বাঙালি জাতীয়তাবাদ, কালচারাল ফ্যাসিজম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে শত্রু নিধন

ইদানীং একটা আলোচনা তৈরি হয়েছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, কালচারাল ফ্যাসিজম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে শত্রু নিধন এই বয়ান গুলো সিপিবি এবং বামপন্থা এবং এমন কি প্রথম আলোর মিজানুর রহমানের মত কলামনিস্টরা তৈরি করেছে। এইটা সত্য কিন্তু পূর্ণ সত্য নয়।

এই বয়ানের অনেক গুলো পার্ট শহুরে মধ্যবিত্তের কালচারাল এস্পিরেশানের ভেতরে ছিল আশি এবং নব্বই দশকেই।

ইস্লামিস্ট পলিটিক্সের প্রতি মিস্ট্রাস্টের ভিত্তি সিপিবি তৈরি করে নাই,  বরং ইস্লামিস্টরা নিজেদের রেস্পন্সিবল এন্টিটি হিসেবে সমাজে আসতে পারে নাই। ফলে কখনই তারা ৮% এর উপরে ভোট পায় নাই। পাব্লিকে ভোট দেয় নাই। আওয়ামী লীগ ইস্লামিস্ট পলিটিক্সের প্রতি মিস ট্রাস্টটাকে উইপনাইজ করেছে।যদিও আওয়ামী লীগের জন্যে সেই বয়ান নির্মাণে র সাপোর্টেড সিপিবি টাইপ কালচারাল এলিটসের একটা অংশের বড় ভুমিকা আছে।

এমনকি বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিষয়টাও সিমিলার।

বিষয়টা সাটল।

গ্রাম থেকে আসা শহুরে মধ্যবিত্ত তার ফেলে আসা স্মৃতি এবং মাটির সাথে তার ক্ষয় হতে থাকা সংযোগকে সেলিব্রেট করার জন্যে আশি এবং নব্বই দশকে বাঙালি জাতিবাদের কিছু ইলেমেন্টকে তার পরিচয়ের চিহ্ন হিসেবে ধারণ করেছে। সেইটার ভিত্তি করে একটা কালচারাল আন্দোলন হয়েছে। যা নিঃসন্দেহে কোলকাতার জমিদারদের থেকে ঈর্ষা থেকে আসা হীনমন্যতা ধারণ করেছে।

আওয়ামী লিগ এইটাকে উইপানাইজ করে হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি ব্লা ব্লা ব্লা ইত্যাদি দাড় করাইছে। হালের যে ইসলামিক রিভাইভালিজম এইটা এই উইপানাইজেশানের একটা রিএকশন।যে একই ব্যক্তি এক সময়ে বাঙালি পরিচয় ধারন করতে চেয়েছে সে এখন ইস্লামিস্ট ন্যারেটিভে মুক্তি খুজতেছে।

পয়েন্ট ইজ, এই সেলিব্রেশান যারাই করেছে, এই বয়ান যারা নির্মাণ করেছে তারা সবাই বোঝে নাই যে, তাদের বয়ান দিয়ে একটা বাঙালি জাতিবাদি ফাসিস্ট রাষ্ট্র কায়েম করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ইটসেলফ কোন ফ্যাসিস্ট বয়ান না। এইটাকেও আওয়ামি লিগ উইপনাইজ করেছে।

এমন কি ঘাতক দালালদের বিচার চাওয়া একটা ন্যায্যতা ভিত্তিক এবং আইনের শাসনের রাষ্ট্র চাওয়ার আকাংখা থেকে আসতে পারে। কিন্তু, এইটার পাইক বরকনদাজেরা র দ্বারা পেইড এবং আওয়ামী লীগের রান্না করা বিরানি খাওয়াটাই তাদের ধান্দা ছিল।

…বয়ান নির্মাণে কার ভুমিকা কি ছিল, তার চেয়ে বর্তমান কে মরাল ইকুইভ্যালেন্সের মাধ্যমে এই ফ্যাসিজমকে টেকায় রাখার যুক্তি দের তাদের বেশী ক্ষতিকর মনে করি। আমার কাছে,  কে বয়ান নির্মাণ করেছে এইটা মেইন প্রশ্ন না।

কারণ এইটা অনেক কমপ্লিকেটেড প্রশ্ন।

কিন্তু তবুও আমি তাদের সাথে এঙ্গেজ হই।এইটা টাফার। এইটাতে অনেক বেশী নোংরা গালি খেতে হয়। বিএনপির মত একটি মিনিমাম মরালিটি এবং যোগ্যতাহীন দলের এপলজিস্ট হিসেবে আবির্ভূত হয়।

…শেখ হাসিনা কিন্তু, আজকে এই জায়গায় আসার আগে তার শত্রু মিত্র সবার সাথে এলাই তৈরি করেছে। এমন কি খেলাফতে মজলিসের সাথে তার যে চুক্তি ছিল, সেইটাও এলাই নির্মাণ।ইন্টেরেস্টিংলি সেইটা উনি ক্ষমতায় থেকে করেছিলেন। আমি বলছিনা, হিপোক্রেট হতে হবে কিন্তু আপনি সত্যি মনে করেন এই শাসকের পতন ঘটাতে হবে তবে একটা ব্রড এলায়েন্সে সমাজের সকল নৈতিক অংশকে কানেক্ট করতে হবে।

..আমাদের একটা ব্রড এলায়েন্স তৈরি করতে হবে। এইটা প্রথম ও প্রধান কাজ।

এই এলায়েন্স বড় করতে হলে, যে যে একটি নতুন স্বপ্ন সকলকেই ঠাই দিতে হবে। এমন কি যারা এক সময়ে এই ফ্যাসিজমের পক্ষে ছিল কিন্তু এখন নিজের ভুল বুঝতেছে তাদের সাথেও কানেক্ট করতে হবে। যাদের এই ফ্যাসিস্টদের পতন ও নতুন স্বপ্নের আকাঙ্ক্ষা সৎ তাদের সকলের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। বন্ধুতা তৈরি করতে হবে। কানেক্ট করতে হবে।

…এইটা একটা দীর্ঘ জারনি। হার্ড।। মারজিনাল গেইন।… ইন রিয়ালিটি এই লড়াই এ একটা বুল ডোজার দাঁড়িয়ে আছে, একটা হিমালয় পরিমাণ বাধার সামনে। তাকে আপনি গুড়িয়ে যেতে পারবেন না। তাকে আপনি যৌথতায়, বন্ধুতায়, সকলকে এক করে স্ট্রাটেজিকালে পেরোতে হবে ।

এখানে সম্পর্ক লাগবে, মানবিকতা লাগবে, যূথবদ্ধতা লাগবে।

শেখ হাসিনার মত অনেক ফ্যাসিস্ট পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কয়েক দশক শাসক করেছে। তাদের দীর্ঘায়ুর কারণ নয় যে রাষ্ট্রের নাগরিকেরা বুঝতে পারে নাই যে, এই শাসক অনৈতিক। বরং, এই ফ্যাসিস্টরা দীর্ঘ স্থায়ি হয়েছে কারণ, এই শাসকের বিরুদ্ধে কোন সাস্টেনেবল জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠে নাই। কোন কন্সেন্সাস গড়ে উঠে নাই।

এবং কন্সেনাস বা এলায়েন্স গড়ে তোলার প্রথম শর্ত,  আপনাকে বন্ধুতা তৈরি করতে হবে, শত্রুতা নয়। মানবিকতার রাজনীতি করতে হবে , নিশ্চিহ্নের রাজনীতি নয়।

…কিন্তু সমাজের ৯০% মানুষকে কিন্ত আমরা  দেখিনা। যারা চুপ করে থাকে, সব কিছু দেখে যায়। সব কিছু পড়ে কিন্তু কোথাও কমেন্ট করে না।

তারা কিন্তু সকলকে জাজ করছে। সে কি ভাবছেনা , যে আরেক জনকে নিশ্চিহ্ন করার রাজনীতি করে, সে আমাকে নিশ্চিহ্ন করবেনা, তার গ্যারেন্টি কি ? তাই আমি বরং স্ট্যাটাসকোতেই বসে থাকি। কারন স্ট্যাটাস কো অন্তত আমাকে নিশ্চিহ্ন করছেনা?

আমি বলবো এই চিন্তা পদ্ধতি বাংলাদেশের ফ্যাসিজমকে দিরঘায়িত করার সব চেয়ে শক্তিশালী ইলিমেন্ট।

এই চিন্তাকে ভাংতে হলে আবার আমাদের বন্ধুতা লাগবে, মানবিকতা লাগবে, দেখাতে হবে, আমরা ওদের থেকে বেটার। দেখতে হবে আমাদের একটা স্বপ্ন আছে, যে স্বপ্ন ওদের স্বপ্নের মত নকল নয়। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ ও আমাদের দেখাতে হবে।

তখন সেই স্বপ্নের পেছনে সকল পক্ষের ঐক্য হবে। সেই ঐক্য তৈরি করতে পারলে আওয়ামী লীগ এক সেকেন্ড টিকবে আমি এইটা বিশ্বাস করিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.