বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক মুসলমান। এবং এই মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ কিছু হাইব্রিড বাঙালি ইসলামী ভ্যালু ধারণ করে। যেমন, ব্যক্তিগত জীবনে এদের সুদ খাইতে আপত্তি নাই, গীবত, অন্যের সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া এই ধরনের বেশ কিছু বিষয়ে ইনারা ইসলামী নিয়ম নীতি পরোয়া করেন না। কিন্তু উনারা জুমার নামাজ পড়বেন সবাই মিলে। জীবনে একবার হজ করে সকল গুনা খাতা হজরে আসওয়াদে চুম্মা দিয়ে ঝেড়ে আসবেন।
ঠিক তেমনি রাষ্ট্রীয় জীবনে এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ খেলাফত কামনা করে। কিন্তু কোন ধর্মীয় দল কে এদেশের মানুষ ক্ষমতার ধারে কাছে আসতে দেয় নাই। এবং জনমানুষের চাওয়াতেই বাংলাদেশে কোন ইসলামী রাষ্ট্র হয় নাই।তো বাংলাদেশের মানুষ তার মনের মধ্যে খেলাফত কায়েম করার বাসনা এবং ইসলামী দলগুলোর ধান্দা বাজি এবং তার জাগতিক চাওয়া-পাওয়ার বাস্তবতার ভিতর গিয়ে কম্প্রোমাইজ করে এমন একটা রাষ্ট্র স্থাপন করেছে যে রাস্ট্র মোটামুটি দাগে- পরধর্ম আচার সহিষ্ণু, ভাস্কর্য সহিষ্ণু, ফেইসবুক সহিষ্ণু , গানা বাজনা সহিষ্ণু, শাড়ি সহিষ্ণু, ও নারী প্রধানমন্ত্রী সহিষ্ণু- আবার সংবিধানে বিসমিল্লাহ লাগানো আছে।এই ইসলাম এবং বাঙালি বাংলাদেশি পরিচয় কম্প্রোমাইজে তৈরি রাষ্ট্রে – রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন ধরনের ভাস্কর্য বন্ধ করার সুযোগ নাই।যদি করতে হয় তবে সেটা জনগণের সম্মতি নিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে ভোটাধিকার এর মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করে করতে হবে।
এতোটুকু হয়তো সবাই কমবেশি এগ্রি করবেন।আমার বরং আপত্তি সেকুলারদের কে নিয়ে। এই যে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মূর্তি, এটা কিন্তু কোন ভাস্কর্য না এটা কিন্তু আসলেই মূর্তি। এবং এটার উদ্দেশ্যই হচ্ছে পূজা করা। অনেকে এখনও ধারণ করতে পারতেছেন না, যা আমি অনেক দিন ধরে বলে আসছি- আওয়ামী লীগ কিন্তু বেসিক্যালি একটা ধর্ম। শেখ মুজিব সেই ধর্মের প্রেরিত পুরুষ। আওয়ামীলীগ এই ধর্মটাকে এই রাষ্ট্রের উপরে চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। আওয়ামী লীগ চাচ্ছে দেশের মোড়ে মোড়ে শেখ মুজিবের মূর্তি স্থাপন করে নিশ্চিত করতে মানুষ যেন সকাল-বিকাল শেখ মুজিবকে পূজা করতে পারে।এই কাজ লিটারেলি করা হয়েছে পাঠ্যপুস্তক এবং বিবিধ প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে। শেখ মুজিব পূজাকে এ্যাবসল্যুট করার জন্য ব্লাসফেমি আইন করা হয়েছে। বিভিন্ন দিবসে, বঙ্গবন্ধু পূজার বাৎসরিক আচারগুলো করা হয়।
কিন্তু সেটুকুতে উনাদের শান্তি লাগতাছে না ফলে উনারা এখন ফিগারেটিভলি মূর্তি স্থাপন করে সেটা নিশ্চিত করতে চাচ্ছেন।ইসলামী মৌলবাদীদের ডিমান্ড আমি বুঝতে পারি। উনারা চাইবেন উনাদের ভ্যালু রাষ্ট্রের উপরে স্থাপন করতে। সেটা ওনারা চাইতে পারেন। সেইটা কতদূর কায়েম হবে এটা নাগরিক ফয়সালা করবে। কিন্তু, আমার আপত্তি সেকুলারদের সাথে। কারণ উনাদের দাবি হচ্ছে রাষ্ট্র কারো উপরে রাষ্ট্রধর্ম চাপায় দিবে না। রাষ্ট্র নিজে থেকে কোনো বিশেষ ধর্মের পূজা আয়োজন করবে না।কিন্তু আওয়ামী লীগ ধর্ম যে এই রাষ্ট্রের সকল ধর্মের উপরে উঠে , তাঁর পয়গম্বরের মূর্তি সকল মোড়ে মোড়ে স্থাপন করতেছে- এইটাতে উনারা সেক্যুলারিজমের কোন প্রবলেম দেখেন কিনা?যদি না দেখেন, কেন দেখেন না?ধর্ম কি শুধুমাত্র, আল্লাহর আইন?নাস্তিকদের অবিশ্বাস টাও একটা ধর্ম- একটা বিলিফ সিস্টেম।
আওয়ামী লীগ যেভাবে বঙ্গবন্ধুর জীবন কর্ম অবদান এবং এই জাতির প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকার মিথলজিক্যাল আনক্রিতিক্যাল স্টরি প্রচার করছে, কার্টুনের বই ভিডিওতে – এবং বঙ্গবন্ধুর হাতে একটি অনিচ্ছুক জাতিকে স্বাধীনতা গিফট করার সুবাদে আওয়ামী লীগ যেভাবে নিজেকে জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ক্ষমতা দখল করে শাসন করে যাওয়ার বয়ান তৈরি করেছে- তাতে আওয়ামী লীগ একটা ধর্ম এবং বঙ্গবন্ধু সেই ধর্মের প্রেরিত পুরুষে পরিণত হয়েছে।এবং আওয়ামী লীগ চাচ্ছে আপনি সেই ধর্মে কনভার্ট হন।
আমি মৌলবাদীদের ইচ্ছায়- বাংলাদেশের হাইব্রিড ইসলামী বাঙালি পলিটিক্যাল সেটেলমেন্টের – বাহিরে গিয়ে পাবলিক প্লেসে ভাস্কর্য বন্ধ করার সম্পূর্ণ বিরোধী।কিন্তু উনাদের সাথে এই জায়গায় একমত যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য কোন ভাস্কর্য না এটা একটা মূর্তি ।এটার উদ্দেশ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগ ধর্মের পূজা ।আমি মনে করি, মৌলবাদীরা নয়- বরং আপনি যদি সেকুলার হয়ে থাকেন- ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে বই, পুস্তক, কার্টুন, টাকার নোট, ভিডিও সব কিছুতে দেশের গন মানুষের স্যাক্রিফাইসের ইতিহাস ইরেজ করে দিয়ে একজন ব্যক্তির মিথ স্থাপনের জন্যে পুরো জেনারেশানের ব্রেইন ইঞ্জিনিয়ারিনের উদ্দেশ্যে অবৈধ শাসকের ঢাল হিসেবে রাস্তায় রাস্তায় যে মূর্তি আপনি তার বিরোধিতা করবেন।কিছু না। বোরিং লাগতে ছিল তো। তাই এমনি একটু চিমটা দিয়ে গেলাম।
আল্লাহ হাফেজ