/

রিজার্ভের ডলার থেকে কেন সরকার ঋণ করতে পারে না ?

রিজার্ভের ডলার থেকে কেন সরকার ঋণ করতে পারে না ?’

আসেন একটা সিম্পল একজাম্পল দিয়ে বিষয়টা বুঝি। ‘মনে করুন, বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের এই মুহূর্তে ৪০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে,। সেই চল্লিশ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থেকে সরকার কোন একটি প্রজেক্ট ১০ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিলো। তারপরে , বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের রিজার্ভ তো ৩০ বিলিয়ন ডলার হয়ে যাওয়ার কথা। রাইট ?

নো। রং। তা হবে না, রিজার্ভ থেকে ডলার নিয়ে সেইটা টাকাতে কনভার্ট করার পরে, বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারই থাকবে। ফলে, রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে টাকা ছাপানো বা রিজার্ভ থেকে ঋণ না নিয়ে টাকা ছাপানো একই কথা। রিজার্ভ থেকে ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়াতে শুধু মাত্র একটি একাউন্টিং প্রসেস ডেকিয়ে মানি সাপ্লাই বাড়ানো হচ্ছে।এইটাই হচ্ছে রিজার্ভ থেকে ঋণ নেওয়ার সব চেয়ে ক্রিটিকাল ফ্যালাসি।

আসেন, একজাম্পল টা বুঝি। রিজার্ভ থেকে কোন প্রজেক্টের এগেন্সটে ঋণ নিয়ে যে ডলার টা সরকার নেবে, সেই ডলার কোন একটি ব্যাংকে ঢুকবে। স্বাভাবিক ভাবেই, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক আনস্টিরিলাইজড ইন্টারভেন্সনের মাধ্যমে সেই ডলারের বিনিময়ে ঐ ব্যাংককে সমপরিমাণ বাংলা টাকা দেবে। এবং ডলারটা নিজে একাউন্টে নিয়ে ফেলবে।

মনে করেন, ওই ব্যাংকে ১০ বিলিয়ন ডলারের এগেন্সটে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ৮৫ হাজার কোটি টাকা দিলো।ফাইন এন্ড গুড। এর পরে কি হবে ? এর পরে ওই ডলার টা কই যাবে ? ওই ডলার টা কিন্তু, আবার গিয়ে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের রিজার্ভে ঢুকবে। ফলে কি হবে ? ফলে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের রিজার্ভ কিন্তু, ৪০ বিলিয়ন ডলার থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার মাইনাস হয়ে , ৩০ বিলিয়ন ডলার হবেনা। সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারই থাকবে। কারণ, রিজার্ভের ডলার রিজার্ভেই ফেরত যাবে।

তার মানে কি ? তার মানে, এই ১০ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশের ইকোনমিতে ৮৫ হাজার কোটি টাকা ইঞ্জেক্ট করে, আবার গিয়ে, রিজার্ভে যোগ হবে। এইটাই হচ্ছে, রিজার্ভ থেকে ঋণ নেওয়ার সব চেয়ে ক্রিটিকাল ফ্যালাসি।যে উদাহরণ থেকে আমরা বুঝতে পারি, রিজার্ভ থেকে নেওয়া ঋণ জাস্ট একটি একাউন্টিং সিস্টেম দেখিয়ে টাকা ছাপানোর একটি প্রক্রিয়া মাত্র।

তো টাকাই যদি ছাপাতে হয় তবে রিজার্ভ থেকে ঋণ নিতে হবে কেন, এমনিতেই করা যায়। এখন আপনি বলতে পারেন আচ্ছা আমি ঋণ করবো না, আমি যে প্রজেক্টে ডলার লাগে সেই প্রজেক্টে রিজার্ভের ডলার খরচ করবো। সেইটাতো করতেই পারেন এবং সেইটা তো বছর বছর করা হচ্ছেই। আপনার যে বছর বছর, রপ্তানি থেকে আমদানি বেশি হচ্ছে, কারেন্ট একাউন্ট ডেফিসিট হইতেছে, সেইটা তো এমনে এমনে না। আপনার রিজার্ভ আছে বলেই হচ্ছে। ফলে নতুন করে ঋণ নেওয়ার আলাপ আসছে কেন ?এইটাতো ষ্ট্যাণ্ডার্ড একটি প্রক্রিয়া। আপনা যেহেতু রিজার্ভ বেড়েছে, আপনি এমন সব প্রজেক্ট নেন যে প্রজেক্টে আমদানি বাড়বে। যেহেতু, আপনার রিজার্ভ স্ট্রং তাই আপনার ডেফিসিট বাড়বে- যেটা নিয়ে কেউ আপত্তি করছেনা। কারণ, এইটা একটা ষ্ট্যাণ্ডার্ড প্রক্রিয়া।

তাহলে আজ নতুন করে, রিজার্ভ থেকে নতুন করে ঋণ নেওয়ার কথা আসছে কেন ? আমাদের দেশের অর্থমন্ত্রী এবং সরকারের অনেক মন্ত্রী এই আইডিয়াটা বলার চেষ্টা করতেছেন, যে, রিজার্ভ আপনার টাকা (ডলার), যেইটা খরচ না করে, বিদেশি ব্যাংকে ফেলে রাখা হয়েছে। যে ডলার থেকে আপনি খরচ করতেই পারেন। এবং ৫ থেকে ৬ মাসের ইম্পোরটের সমপরিমাণ ডলার থাকলেই হবে। বাকি ডলার আমরা চাইলে খরচ করতে পারবো । এই গুলো আন বিলিভেবলি নাইভ চিন্তা। প্রব্লেম নাম্বার ওয়ান। রিজার্ভ মোটেও খরচ না হয়ে বসে নাই। রিজার্ভ আপনি খরচ করে ফেলেছেন। রিজার্ভ কি ? দেশের সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক গুলো যখন কোন রপ্তানি বিল পায় অথবা সরকার কোন ঋণ নেয়, অথবা রেমিটেন্স আসে সেই ডলার গুলোর ব্যাঙ্ক গুলোর একাউন্টে জমা থাকে। সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ব্যাঙ্ক গুলোর কাছ থেকে বাংলা টাকার বিনিময়ে ডলার গুলো কিনে নেয়। এবং ডলার টা তার নস্ট্র একাউন্টে জমা হয়। এই জমা টাকাটাই রিজার্ভ।এই ডলারটা সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের এসেট হিসেবে তার ব্যালেন্স শিটে যোগ হয়। এবং এই এসেটের বিনিময়ে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক যে লায়াবিলিটি ইস্যু করে, সেই লায়াবিলিটি হচ্ছে বাংলা টাকা। ফলে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে এসেটের এগেনস্টে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ লায়াবিলিটি তৈরি করে। আপনি চাইলেই একটা এসেটের এগেনস্টে, দুইবার লায়াবিলিটি তৈরি করতে পারবেন না।

তার মানে, রিজার্ভের ডলারের এগেন্সটে অর্থনীতিতে একবার টাকা ঢুকে গ্যেলে আপনি চাইলেই এই ডলার থেকে ঋণ নিয়ে আবার অর্থনীতিতে টাকা ঢুকাতে পারবেন না। যদি ঢুকান এইটা জাস্ট হবে, টাকা ছাপানো। তার ফলে মানি সাপ্লাই বাড়বে ইনফ্লেশান বাড়বে।অন্যদিকে একটা সিচুয়েসান দেখেন এই একই ৮৫ হাজার টাকা যদি এডিপি অথবা বিশ্ব ব্যাংক অথবা চায়না থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে অর্থনীতিতে যোগ করেন তবে আপনার অ্যাসেট ও বৃদ্ধি পাচ্ছে লায়াবিলিটিও বৃদ্ধি পাচ্ছে ।কিন্তু, অর্থনীতিতে একটা ব্যালেন্স থাকছে। এসেট লায়াবিলিটি কোন মিসম্যাচ হচ্ছেনা।

আমাদের বুঝতে হবে, টাকা কিভাবে তৈরি হয় ? এবং কিসের এগেন্সট টাকা তৈরি হয় ?ফলে ফিয়াট কারেন্সিতে যেহেতু আপনি সোনা বা রুপা বা অন্য কোন এসেটের এগেনস্টে ব্যাকড টাকা তৈরি করতেছেন না, তখন আপনি মূলত রিজার্ভ অথবা ঋণের নামে ফিউচার এসেটে বিপরীতে টাকা তৈরি করতেছেন। মূলত টাকা দুই ভাবে তৈরি হয়, এক। নতুন ঋণ নিলে। যেইটার এগেন্সটে আপনি ফিউচারে এসেট তৈরি করবেন বলে প্ল্যান করেছেন। দুই। আপনার বৈদেশিক আয়ের ভিত্তিতে। (রেমিটেন্স, এক্সপোর্ট, ফরেন কারেন্সিতে ঋণ) বাংলাদেশের টাকা যে স্টেবল তার কারণ এই টাকার এগেন্সট একটা এসেট আছে।

টাকা টা হাওয়াতে তৈরি হয় নাই, রিজার্ভের এগেন্সটে বা ঋণ(ফিউচার এসেট) এর এগেন্সট তৈরি হয়েছে। যদিও খেলাপি ঋণ দিয়ে আপনি এই এসেটের ভ্যালু নষ্ট করেছেন। ফলে আপনার টাকার শক্তি মূলত আসে রিজার্ভ থেকে। আপনার কারেন্সি যেহেতু গোল্ড ব্যাকড না, মূলত, রিজার্ভ (বা ঋণ) ব্যাকড তখন সেই রিজার্ভ থেকে নতুন করে ঋণ নিয়ে টাকা বানানোর মানে হচ্ছে, আপনি মূলত আপনার একটি এসেটের এগেন্সটে দুই বার টাকা যোগ করছেন। অর্থনীতিতে হাওয়ার উপরে কোন ব্যাকিং ছাড়া টাকা যোগ করতেছেন।

গোল্ড বা সিলভার ব্যাকিং না থাকার ফলে একটা দেশের কারেন্সি মূলত, তিনটা মেজর বিষয়ের খুব ডেলিকেট ব্যালেন্স। ১। ফরেন রিজার্ভ। ২। মানি সাপ্লাই ৩। অর্থনীতি যথেষ্ট ভাবে নতুন সম্পদ তৈরি করতছে কিনা যেন, অর্থনীতি যে কারেন্সির মূল্যে সম্পদ তৈরি করতেছে সেই কারেন্সিতে আপনার লোকাল এবং ফরেন ডেবট পেমেন্টের ক্ষমতা থাকে। যার মধ্যে ফরেন পার্টটা রিজার্ভ দিয়ে পেমেন্ট করবেন। এইটা খুব ডেলিকেট একটা ব্যালেন্স। যারিজার্ভ থেকে ঋণ নেওয়ার মাধ্যমে এই তিনটা ইস্যুর দুইটাকে আপনি ডিস্টাবিলাইজ করবেন। চাইলে করতে পারেন । কে আপনাকে মানা করতেছে। সমস্যা কি ? রিজার্ভ থেকে ঋণ নেবেন, সেই রিজার্ভের ডলার আবার ব্যংলাদেশ ব্যাঙ্ককে ফেরত দেবেন। ফলে রিজার্ভ তো কমতেছেনা। ক্ষতি কি ? তাইনা ? করেন। করেন।

5 Comments

  1. এই বিষয় টা কি দেশের অন্য অর্থনীতিবিদ রা জানেনা?

  2. What to happen if lending from reserve is used to make import payments by the projects to which loan is to be granted? Money creation? Or foreign lenders will lose their loan market in Bangladesh? There may be some positive side also, not?

    • In that case there will be no new money creation. It is same as negative balance of payment.

      • Thanks,
        BOT will be negative if import exceeds exports. Whatever the sources, BOT will be reduced upto the import payments. FA will support, if payment is settled out of external loans, to balance the situation. International reserve will be reduced up to such extent if it is used for settlements of import payments.

        Thanks again……

Leave a Reply

Your email address will not be published.