এই গুলা হচ্ছে, রুয়ান্ডা হওয়ার রেসিপি। রুয়ান্ডা হইয়েন না, মালেয়শিয়া হন(অসাম্যের অংশ গুলো বাদ দিয়ে) ।

মালয়েশিয়া তে তিন টি জাতি রয়েছে। মালয় , চাইনিজ এবং ইন্ডিয়ান। এই তিন টি জাতির মধ্যে গভীর জাতি গত এবং সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক দন্দ রয়েছে।মালয় মুসলমানেরা নিজেদের কে মালেশিয়ার আদিবাসী মনে করে এবং নিকট অতীতে  মালয়রা, অস্ত্র শস্ত্র সহ চাইনিজ দের উপর হামলা করেছে এমন ঘটনাও আছে। 


মুসলমান প্রধান মালেয়শিয়া তে বেশ কিছু আইন রয়েছে যে গুলো নন মুসলিম দের কে ডেসকরিমিনেট করে।


৬০% মুসলমান, ২০% বৌদ্ধ, ১০% খ্রীষ্টান ,৬% হিন্দু এবং বাকি অন্যান্য ধর্মালম্বীর দেশ মালেয়শিয়া তে আমাদের দেশের মত একটা ধর্মীয় টেনশন আছে বরং আমাদের থেকে কয় এক হাজার গুণ বেশী আছে। মুসলমান প্রধান মালেয়শিয়া তে বেশ কিছু আইন রয়েছে যে গুলো নন মুসলিম দের কে ডেসকরিমিনেট করে। যেমন সাংবিধানিক ভাবে একজন কে মালয় হতে হলে অবশ্যই মুসলিম হতে হয় । মালেয়শিয়া তে মালয় দের জন্যে বিশেষ কোটা আছে চাকুরী বাকরি এবং শিক্ষা ব্যবস্থায়। ফলে মালয় মুসলমান রা সব ক্ষেত্রে ভিন্য ধর্মালম্বী থেকে বেশী প্রায়োরিটি পায় । যেইটা টা নিয়ে মালায়সিয়ান সমাজ এবং রাষ্ট্রে অনেক টেনশন আছে। 

মালেয়শিয়া তা দুইটা কোর্ট সিস্টেম। একটা সেকুলার সিস্টেম আরেকটা শারিয়া সিস্টেম। মুসলমান দের জন্যে শারিয়া সিস্টেম প্রযোজ্য। শারিয়া সিস্টেম এর আইন গুলোতে নন মুসলমানেরা দেস্ক্রিমিনেট হয়, যদিও তারা সেকুলার কোর্ট এ আপিল করতে পারে। 

২০০৮ সালে, মালেয়শিয়াতে নন মুসলিম তরুনেরা  রাস্তায় নেমে আসে এবং ব্যাপক বিক্ষোভ করে সরকারি এবং প্রশাসনে তাদের চাকুরীর সুবিধা মুসলমান মালয় দের সাথে সমান করার দাবিতে। 

২০১১ তে  মালেয়শিয়া গিয়েছিলাম। আমাকে সঙ্গ দিয়েছিল কাং নামের একজন ৫৫ বছর বয়সী চাইনিজ মালায়সিয়ান। কাং রে দেখলাম, সরকারি ভাবে ভিন ধর্মের প্রতি ডেসক্রিমিনাশান এর কথা বলে অনেক ক্ষোভ জানালো  । তার একটা বড় অভিযোগের জায়গা ছিল, একটা আইন যাতে বলা আছে -একজন নন মুসলিম, ইসলাম ধর্মে রূপান্তরিত হতে পারবে, কিন্তু এক জন মুসলিম ভিন্ন ধর্মে রূপান্তরিত হলে  সেটার বিরুদ্ধে রয়েছে 

শাস্তির বিধান । 

ফলে দেখা যাচ্ছে, মালেয়শিয়াতে যথেষ্ঠ পরিমাণ আইডিওলজিকাল দ্বন্দ্ব এবং রেসিয়াল সমস্যা আছে । 

আমরা ৯৭% বাঙ্গালী জাত এর জাতি । আমাদের কোন রেসিয়াল দ্বন্দ্ব নাই। (পার্বত্য চট্টগ্রাম এর সমস্যা বাদে)

আমাদের সমাজেও বিভিন্য ধরনের ধর্মীয় টেনসন আছে, কিন্তু কোনটাই  এক্সট্রিম পর্যায়ের না। এবং সেইটার জন্যে, আমাদের রাষ্ট্রের ভিত্তি ভেঙে পড়বে এমন কোন অবস্থার সৃষ্টি কখনো হয় নাই। 

কিন্তু গত পাচ ছয় মাসে আমাদের রাষ্ট্রে যে, আইদীয়লোজিকাল এবং ধর্মীয় টেনশন সৃষ্টি হচ্ছে তা যেন আমাদের অস্তিত্বে নাড়া দিচ্ছে, সব কিছু কে স্থবির করে দিচ্ছে।
আমাদের দেশে  লিবারেল ভিউ এবং বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ এর সাথে   ইসলামিক জাতীয়তাবাদ এর একটা তাত্ত্বিক সংঘর্ষ হচ্ছে, যেইটা একটা মুসলমান প্রধান দেশে খুব্‌ই স্বাভাবিক একটা প্রবণতা। 

এমন একটা ডিবেট একটা রাষ্ট্রে হতেই পারে। ধর্মীয় দল গুলো, তাদের দাবি দাওয়া তুলতেই পারে। এবং এই দাবি গুলোর অনায্যতার বিরুদ্ধে প্রগতিশীলেরা ভিন্ন মতে অবস্থান নিতেই পারে ? 

কিন্তু তার জন্যে, রাষ্ট্রের মধ্যে এমন গৃহযুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে কেন ? রাষ্ট্রের সব কড়ি বর্গা ভেঙ্গে পড়বে কেন ? 


মালেয়শিয়াতেও তো এমন ধরনের ডিবেট আছে। কিন্তু কই , মালেয়শিয়াতে তো পুলিশ গুলি করে পাখির মত মানুষ মারতাছেনা? বিক্ষোভ কারীরা পুলিশ কি পিটিয়ে মেরে ফেলছেনা ? রেল লাইন তুলে রেল গাড়ী ফেলে দিচ্ছেনা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ পুড়িয়ে দিচ্ছেনা। অর্থনীতির চাকা থমকে যাচ্ছেনা। 

মালেয়শিয়া তো তরতরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা তাদের অর্থনতিক কার্যক্রম টাকে , তাদের আইদীয়লোজিকাল বিতর্কের সাথে মিশিয়ে ফেলে নাই। ঐটা তারা আলাদা ভাবে ট্রিট করছে। একটা মিথস্ক্রিয়ার মধ্যে মালায়সিয়ান রাষ্ট্র এবং সমাজ তাদের তিন তিন টা জাতি গোষ্ঠির মধ্যে সাংঘর্ষিক এই সিচুয়েশন গুলো কে মেনেজ করে ধীরে ধীরে একত সমাধানের পথ তৈরী করছে । এবং এই দন্দ গুলোকে রাষ্ট্রের ও মানুষের অর্থনৈতিক প্রগতির বাধা হিসেবে দাড়াতে দিচ্ছেনা। 


আমাদের দেশে অনেক কি আমি বলতে শুনি, আগে এই দন্দ গুলো সমাধান করি, তারপর দেশ গড়ার কাজ শুরু করবো ?

বলে 

কি  এরা ?

আজ যদি কোন ধর্মীয় বিষয় নিয়া, যুদ্ধপরাধী দের বিচার বা জামাত নিষিদ্ধ করা নিয়া একটা বিতর্ক হয়- তাহলে কি আমাদের এর ক্ষিধা লাগবেনা ? খেতে হবেনা ? ঘুমাতে হবেনা ? দরিদ্র জনগোষ্ঠী কে , মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে টেনে তোলার সংগ্রাম বন্ধ করে দিতে হবে ? বিশ্বের বুকে, মাথা তুলে দাঁড়ানোর সংগ্রাম, শিক্ষার উন্নয়ন, চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়ন, দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশের সংগ্রাম সব থেমে যাবে আইদীয়লোজিকাল বিতর্কের কারণে ?

এই দন্দ যদি আরো ২০০ বছর চলে, তো তত দিন কি আমরা না খেয়ে থাকবো ? আমাদের সন্তানেরা অপুষ্ট হয়ে ধূকে ধূকে মরবে ? 

আইদীয়লোজিকাল বিতর্ক তো কখনো সমধান হয়না।

কারণ, একজন আইদীয়লোজিকাল মানুষ কখনোই তার অবস্থান পরিবর্তন করেনা। তাকে যত বাধা দেয়া হয় তত তার অবস্থান আরো রাডিকাল এবং মৌলবাদি হয়। তাহলে বাংলাদেশে কি এক পক্ষ, আরেক পক্ষের শেষ লাশ টি না পরা পর্যন্ত দেশ গড়ায় পার্টিসিপেট করবেনা ?? প্রতি দিন গাড়ি ভাংচুর হতে থাকবে ? 

এই গুলা হচ্ছে, রুয়ান্ডা হওয়ার রেসিপি। রুয়ান্ডা হইয়েন না, মালেয়শিয়া হন(অসাম্যের অংশ গুলো বাদ দিয়ে) ।

বি দ্র এই নোট্  টা গত কাল স্টেটাস আকারে দেয়া হইছিল 

BANGLADESH/ Children sleep on a pavement next to a road near a wholesale vegetable market at Kawranbazar area in Dhaka August 1, 2011. REUTERS/Andrew Biraj/Files REUTERS

Leave a Reply

Your email address will not be published.