে। রেমিটেন্স বাড়ছে রিজার্ভ বাড়ছে। কোন তো ক্রাইসিস দেখছিনা। যা জানেন না সেইটা নিয়ে কথা বলেন কেন ?

– বাংলাদেশে করোনাকালে, দারিদ্রের হার ২১.৮% থেকে ৪২% এ পৌঁছেছে। প্রায় চার কোটি নিম্ন মধ্যবিত্ত দারিদ্র সীমার নীচে চলে গ্যাছে।  বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের মোট ঋণ প্রায় ১১ লক্ষ কোটি টাকা কিন্তু,অর্থবছর ১৯/১০ এ ব্যাংকিং সিস্টেমে এক বছরে মোট ৫ লক্ষ কোটি টাকা জোগান দিয়েছে সরকার রেপো এবং অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট (এএলএস)  খাতে।  বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২১ শতাংশে নেমে এসেছে। যেখানে কিছু বছর আগে ২১% গ্রোথ ছিল।

এইটা আমার কাছে ক্রাইসিস। আপনি ক্রাইসিস মনে করেন না, মিডিয়া ক্রাইসিস  মনে করে না, এইটা নিয়ে আমার কিছু করার নাই।

এখন ক্রাইসিস স্বীকার করলেই ক্রাইসিস, স্বীকার না করলে ক্রাইসিস না। আমার হিসেবে

আমরা এখুনি ক্রাইসিসের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। ৪ কোটি মানুষ  মধ্যবিত্ত  থেকে দরিদ্র  হয়েছে এইটা যদি ক্রাইসিস না হয়, আমি জানিনা ক্রাইসিস কাকে বলে। 

– ধুর মিয়া । আপনি শুধু  বাল ফালান। আপনি বলছেন, না খেতে পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকবে। মানুষ বিক্ষোভ করবে ? সেই ক্রাইসিস  কই ?

-ওয়েল আমি কখনই বলি নাই, না খেতে পেয়ে  রাস্তায় রাস্তায় লাশ পরে থাকবে।  এইটা আপনার ইমেজিনেশান যে আমি বলেছি। ইন রিয়ালিটি, বিগত ৩০ বছরে সার এবং কৃষি প্রযুক্তি এমন উন্নতি হয়েছে। সোমালিয়া বা ইয়েমেনের মত যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশ বাদে পৃথিবীর কোন দেশেই মানুষ না খেয়ে নেই।

বাংলাদেশে কোন ওপেন মিডিয়া নাই। ফলে সমাজে যদি কোন ক্রাইসিস থাকে সেইটা মিডিয়াতে উঠে আসার কোন সুযোগ নাই।

আর মানুষ রাস্তায় কেন নেমে আসে না। এইটা একটা পলিটিকাল মোবিলাইজেসান, লিডারশীপ  এবং লজিস্টিকস ইস্যু।বাংলাদেশ রাষ্ট্র তার সকল রিসোর্স জনগণের বিক্ষোভ দমনে ব্যায় করেছে। এই দিক থেকে তারা ইজরায়েল থেকেও বেশি ইফেক্টিভ। ফলে কেন রাস্তায় মানুষ নেমে আসে না। এইটাও কোন ইনডিকেটর না। শেয়ার বাজারের ক্রাইসিসে ৩০ লক্ষ মানুষ তাদের সর্বস্ব হারিয়েছে। কিন্তু কেউ রাস্তায় নেমে আসে নাই। বা আসতে পারে নাই।

-ধুর মিয়াঁ। আপনি খালি বাল ছাল বলেন। যা জানেন না, তা নিয়ে আলাপ দিয়েন না। আপনাকে আমি আজকেই আন ফলো  করলাম।

–  ওয়েল আপনি যে আমাকে আনফলো করেছেন এই জন্যে আমি স্যাড। কিন্তু আমি তো আপনাকে জোর করি নাই, আমাকে ফলো করতে।

– ধুর মিয়াঁ। যা জানেন না, সেইটা নিয়ে জ্ঞান দিয়েন না। ফুটেন।

-ধন্যবাদ।

সামথিং লাইক দিস।

এক দম রিয়েল লাইফ কনভারসেশান।

কিন্তু কেন এই আলাপ টা এখন দিলাম ?

অনেকের মনে কিছু রেফারেন্স আছে। তাদের কাছে ক্রাইসিস হলো রাস্তায় রাস্তায় লাশ পরে থাকা। তাদের কাছে ক্রাইসিস হলো, একটা দুর্ভিক্ষ। তাদের কাছে ক্রাইসিস একটা গন বিক্ষোভ। যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ না খেতে পেয়ে, বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স, অথবা সোনার গা হোটেল অথবা সংসদে ভাংচুর করছে।

টু বি ফেয়ার, আমি কখনই মনে করি নাই , বা বলি নাই বাংলাদেশে যখন ক্রাইসিস হবে, ক্রাইসিসের রুপ টা এই রকম হবে ।

‘আমার হারিয়ে যাওয়া বন্ধুকে আমি যা বলেছি, সেইটার আলোকেই বলছি আমি ক্রাইসিস বলতে দেখি, একটা সাপ্রেসড সোশাল আনরেসট।

কারণ সোশাল মবিলাইজেশান আমি আগেই যা লিখেছি একটা পলিটিকাল লজিস্টিকস ইস্যু। আমাদের রাষ্ট্র ভায়োলেন্সের যে আনলিমিটেড ক্যাপিসিটি রাখে তাতে আমি দেখি যে কোন ধরনের সোশাল আনরেস্ট কে ম্যানেজ করার ক্ষমতা, এই  রাষ্ট্র রাখে। এবং রাষ্ট্র যে এই আনরেস্ট কে খুব ভায়োলেনট ভাবে দমনের  ক্ষমতা রাখে এইটা পলিটি জানে।  ফলে, পলিটি নিজের থেকেই নিজেকে সাপ্রেস করে। এইটা অনেক টা মিডিয়ার সেলফ সেন্সরশিপের মত। 

আমি ক্রাইসিস বলতে মনে করি একটা ৩০% থেকে ৬০% ইনফ্লেশান। অনেকেই ইনফ্লেশেনার কথা বলতে জিম্বাবুয়ের রেফারেন্স নিয়ে আসেন। একটা মুরগির দাম এক কোটি টাকা হওয়ার কথা ভাবেন।

আমাদের ম্যাক্রো ইকোনিমিক স্টাবিলিটি যেখানে তাতে   আমি কোন মতেই সেই ধরনের হাইপার ইনফ্লেশান দেখিনা। কিন্তু আমি দেখি একটা ১৫% থেকে ৩০% বা এমন কি ৬০%  ইনফ্লেশান যেইটা এই রাষ্ট্র চাপা দিতে পারে।  যেইটা রাষ্ট্র ম্যানেজ করে, ৭% হারে দেখায় যেতে  পারে।

এইটা আমার কাছে ক্রাইসিস ।

কেন ? কারণএকটা রাষ্ট্র যার এস্পিরেশান মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া। তার জন্যে এইটা ক্রাইসিস।

কিন্তু এইটা জানার কোন উপায় নাই।

আমাদের অর্থনীতিক সংস্থা গুলো আবাল। আমি একটা সদ্য নির্মিত আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে অনেক ভাবে বুঝাইছলাম, ইনফ্লেশান মাপেন। এইটা আপনাদেরকে মিডিয়া এক্সপোজার ও দিবে।  এইটা আগামী কয়েক বছরে প্রধান ইস্যু হবে। সেই খানে এক আতেল ইকনমিস্ট বিভিন্ন ভাবে, আনু স্যার আকবর আলি খান ইত্যাদি উদাহরণ দিয়ে আমাকে  কনভিন্স করার চেষ্টা  করলো কেন তারা এইটা করতে পারবেনা। আমি আর কি করতে পারি। এক সময়ে চুপ মেরে গেলাম।

যাক গিয়ে বোটম লাইন হইলো, ক্যাব বাদে আর কোন সংস্থা ইনফ্লেশান মাপতেছেনা।এবং সাম হাউ ক্যাবকে আমার খুব ডিপেন্ডেবল মনে হয় না।

ফলে, ইলফেশান যদি ৪০% ও হয়  , কোন ইকন্মইস্টের সুযোগ নাই বলার যে, সরকারের ভাষ্য ৭% ডাটা টা ভুল বলার। কারণ।  কেউ আসলে এই ইনফ্লেশান মাপ্তেছেনা। যেইটা মাপা খুব সহজ কাজ।

মুল প্রব্লেম খুব ফান্ডামেনটাল বিষয় গুলোতে বাংলাদেশে মৌলিক রিসার্চ হচ্ছে না।

ফলে ইনফ্লেশান যদি ৫০% এও পৌছায় এইটা জানার উপায় নাই। এবং আমরা যারা বর্তমান পলিটিকাল, ইকনমিক এবং সোশাল  ন্যারেটিভকে প্রশ্ন করি  আমাদেরকে সোশাল মিডিয়াতে ভদ্র গালি গালাজ সহ্য করে যেতে হবে।

আমি এই মুহূর্তে জার্মানিতে আছি। জার্মানিতে একজন  চাকুরীহীন পরিবার কে মাসে,  ২ লক্ষ টাকার উপরে সামাজিক সাপোর্ট দেয় সরকার। কিন্তু তবুও আমি যখন পত্রিকা পড়ি বা নিউজ পেপার দেখি আমি দেখি তারা খুব চিন্তিত , জার্মান ইকনমি ক্রাইসিসের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।

বিগত বছর গুলোতে অসাধারণ অবদান রাখার পরেও, এঞ্জেলা মারকেলের সরকার আগামী সেপ্টেম্বারের ইলেকশানে পতন হতে পারে। কারণ মারকেল করোনার কারণে আর্থিক বিপর্যয়কে   সঠিক ভাবে হ্যান্ডেল করতে পারে নাই। 

কিন্তু বাংলাদেশে কোন ক্রাইসিস নাই। বাংলাদেশ একটি উদিত সূর্যের দেশ যেখানে কখনই রাত হয় না। এই রিয়ালিটি বাংলাদেশ ধরে রাখতে পারে কারণ বাংলাদেশ সব মত প্রকাশের পথ বন্ধ করা হয়েছে। এবং আমরা মিডিয়াতে শুধু মাত্র বিজয়ী দের বক্তব্য দেখি।

এইটাকে বলা হয় সারভাইভারশিপ বায়াস।

অর্থাৎ একটি বিষয়ে যারা বিজয়ী হয়েছে তাদের বক্তব্য দেখে আমরা ভাবি সবার অবস্থা এদের মতই।

কিন্তু রিয়ালিটি অনেক আলাদা। 

এইটা একটা কমপ্লেক্স আলোচনা যার ফাইনাল বক্তব্য হচ্ছে, আমি কোন ক্রাইসিসের অপেক্ষা করছিনা। আমরা একটা ক্রাইসিসের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি।

জাস্ট এইটাকে স্বীকার করা হচ্ছেনা। এবং ক্রাইসিসের ফল আউট গুলো জনগণের মধ্যে ডিস্ট্রিবিউট করা হচ্ছে।

বাই দা ওয়ে আমাকে আনফলো করা  বন্ধু, আপনি কি কোন শেয়ার বা এল্গরিদমের গণ্ডগোলের কারণে  এই স্ট্যাটাস টি দেখতে পেয়েছেন ?

আর ইউ স্টিল হ্যাভিং ফান ?

Leave a Reply

Your email address will not be published.