ডিজিটাল ডিভাইড- ডিজিটাল বাংলাদেশ স্টাইল

আজকে থেকে ৮/১০ বছর আগে, একটা আলোচনা খুব গুরুত্ব পাইছিলো, সেইটা হইলো ডিজিটাল ডিভাইড।

আমরা উন্নয়নশীল এবং তৃতীয় বিশ্বের নাগরিকেরা, বলাবলি শুরু করছিলাম। ইনফরমেশান টেকনোলজি তে কোটি কোটি ডলার ইনভেস্টমেন্ট করে, সব টেকনলজিকাল সুবিধা গুলো পেয়ে যাচ্ছে পশ্চিমের লোক আর দেশের কিছু সুবিধা ভোগী জনগোষ্ঠী- মুল জনগোষ্ঠী এই সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । যে টেকনোলজি পাচ্ছে, যে পাচ্ছেনা-তাদের মধ্যে বিশাল গ্যাপ হয়ে যাচ্ছে।একে বলা হইত ডিজিটাল ডিভাইড।

সেই আলোচনা এখন আর হয় না।

কারন, গত ১০ বছরে টেকনোলজিতে ইনভেশান গুলোর মূল ফোকাস ছিল, টেকনোলজি কে কম খরছে ছড়িয়ে দেয়া, সবার কাছে সহজ করে দেয়া। এই যে আমরা ফেসবুকইউজ করি। এইটা যে কতো কমপ্লিকেটেড একটা পোর্টাল আর এর পেছনে কতো কোটি কোটি ডলার এর সার্ভার এর এপলিকেশান প্রসেসিং চলতাছে তা আমরা চিন্তাও করতে পারবোনা। একই আলোচনা গুগলের জন্যেও প্রযোজ্য। কিন্তু, আপনি যে গুগল বা জিমেইল বা ফেসবুক ব্যবহার করেন, আমেরিকার নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জেএর একজন এনালিস্ট বা নীল নদের পারে বসে একজন আরব একই টেকনোলজি ইউজ করে।

এই ডিভাইড টা পুরন করছে তিন টা জিনিস, সেইটা হইলো ওয়াইম্যাক্স বা অন্যান্য টেকনোলজির কারনে ব্রডব্যান্ড এবং নেরো ব্যান্ড ইন্টারনেট এর দাম কমে আসা , বেসিক আই টি লিটারেসি এবং স্বল্প মুল্যে ট্যাবলেট বা কম্পিউটার ।

ইনফর্মেশন টেকনোলজির এই বিস্তৃতি দেশের উন্নয়ন এবং বিশ্বের সাথে কানেক্টিভিটির জন্যে এতো গুরুত্বপূর্ণ যে, দেশে দেশে বিভিন্ন ক্যাপিটালিস্ট সরকাররা যারা প্রাইভেট সেক্টরে ট্যাক্স এর পয়সায় বিনিয়োগ করাকে কবিরা গুনা মনে করে, তারাও নেটওয়ার্ক এর ব্যাকবোন তৈরি করতে পয়সা খাটাইছে, সব কিছু প্রাইভেট সেক্টর এর হাতে ছেড়ে দেয় নাই এবং স্কুলে কলেজে খুবি স্বল্প মুল্যে কম্পিউটার বা ট্যাবলেট দিছে।

আইটি কে এত গুরুত্ব দেয়ার অনেক গুলো কারনের মধ্যে একটা মুল কারন হল, নতুন মডেলের বিজনেস কে এনাবল করা।

সরকাররা দেখতে পাইছে, যে ইনফর্মেশন টেকনোলজি ট্র্যাডিশনাল বিজনেস মডেল এ ব্যাপক ডিজরাপশান নিয়ে আসছে, যা জনগণের জন্যে মঙ্গলজনক। ইনফর্মেশন টেকনোলজির কারনে, যুগে যুগে সিণ্ডিকেট করে আরামে ব্যবসা করা বড় বড় কর্পোরেটে প্রতিষ্ঠান, তরুন প্রজন্মের ছোট ছোট কম্পানির কাছে মার খেয়ে যায় এবং সিণ্ডিকেট ভেঙ্গে পড়ে এবং নতুন বিজনেস মডেল দাড়ায় যা অনেক ডিসেন্ট্রালাইযড এবং ছোট। এই বিজনেস গুলোতে অনেক বেশী এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন হয় এবং নতুন নতুন প্রডাক্ট আর সার্ভিস দাড়ায়। তাছাড়া এক্সিজিস্টিং বিজনেস এবং সরকারি সিস্টেমে অনলাইন টেন্ডারিং এবং অন্যান্য এপ্লিকেশান এর মাধ্যমে দূর্নীতি কে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়, বিজনেস গতিশিল, কাজ সহজ হয়, ভাল ডিসিসান নেয়া যায় -এবং আরো অজস্র অজস্র সামাজিক এবং বিজনেস এপ্লিকেশান দাড়ায় যা এই নোট এ বলে শেষ করে যাবেনা।

মূল বিষয় টা হচ্ছে, ইনোভেশান কে একটা বড় কর্পোরেটে প্রতিষ্ঠান এর পয়সা কামানোর ধান্দায় রিসার্চ এর মধ্যে সীমাবধ্য না রেখে জনগণ এর কাছে নিয়ে যাওয়া যাতে জনগন নিজেই নিজেদের স্রিস্টিশীলতার মাধমে ট্রাডিশনাল বিজনেস কে চ্যালেঞ্জ করতে পারে ।

একটা কল্যানমুখি সরকার এর কাছে বিষয় টা, রাস্তা ঘাট করার মতই ইম্পর্টেন্ট। এবং গত দশ বছরে, সারা বিশ্বের প্রতিটা দেশে, সরকার নিজেই ব্রডব্যান্ড সৃষ্টি করা, আই টি ইঙ্কুবেটার সৃষ্টি করা সহ অনেক কাজ করছে। এর রেজাল্ট বিশ্ব ইতিমধ্যেই দেখতে পাচ্ছে। সারা পৃথিবীতে এখন একটা টেকনোলজিকাল ইনভেশান এর উৎসব চলছে। যা প্রতিটা দেশের জন্যে নিজস্ব। এখন মালদ্বীপ এর একজন হোটেল ব্যবসায়ির হোটেলে অনলাইনে বুকিং নিচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার একজন পর্যটক ঘরে বসেই, পেমেন্ট করছে পেপল এর মাধ্যমে, যা ওই ব্যবসায়ী সাথে সাথেই খরছ করতে পারছে। আলিবাবার মত কোম্পানির মাধ্যমে , নিজেদের হাত এর কাজ এর কুটিরশিল্প সেল করছে, কেনিয়ার কোন উদ্যোক্তা, কোরিয়ার কোন হোলসেলার এর কাছে।

এর বাহিরে আর একটা যেইটা হইছে, সেইটা হইলো, এপল আই টিউন, গুগল প্লের মত বেশ কিছু ব্যবসার মডেল দাড়াইছে, যার ফলে বিশ্বের যে কোন দেশের জনগণ অন্য দেশের জনগণ কে তাদের আই টি প্রডাক্ট আর সার্ভিস সেল্ করতে পারতাছে।

ইন্টারনেট এর জন্মের শুরুর বছর গুলোতে, এই সুযোগ টা ছিলো তাত্ত্বিক। তত্তগত ভাবে সম্ভব হইলেও, বাস্তবিক ক্ষেত্রে মার্কিন এবং ইউরোপিয়ান কর্পোরেটদের ব্রান্ডিং বা

ইনভেসট্মেন্ট এর মুখে আর একটা একটা তৃতীয় বিশ্ব বা উন্নয়নশীল দেশের উদ্যোগতার পক্ষে, সারা বিশ্বের সামনে কোন প্রডাক্ট নিয়ে এসে সেল করা বাস্তবিক ভাবে সমভব ছিলনা। কিন্তু, এপেল এর আই টিউন্স এবং গুগলের প্লে তে এন্ড্রোয়েড এর জন্যে এপ্লিকেশান বা গেমেস বা সার্ভিস আনার সিস্টেম যখন আসলো তখন এমন একটা ইনভেশান প্লাটফর্ম হলো, যার মাধ্যমে এখন সত্যেই সম্ভব একজন বাংলাদেশি সফটওয়্যার উদ্যোক্তার পক্ষে তার ইনভেশান দিয়ে একটা প্রডাক্ট সৃষ্টি করা যা সে সারা বিশ্বের ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে পারবে এবং সেল করতে পারবে। এই প্লাটফরম গুলো ব্যবহার করে সারা বিশ্বে এখন লক্ষ লক্ষ ডেভেলপার তার প্রোগ্রাম সেল করছে সারা বিশ্বের কাছে।

এখন ডিজিটাল ডিভাইড নিয়ে আর আলোচনা হয় না। কারণ,টেকনিকালই দেখতে গেলে ডিজিটাল ডিভাইডটা এক দিক থেকে দূর হয়ে গেছে। যারা এই ডিভাইডটা দূর করতে পারে নাই, তারা নিজেদের অদক্ষতার জন্যে এইটা করতে ব্যর্থ হইছে।

বিশ্বের সব দেশ যেই খানে এভেইলেবল সুযোগ সদ্যব্যবহার করে আগাইতে পারতাছে তখন যে নিজের গেঞ্জাম এবং অদক্ষতার কারনে পারতাছে না তারে নিয়া বাকি বিশ্বের মাথা ব্যাথা নাই। বলা বাহুল্য, আমরা নিজের অদক্ষতা এবং অযোগ্যতার জন্যে, এই ডিজিটাল ডিভাইড দূর করতে ব্যর্থ রাষ্ট্র গুলোর মধ্যে সামনের সারিতে । সারা পৃথিবীতে যেই দেশ গুলো সব চেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে, আমরা তাদের মধ্যে প্রথম ৫ জনের মধ্যে আছি।

আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে যে আই টি ইনফ্রাস্ত্রাকচার গড়া দরকার ছিলো, তার কোন কাজই এখনও হয়নি।

সরকারি লোক বা আই টি প্রডাক্ট যারা সেল করেন, তারা হই হই করা উঠবেন!!

কি বলে!! কি বলে!!! আমাদের কত কিছু হইসে ? আমাদের আই টি পার্ক আছে(যে পার্ক এ গরু চরানো হয়), আমাদের দেশের এতো লক্ষ পিসি সেল হয়, আমাদের কোন কাস্টম ডিউটি নাই, এখন দেশে বাংলালায়ন আর কিউবি আছে আর ডাচ বাংলার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে অনলাইন ট্রাঞ্জেক্সান করা যায়।

কিন্তু ডিটাইলসে এ গিয়ে দেখবেন, সব ফাকি। আমাদের এখনো ন্যাশনাল পেমেন্ট গেটওয়ে হয় নাই।

ছাড়া ছাড়া ভাবে যে গেটওয়ে গুলো হইছে, সেই গুলো ইন্টিগ্রেটেড না। এক ব্যাঙ্ক এর কার্ড আরেক ব্যাঙ্কে নেয় না। ফলে যেইটা হইছে, আপনি কোন প্রডাক্ট অনলাইনে এ সেল করতে পারবেন না কারন টাকা ট্রান্সফার এর মেকানিজম নাই বলে । এবং এই কারনে, এখনও কোন অনলাইন মার্কেট প্লেস হচ্ছেনা।

চিন্তা করে দেখেন, আপনি বাজারে গেলেন। সেই খানে দোকানে অনেক জিনিষ। কিন্তু, কোন দোকানদার আপনার টাকা নিতে পারেনা। তাই, আপনি শুধু উইন্ডো শপিং করতে পারবেন,কিছু কিনতে পারবেন না।

রিয়ালিস্টিকলি তাই, এখন জে অন লাইন মার্কেট টা আছে তা খুব নিশে-খুব ছোট এবং খূবি এলিট একটা গ্রুপ এর জন্যে করা, যারা যে কোন ভাবে এই বাধা টা অতিক্রম করতে পারতাছে। দেশের সর্ব সাধারনের জন্যে কোন ভার্চুয়াল মার্কেট নাই। অথচ, ইন্ডিয়া কেন, পাকিস্তান বা কেনিয়া বা শ্রীলঙ্কা তেও এই মার্কেট গুলো প্রায় ১০ বছর আগে দাড়ায় গেছে।

আর আমরা কেন ধরে নিচ্ছি, ইন্টারনেটে প্রডাক্ট কেনা বেচা করতে হলে ক্রেডিট কার্ড ইউয করতে হবে। এই দেশের মানুষ কত জন মানুষ ক্রেডিট কার্ড ইউজ করে ? আমাদের মোবাইল ভিত্তিক ট্রানজেকশান সিস্টেম টার কি হলো ? যেইটা সারা দেশের সব মানুষের জন্যে এভাইলেবলে।

এইটা তো আফ্রিকাতে অনেক দেশে হইছে। বাংলাদেশেও ঠিক এই মডেল এ আগাতে হবে যদি আমরা সারা দেশে, ভার্চুয়াল মার্কেট প্লেস সৃষ্টি করতে চাই। আমাদের সলিউশান আমাদের কে আমাদের নিজস্ব মডেল এ দাড়া করাতে হবে, ওয়েস্টার্ন মডেল এর ক্রেডিট কার্ড সিস্টেমে আমরা কোথাও পৌঁছুতে পারবোনা।

এতো গেল, পেমেন্ট সিস্টেম। আমাদের ভাল ডেভেলপার কই। ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সালের দিকে এপ্টেক, এন আই টি সহ হাজার হাজার ইন্ডিয়ান প্রতিষ্ঠান শতাব্দীর একটা সেরা প্রতারনা করে গেল, প্রোগ্রামিং শিখিয়ে দেশে আইটি বিপ্লব এনে বিদেশে চাকুরির যোগ্যতা তৈরি করে দেবার নাম করে।

লক্ষ লক্ষ ছেলে, বাপ এর জমি জমা মা এর গয়না সেল করে সেই আমলে ৭০ হাজার, ৮০ হাজার টাকা খরচ করে শিখল এম এস অফিস প্যাকেজ, কিছু নেটওয়ার্কিং আর অল্প কিছু বাইনারি লজিক। সেই ধান্দায় ইন্দিয়ান কোম্পানি গুলো হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে দেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলে গ্যেছে, একটা জেনারেশানের স্বপ্ন ধ্বংস করে। কিন্তু ছেলে গুলোর পারেন্টস যখন দেখলো তার ইনভেস্টমেন্ট টা সম্পূর্ণ গোল্লায় গ্যেছে তখন পুরো দেশেই একটা ধারনা আসে, আই টি পরে কিছু হবেনা। তার দায় এখনও আমরা টানছি।

সেই সময় ও আওয়ামী লীগ ছিল ক্ষমতায়। আওয়ামী লীগ এর ক্ষমতার সময়ে সব সময়ের প্রতারক দের জন্যে উর্বর ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়ে থাকে। স্বাধীনতার পর দেশের জনগোষ্ঠীর সাথে শ্রেষ্ঠ পাচটা প্রতারনার মধ্যে, এই প্রতারনা টাও স্থান পাবে।

এখন অল্প কিছু ডেভেলপার বাদ দিলে, আমাদের আপলিকেশান ডেভেলপারদের মান যে কী দুর্বল টা তারা নিজেরাও যানে না ।

কারণ, লারয সিস্টেমে কোঅপারেশান করতে তাদের এক্সপেরিয়েনস নাই। এবং ব্যাক ডেটেড সিলেবাসে এখনও তাদের ইউনিভারসিটি তে বাইনারি লজিক টাই সেখান হয়। এপ্লিকেশান ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে যে আইডিয়া পেতে হয় সব তাকে নিজে নিজে জানতে হয়। ফলে রিয়াল ওয়ার্ল্ড এপ্লিকেসান ডেভেলপমেন্ট এ সময়ের সাথে যে পরিবর্তন তা তাদের জানার সুযোগ থাকে খুব কম। ফলে বুয়েট বা নাম করা কিছু ইউনিভারসিটির কম্পিউটার সাইন্স ডিপার্টমেন্ট এর স্টুডেন্ট বাদে বাকিরা এপ্লিকেশান ডেভেলপমেন্ট এবং ক্রিয়েটিভিটি সব দিক থেকেই পিছিয়ে আছে।

ব্রডব্যান্ড সার্ভিস এর প্রাইস এখনো বিশ্বের অন্যতম হাইয়েস্ট ।

ইউ কে তে , ১০০০ টাকা দিয়ে, ১০ মেগাবিট, আনলিমিটেড লাইন পাওয়া যায়। কিন্তু, তাদের থেকে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, যেখানে লাস্ট মাইল এর ইনভেসট্মেন্ট অনেক কম হওয়া সত্ত্বেও আমাদে দেশে ১ গিগা ডাটা পেতে ৪০০ টাকা খরচ করতে হয় ঢাকা তেই। আর দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তো এখনো গ্রামীন এর এজ ভরসা। সোনার ডিম মেরে, তার পেট থেকে ডিম বের করে কয় এক হাজার কোটি টাকা বান্ডওইথ ফি কামানোর ধান্দায় ৩জি আটকে আছে। এর এক দিকে আছে সরকার এর লোভ এবং আরেক দিকে ইনভেসট্মেন্ট এর গতি, প্রকৃতি এবং কার্যকরণ বুঝতে সম্পূর্ণ অক্ষম একটা প্রেশার গ্রুপ এর প্রেশার।

ফলে কি হইছে ? সব নেটওয়ার্ক এর ৩জি বিনিয়োগ ঝুলে গ্যেছে। প্রতিদিন যাচ্ছে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছে, জনগণ সুযোগ হারাচ্ছে, ইনোভেশান থমকে যাচ্ছে। আসল লুজার, আমরা জনগণ।

জনগণের হাতে সস্তায় ট্যাবলেট বা ল্যাপটপ তুলে দেয়ার প্রোজেক্ট বিশ্বের অনেক দেশে আছে।

এর জন্যে, এমনকি বড় বড় কম্পানিরা যারা অনেক টাকা কামায় ফেলছে, যেমন বিল গেটস ফাউন্ডেসান বা আরও সব কোম্পানি ফ্রী ও দেয়। এই সব ফ্রি দরকার নাই। ইন্ডিয়া তার নিজের ট্যাবলেট করছে আকাশ। যার দাম ৫০০০ রুপি। এই ট্যাবলেট তারা গ্রাম এ গঞ্জে বাচ্চা দের কে ফ্রী দিচ্ছে। আর আমাদের দেশে দোয়েল এর নামে হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা চুরি হইছে। বলে হইছে, আমরা একটা নিজেরা বানাবো। কিন্তু করা হইছে এসেম্বাল। এবং এই দোয়েল এর ব্যবহার করার কয় এক দিন পরে, ভেঙ্গে পরে যাচ্ছে এবং এর থেকে সস্তায় চায়না থেকে ল্যাপটপ এনে সেল করা যাচ্ছে। ফলে মানুষ কেন দোয়েল কিনবে ? আর এই দোয়েল দরিদ্রেদের ফ্রি দেয়ার কি হইলো ?

আর দোয়েল প্রজেক্ট এ যে কি ভয়াবহ দুর্নীতি হইছে, তা নিয়ে, ডাক প্রতিমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে বিদেশি কোম্পানির সাথে দুর্নীতি নিয়া – বিদেশি একাউন্ট এর চেক নাম্বার , একাউন্ট ডিটেইলস সহ একটা প্রতিবেদন দেখছিলাম, সমকাল এ মাস ছয় এক আগে । আমার জীবনের সব চেয়ে বড় বিস্ময়ের একটা হইলো , সেই প্রতিবেদনটা কোন পেপার ফলো আপ করে নাই। এবং প্রথম আলো তে নিউজ না হইলে নিউয যে নিউয হয়না তার আরেকটা প্রমান পাইছিলাম। কিন্তু সে অন্য আলোচনা।

জানিনা এই সব কেন বলছি।

আসলে, সকালে উঠে ছেলের সাথে বসে এন্ড্রোয়েড এ এপস ডাউনলোড করে গেম খেলছিলাম। মনে হলো, আহারে আমাদের দেশের ছেলেরা কেন পারেনা? কেমনে আমরা এই এপস মার্কেট এর এতো বড় সুযোগ টা মিস করলাম। এতো বছরে ভালো একটা বাংলায় গেম খেললাম না। থাকলে, আমি নিজে পয়সা দিয়ে কিনতাম। কিন্তু পয়সা দিব কেমনে ?পয়সা দেয়ার সিস্টেম টাই তো সরকার বানাতে পারে নাই।

তো যারা গেম বানাবে, সেল করবে কোথায় ? মার্কেট আছে। কিন্তু সেল করার মার্কেটপ্লেস টাই তো নাই। তো হবে কেমনে ?

এই যে ডিজিটাল ডিভাইড, তাতে তৃতীয় বিশ্বের সব দেশে মধ্যেও আমরা পিছিয়ে। শুধু মাত্র নেপাল কি বার্মা থেকে একটু আগানো।

সরকারি খাতে আই টি সেক্টরে গত দশ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট হইছে। কিন্তু সব হইছে পয়সা খাওয়ার ধান্দায়। মানুষের কাছে কোন সুযোগ সুবিধা পৌছায় নাই।

আসলে যখন একটা সিস্টেম গোড়া থেকে পঁচে যায়, তখন সে সিস্টেম যাই হাত দেয় তাই পঁচে যায়।

আমাদের রাষ্ট্র যন্ত্র একটা পঁচে যাওয়া যন্ত্র-গান্ধা। আমরা সেই পঁচে যাওয়া গন্ধের মধ্যে কোন মতো নাকে রুমাল চেপে বসে আছি। এই গান্ধা সিস্টেম থেকে কিছু আশা সম্ভব না। এই সিস্টেম যাই ধরবে তাই পঁচে যাবে। এখন তো মনে হচ্ছে আরও ২০ বছর, হেফাজত, জামাত, আওয়ামী লিগ, বি এন পি করেই আমাদের পার হবে। এই সিস্টেম কে পাল্টানোর জন্যে জনগণ যদি না জাগে, তাহলে এই পচে যাওয়া গান্ধা সিস্টেম আর কত বছর চলবে আর মানুষের প্রগতিকে পিছনে টেনে রাখবে আল্লা জানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.