জিমি হেনড্রিক্স ফক্সি লেডি গানের প্রেরণা কেথি ইচিংহ্যাম এর জীবন। জিমি হেনড্রিক্স, ডিসটরটেড গিটার প্রেয়িং এর জনকের ১২টি আনরিলিজ ট্র্যাক প্রকাশিত হচ্ছে অল্প কিছু দিনেই। এই প্রচেষ্টাটিকে সে লিব্রেট করতে, বিবিসি প্রকাশ করেছে কেথি ইচিংহ্যাম এর সাক্ষাৎকার। কেথি ইচিংহ্যাম ছিলেন হেনড্রিক্সের প্রাক্তন বান্ধবী এবং তিনি হেনড্রিক্সের অনেক গুলো গানের অনুপ্রেরণা পেছনে ছিলেন।
ষাটের দশকটা ছিল একটা অদ্ভুদ সময়। আমেরিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রে, হিপপিরা ২০০০ বছরের প্রথা ভেঙ্গে এবং পুরাতন নিয়ম কে বিসর্জন দিয়ে লিবারেল মুভমেন্ট এর জন্ম দেন এবং যেটা পরবর্তী আধুনিক লিবারাল লাইফ স্টাইল হিসেবে তারা ধীরে ধীরে এডপ্ট করে নেয় ।
সমাজের প্রথা ভেঙ্গে মুক্ত সমাজের জন্ম দেয় ষাটের দশকে বেবি বুমারস রা। অনেকে যেটা জানেন না, তা হলো পঞ্চাশের দশকে পশ্চিমা বিশ্ব আমাদের মতোই কনজারভেটিভ ছিল। ভাল ও খারাপ সব কিছুর মধ্যেই এই দশকএর ওয়েষ্টার্ন মিউজিক সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং সারা বিশ্বে তা ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
জিমি হেনড্রিক্স এর সময় একজন বড় আইকন। তিনি জন্ম দেন রক গিটার প্লেয়িং এর। এর পূর্বে বি পপ, রাগ টাইম এবং ব্লুজ ছিল শ্রোতাদের মূল আকর্ষণ।
জিমি হেনড্রিক্স প্রথম সফল ভাবে গিটার এ ডিসটরশোন ব্যবহার করেন এবং সেই ডিসটোরশন প্লেয়িং কে তার শোমানশিপ এর মাধ্যমে এমন একটা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান, সেইটার মাধয়্মে তরুনদের আকর্ষণের মধ্যমণি হয়ে উঠে।
ইচিংহ্যাম স্মরণ করেন জিমি হেনড্রিক্সের সাথে তার প্রথম দেখা হয় একটা মিউজিক ক্লাবে ১৯৬৬ সালে। হেনড্রিক্স তখন সবে মাত্র আমেরিকা থেকে লন্ডনে এসেছেন। লন্ডনে তাকে কেউ চিনতো না। ওই ক্লাবে হেনড্রিক্স একলাই গিটার বাজিয়েছিলেন। হেনড্রিক্স এর ম্যানজার তথন তার সাথে বাজানো জন্য কোনো ব্যান্ডই জোগাড় করতে পারে নি।
তার বাজানো ইচিংহ্যাম কে মুগ্ধ করেছিল। বাজানো শেষে হেনড্রিক্স এর সাথে ইচিংহ্যাম এর পরিচয় হয়। ইচিংহ্যাম স্মরণ করেন, সে ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। তার আর্মি জ্যাকেট, আফ্রিকান চুল, ফুলের ডিজাইনের শার্ট আর কালো আমেরিকানদের একসেন্ট এ তাকে অপূর্ব লেগেছিল। এমন কারো সাথে আমার এর পুর্বে দেখা হয় নি। আমাকে হেনড্রিক্স বলেছিল, আমার মনে হয়, তুমি খুব সুন্দর ।
অন্য যে কেউ বললে সেটা হতো অস্বস্তিকর , কিন্তু হেনড্রিক্স এর মুখ থেকে আমার সেটা মোটেও খারাপ লাগেনি। তার পর থেকেই তারা ধীরে ধীরে ঘন্সিঠ হন । এবং ক্লাব থেকে ফেরার সময় হেনড্রিক্স একটা একসিডেন্ট এ মরতে মরতে বেঁচে যান। আমেরিকাতে ছিল বাম সাইড ট্রাফিক। তাই ডান সাইডের ট্রাফিক খেয়াল না করে ভুল সাইড দিয়ে হেটে যেতে গিয়ে সে একটা গাড়ি তলে পড়তে পড়তে, আমি তাকে টান দিয়ে ধরে রাখি।
কেথি ইচিংহ্যাম স্মরণ করেন যে, তাদের দীর্ঘ আলাপ হতো রাত জেগে জেগে। তিনি বলেন হেনড্রিক্স খুব সংবেদনশীল মানুস ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেক মিল ছিল। কেথির বাবা ছিল এলকোহলিক। এবং তার মা তাকে ১০ বছর বয়সে চেড়ে চলে যান। হেনড্রিক্স তাকে বলতো তার পিতার গল্প, যে তাকে পিটিয়ে পিটিয়ে আধ মরা করে ফেলতো গিটার প্রাকটিস করতে দেখলে। হেনড্রিক্স বড় আর্ট এ বিশ্বাসী ছিল। হেন্ড্রিক্স , ইচিংহ্যাম এর কিছু চুল তার জুতার নিচে রেখে দিতো। যেনো সে সব সময় তার স্পর্শ থেকে দূরে না যায়।
“হেনড্রিক্স খুব মজার এবং খুব চকৎকার মানুষ ছিল। ইচিংহ্যাম বলেন, লিন্ডা নামে আমার একজন বান্ধবী ছিল। ওর একটা বাচ্চা ছিল। হেনড্রিক্স এর তখন কোনো টাকাই ছিল না। কিন্তু তবুও হেনড্রিক্স বাচ্চাটাকে একটা নকল কাঠের ঘোড়া কিনে দেয়। আমাদের কোনো টাকায় ছিল না, আমরা রাত এর বেলা মনোপলি খেলতাম আর রান্না করতাম। আর একজন আরেকজনকে জোকস বলতাম। হেনড্রিক্স খুব ফানি ছিল।
কিন্তু আমাদের দুইজন এর রাগ ছিল প্রচন্ড এবং মাঝে মাঝে ভয়ঙ্কর ঝগড়া হতো। একদিন রাতে , আলু ভর্তা রান্না করা নিয়ে আমাদের দুইজনের ঝগড়া হয়। আর আমি রাতে ঘর ছেড়ে বেরিযে যাই। পরে যখন আমার রাগ থামে পরদিন আমি ফিরি। হেনড্রিক্স তখন আমাকে বলে, আমি তোমার জন্য একটা গান লিখেছি। এটাই ছিল বিখ্যাত গান।উইন্ড ক্রাইস মেরি।
ইচিংহ্যাম এর ডাক নাম ছির মেরি। হেনড্রিক্স বলেছিল যে সে তাকে খুব মিস করেছিল। গানটা শুনে আমার তখন তেমন ভালো লাগে নাই। কিন্তু রেকর্ড হওয়ার পর যখন আমি শুনি তখন আমি বুঝি গান টা অসাধারণ ছিল।
তখন লন্ডনের মিউজিক সিনে হেনড্রিক্স কে নিয়ে প্রচন্ড মাতামাতি চলছে। তার এক একটা গিগ এ,বিটলস, এরিক ক্লেপটন আসতো। রাজ পরিবারের মানুষ, ড্রেস পরিবর্তন করে সাধারণ মানুষের ড্রেস পরে হেনড্রিক্স এর কনসার্ট দেখতে আসতো।
তার প্রতিটা কনসার্ট ছিল শোমানশিপের একটা অতুলনীয় নিদর্শন। সে গিটার কাঁধে তুলে পিছে নিয়ে এক হাত বা থুতনি দিয়ে, বা পিঠের উপরে নিয়ে বা যেকোনো ভাবে বাজাতে পারতো। তার মতো কেউ ছিলনা। সবাই তাকে দেখতো আর মুগ্ধ হতো। সে পুরো মিউজিক জগৎকে উল্টে দিয়েছিল। এক বছরের মধ্যেই, উইন ক্রাইস ম্যারি, ফক্সি ল্যডি, পার্পেল হাজ এর মতো গান সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরে এবং হেনড্রিক্স এর জনপ্রিয়তা তাদের সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে থাকে।
ইচিংহ্যাম বলেন,‘‘তার আশে পাশে কিছু বাজে লোক ভর করে। ওরা খুব আক্রমণাত্মক লোক ছিল। তারা তাকে ব্যবহার করতো। কিন্তু হেনড্রিক্স তাদের চিনতে ভুল করেছিল। আমাদের সম্পর্কে তখন থেকেই ভাটা পরা শুরু হয়।
ইচিংহ্যাম বলেন, ওই পরিবেশ টা আমার ভালো লাগতো না। ওই লোক গুলো কেউও আমার ভালো লাগতো না। এবং যতই দিন যেতে লাগল, এরা হেনড্রি্ক্স কে নেশার দিকে নিয়ে যায়। এবং হেনড্রিক্স ক্রমাগত নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতেন। তাকে দেখেও খুব উগ্র লাগতো। তার চূল থাকতো এলোমেলো। সে কথায় কথায় প্রচন্ড রেগে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতো আর সব কিছু ভাঙচুর করত।
ধীরে ধীরে আমিও ওর থেকে আলাদা হয়ে যাই। ১৯৬৯ সালে, আমাদের ফাইনালি ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। কিন্তু আমি মানুষের মুখে শুনতে পাই, হেনড্রিক্স আরো পাল্টে গেছে। এবং নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছে। ১৯৭০ সালের এক রাত, ওর ম্যানেজার আমাকে ফোন করে বলে , কেউ তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ও প্রচন্ড উনমত্ত হয়ে আছে, তুমি পারলে আসো।
সবাই ওর রুমে যেতে ভয় পাচ্ছিল। আমি ওর রুমে যাই। আমাকে দেখে সে সম্পূর্ণ শান্ত হয়ে পরে। আমি গিয়ে দেখি, টেবিলের উপর গ্লাস ভাঙ্গা, আর রমের হিটার প্রচন্ড গরম। তার খুব ঠান্ডা লেগেছিল। সে নিশ্চিতভাবে অসুস্থ্ ছিল। কিন্তু কি হয়েছিল আমি জানি না। আমি তার সাথে কথা বলে তাকে শান্ত করে, তাকে ঘুম পারিয়ে ফিরে আসি। ওর ম্যানাজার আমাকে অনেক থ্যাঙ্কস দেয়।
তার কয়েক সপ্তাহ পরে, তার সাথে আমার লন্ডনের রাস্তায় দেখা হয়। সে তখন একটা দোকানে কাপড়ের বেল্ট কিনছিল। সে আমাকে বলেছিল, তুমি পারলে সন্ধায় এসো। তোমার সাথে কথা আছে। আমি বলেছিলাম আচ্ছা, আমি দেখি। কিন্তু জানিনা কেন শেষ পর্যন্ত আমি যাইনি।
পরদিনই শুনি হেনড্রিক্স ড্রাগস ওভারডোজ এ মারা গেছে। আমি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। এবং নিজেকে অপরাধী মনে করতাম। কিন্তু এখন আমি বুঝি, আসলে, আমার যাওয়া না যাওয়া তো কোনো ক্ষতি বৃদ্ধি হতো না। সাংবাদিকদের ইচিংহ্যাম বলেন, “দেখ যদি আমি যেতাম , তাহলে কি হতো? হয়তো আমরা গল্প করতাম। কিছু খাওয়া দাওয়া করতাম এবং আমি ফিরে আসতাম। এরপর ও যেমন ছিল তেমনই থাকতো। এবং যেটা হওয়ার সেটা হতো। আমার যাওয়া না যাওয়াতো কোনো ক্ষতি বৃদ্ধি হতো না।
তবুও আমার মনে হয়, আমার গেলে ভালো হতো। কিন্তু এইটাই নিয়তি। আমি যাইনি এবং এইটাই ভবিতব্য। ইচিংহ্যাম এর এখন ৬৬ বছর বয়স। তিনি লন্ডনে আর থাকে না। হেনড্রিক্স এর স্মৃতি নিয়ে তিনি একটা বই লিখেছেন। ‘‘জিপসী আই ” আরো একটা গান যেটা হেনড্রিক্স ইচিংহ্যাম কে নিয়ে লিখেছিলেন। ইচিংহ্যাম বলেন, পৃথিবীটা তাকে মনে রেখেছে একজন গিটার সুপার হিরো হিসেবে। কিন্তু আমি মনে করি, হেনড্রিক্স কে সবার স্মরণ করা উচিত. একটা চমৎকার মানুষ হিসেবে। সে শেষ দিকে খুব উনমত্ত হয়ে গিয়েছিল। হয়তো তার সঙ্গিরা তাকে বিপথে নিয়ে গিয়েছিল বা খ্যাতিতে তার মাথা বিগড়ে গিয়েছিল। কিন্তু যতো দিন সে আমার সাথে ছিল, আমি দেখেছি সে ছিল একটা চমৎকার মানুষ। বাকি দশ জনের মতোই একটা মানুষ। সাধারণ, কিন্তু খুব সংবেদনশীল মনের একটা মানুষ ।
This note is adapted from a feature published in bbc.com. It is near to a translation. Not an original writing.