অর্থনীতি বিদ্যা এবং অর্থনীতিবিদদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা দিনে দিনে কমে আসতেছে

অর্থনীতি বিদ্যা এবং অর্থনীতিবিদদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা দিনে দিনে কমে আসতেছে। বিশেষত করোনা ভাইরাসের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয়য়ে তাদের এনালিসিস এবং সমাধান গুলো দেখে আমার শ্রদ্ধা শূন্যের কোঠায় চলে গ্যাছে।

অর্থনীতিবিদদের এখন আমি বলি এগ্রেগেটর বা গড়কারি বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনীতিকে এখন ডাকি আমি গড়-বিদ্যা। গড় করার সময় সর্বোচ্চ কমন সেন্স যে এপ্লাই করতে পারে তাদের আমরা এখন বলি ভালো ইকনমিস্ট। কিন্তু এই গড় বিদ্যা ও কমন সেন্সের সমন্বয়কে অর্থনীতিবিদ্যা হিসেবে চালিয়ে রাষ্ট্রের পলিসির মালিক হয়ে যাওয়া খুব বিপদজনক।

মনে করুন, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত একটা গ্রামের একটা চায়ের দোকানে পাঁচ জন কৃষক চা খাচ্ছে যাদের গড় মাসিক আয় ২০০০ টাকা। সেই দোকানে যদি আমাজনের জেফ বেজস প্রবেশ করে তবে ৫ জন কৃষকের মাসিক গড় আয় হয়ে যাবে ১০০ কোটি টাকা। এই গুলো অর্থনীতি বিদ্যার খুব টিপিকাল বায়াস যার বাহিরে আমাদের গড়-বিশেষজ্ঞরা এখনো বের হতে পারছেন না। আরো বড় সমস্যা হচ্ছে এদের কোন হিউমিলিটি নাই। বিশাল একটা ভুল করার পরে এরা পুরাণ ভুলের জন্যে কোন ব্যাখ্যা না দিয়ে নতুন একটা ব্যাখ্যা দিয়ে বসবে। এবং আগের ব্যাখ্যা যে ভুল ছিল এবং কেন সেই ভুল হয়েছে সেই নিয়ে কোন জাস্টিফিকেশান নাই সেইটা নিয়ে কোন আত্ম উপলব্ধি তাদের থাকবেনা।

করোনা ছিল বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অর্থনীতিবিদদের জন্যে একটা অগ্নি পরীক্ষা। কিন্তু আপনাদের আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি করোনা পরীক্ষায় অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ শূন্য মার্ক্স পেয়ে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছেন। শূন্য মার্ক্স পেয়ে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট কিভাবে হয় তার সব চেয়ে চমকপ্রদ উদাহরণ হচ্ছে, বাংলাদেশের রেমিটেন্স। করোনার কালে বাংলাদেশের যে কোন শীর্ষ অর্থনীতিবিদের আলাপ চেক করলে দেখবেন, তারা সকলেই বলেছে করোনা কালে বাংলাদেশের রেমিটেন্স হ্রাস পাবে কারণ বিশ্বের সকল দেশে এই সময়ে চাকুরী ছাটাই হয়েছে। ফলে করোনার পিক পিরিয়ড এপ্রিল থেকে আগস্টে রেমিটেন্সের পরিমাণ ব্যাপক হারে কমে আসার কথা। কিন্তু এই সময় কালে বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রায় ৪০% এর উপরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর ব্যখ্যা কি ? এগ্রেগেটর অর্থনীতি বিদেরা নির্লজ্জের মত তাদের এনালিসিসের ভুল স্বীকার না করে বলে গ্যাছে , এই সময়ে যারা চাকুরী হারিয়েছে তারা একবারে তাদের সঞ্চয় পাঠিয়ে দিয়েছে তাই এই সময়ে রেমিটেন্স বেড়েছে। তাছাড়া এই সময়ে ২% ইনসেন্টিভ দেওয়া হয়েছে। ফলে এই সময়ে রেমিটেন্স বেড়েছে।

ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বলেন সানেম বলেন দেবপ্রিয় সাহেব বলেন সবার ব্যাখ্যার ছিল একই। যে সময়ে গ্লোবালি চাকুরী চুতির কারনে করোনার কালে রেমিটেন্স কমার কথা। কিন্তু সেই সময়ে একটা অস্বাভাবিক প্রায় ৫০% রেমিটেন্স হয়েছে। এই অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির আর কি ব্যাখ্যা থাকতে পারে ? ফলে সবাই তাদের পূর্বের ভুল স্বীকার না করে, ট্রেন্ড দেখে বলে দিয়েছে, রেমিটেন্স বেড়েছে কারণ মানুষ চাকুরী হারিয়ে সঞ্চয় পাঠিয়ে দিয়েছ তাই রেমিটেন্স বেড়েছে। কিন্তু এই ব্যখাটা আমার কখনই সন্তোষজনক মনে হয় নাই। এবং ফাইনালি আজ আমার বন্ধু আসিফ খানের একটা ব্যখা শুনলাম যেটা আমার মনে হয়েছে,রিয়েল সিচুয়েশানকে ব্যাখ্যা করে।

কেন করোনার কালে রেমিটেন্সের এই ধরনের অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে? আসিফ ভাই নিজের ইকনমিস্ট হিসেবে দাবী করেন না, কিন্ত তিনি ম্যাক্রো ইকনমিক এনালিসিস করেন এবং আমি অর্থনীতি নিয়ে যে কোন প্রশ্নে সবার আগে উনাকে ফোন করি। এবং যে কোন সময়েই উনি আমাকে আমার অস্বচ্ছতাটা পরিষ্কার করেন। আসিফ ভাইয়ের ব্যাখ্যার টা হচ্ছে, করোনার কালে বাংলাদেশের রেমিটেন্সের কোন গ্রোথ হয় নাই। বরং রেমিটেন্স কমেছে। জাস্ট হুন্ডি কমে গ্যাছে যার কারনে প্রবাসীরা টাকা বৈধ চ্যানেলে বেশী পাঠিয়েছে ফলে ফর্মাল রেমিটেন্সের একটা অস্বাভাবিক গ্রোথ হয়েছে। আসিফ ভাইয়ের ব্যাখ্যাটা আমার প্রচণ্ড পছন্দ হয়েছে কারণ এই বিষয়টা আমি ফয়েজ ভাইকে বিগত বিগত দুই বছর ধরে বলার চেষ্টা করতেছিলাম।

বাংলাদেশের রেমিটেন্সের খুব ইন্টেরেস্টিং একটা প্যাটার্ন আছে। এই খানে মার্কেট দুইটা। একটা ফর্মাল মার্কেট যেটার ডিমান্ড সাপ্লাই বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে। যেইটার ভিত্তিতে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বা যে কোন ফর্মাল এন্টিটি বাংলাদেশের এক্সচেঞ্জ রেটকে বোঝার চেষ্টা করে। কিন্তু বাংলাদেশের রেমিটেন্সের একটা ইনফরমাল মার্কেট আছে হুন্ডি ভিত্তিক। এই মার্কেটটাকে অর্থনীতিবিদেরা কখনই বোঝার চেষ্টা করেন নাই। কিন্তু আমার হিসেবে ফর্মাল এক্সচেজ মার্কেট থেকে এই মার্কেটটা আরো বড়। কারণ, অধিকাংশ প্রবাসী বা অধিকাংশ বিদেশ ভ্রমণকারী বা ব্যবসায়ী এই মার্কেটেই ডলার কেনা বেচা করে। আমি নিজেও এক্সপোর্ট ইম্পোরটের ব্যবসা করেছি এই মার্কেটেই আমি টাকা আদান প্রদান করেছি। কিন্তু, এই প্রচণ্ড ইনফরমাল আনরেগুলেটেড মার্কেটের ডিমান্ড সাপ্লাইয়ের ব্যালেন্স কিভাবে নিয়ন্ত্রণ হয় এবং প্রাইস ইকুইলিব্রিয়াম কিভাবে নির্ধারিত সেইটা আমার কাছে একটা রহস্যের মত লেগেছে। আমার ব্যক্তিগত ধারনা ফর্মাল ফরেন এক্সচেজ মার্কেট থেকে ইনফরমাল এই মার্কেটের সাইজ খুব একটা ছোট নয়। এবং এই মারক্টের খুবই ইন্টেরেস্টিং একটা ইকুইলিব্রিয়াম আছে যা হুন্ডি সাপ্লায়ার এবং রিসিভারের খুব ডেলিকেট একটা ব্যালেন্সে নির্ধারিত হয়।

কিন্তু আসিফ ভাইয়ের থিয়োরি হচ্ছে করোনার কালে এই ইনফরমাল মার্কেটে বাংলাদেশ টাকার বিপরীতে ডলারের ডিমান্ড সম্পূর্ণ শূন্য হয়ে আসে। কারন এই সময়ে বিদেশযাত্রার পরিমাণ শূন্য হয়ে আসে। এবং বিদেশি স্টুডেন্ট বা ভারতে চিকিৎসা নেওয়ার মত কোন লোক নাই,। বা থাইল্যান্ডের প্লেজার ট্রিপ এ যাওয়ার মত কেউ নেই। ফলে মার্কেটে ডলারের কোন চাহিদা ছিল না। এবং মার্কেটে যদি ডলারের কোন চাহিদা না থাকে তবে বিদেশ থেকে যারা টাকা পাঠাবে তাদের জন্যে বিদেশি ডলার ট্রান্সফারের কোন সুযোগ ছিল না। কারণ হুন্ডি বাজারে তখন কোন ডলারের চাহিদা নাই। ফলে সৌদি আরব বলেন, মালেয়শিয়া বলেন, বা আমেরিকা বলেন – সেই খান থেকে কোন প্রবাসী টাকা পাঠাতে চাইলে সেই টাকা দেশে ট্রান্সফার করার মত কেউ নাই, কারণ বাংলাদেশে কোন ইম্পোরটর বা চিকিৎসা নিতে ভারতে চাওয়া কোন ব্যক্তির ডলারের কোন চাহিদা নাই। ইনফর্মাল মার্কেটের ডলারের চাহিদা ইকুইলাইব্রিয়াম সেসময় সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।

এই অবস্থায় প্রবাসীরা যারা, তাদের কোন পরিচিতকে দিয়ে এতদিন হুন্ডি করে টাকা পাঠাতো তাদের দেশে হুন্ডি করে টাকা পাঠানোর কোন উপায় ছিল না। এই টাকা পাঠানোর বিষয় টা খুবই সম্পর্কের সাথে জড়িত। সাধারণত প্রবাসীরা একবার যাকে দিয়ে টাকা পাঠায় রেট ঠিক থাকলে সব সময়ে তাকে দিয়েই টাকা হুন্ডি করে। কিন্তু করোনার কালে দেশে ডলারের কোন চাহিদা না থাকায় এই হুন্ডি ব্যবসায়ীরা আর ডলার কিনতে চায় নাই কারণ দেশের ভেতর ভারত-গামী চিকিৎসা বা শিক্ষা বা ওভার ইনভয়েসিনের বাজার সম্পূর্ণ বন্ধ থাকাতে সেই ডলারের কোন চাহিদা তাদের ছিল না। ফলে প্রবাসীরা যারা ২% ইন্সেন্সটিভ থাকুক না থাকুক এক্সচেঞ্জ রেটের উঠা নামার কারনে এতো দিন শুধু হুন্ডিতে টাকা পাঠাতো তাদের অনেকেই ফর্মাল চ্যানেলে টাকা পাঠাতে বাধ্য হয়। তার ফলে করোনার কালে বাংলাদেশে অর্থনীতিতে ফর্মাল চ্যানেলে পাঠানো ডলারের একটা স্ফীতি ঘটে। ফলে এই সময়ে ফর্মাল রেমিটেন্সের পরিমাণ অব্যাখ্যাত ভাবে প্রায় ৪০% এর উপরে ব্যাখ্যা পায়। আমি মনে করি আসিফ ভাইয়ের এই ব্যাখ্যাটা ফ্যান্টাস্টিক। কারণ ইট মেক সেন্স।কারণ এই সময়ে বিশ্ব ব্যাপী কর্ম সংকোচন হয়েছে এপ্রিল থেকে জুলাই পিরিয়ডে কোন ভাবেই রেমিটেন্স বৃদ্ধি পাওয়ার কথা না।এবং অর্থনীতিবিদেরা ভুং চুং যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা মোটেও কনভিন্সিং না। কিন্তু আসিফ ভাই যিনি নিজেকে অর্থনীতিবিদ হিসেবে চিহ্নিত করেন না, তার এই ব্যাখ্যা টা ব্রিলিয়ান্ট। কারণ দিস মেক্স সেন্স।

আমি অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের ফর্মাল এবং ইনফরমাল ফরেন এক্সেচজেন মার্কেটের ডাইনামিকস বোঝার চেষ্টা করেছি। এবং আমার কাছে ইট মেক্স কমপ্লিট সেন্স কেন, বিশ্ব ব্যাপী চাকুরী চ্যুতি সত্ত্বেও বাংলাদেশের রেমিটেন্স ৪০% এর উপরে বেড়েছে। কারণ এইটা একটা অসম্ভব এনামলি যার কোন কনভিন্সিং ব্যাখ্যা ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বা সিপিডি বা সানেম কেউ দিতে পারে নাই। কিন্তু, এই এনালিসিসিটা এই অদ্ভুত প্রবণতার একটা ইন্টেরেস্টিং ব্যাখ্যা দেয়। এবং আমি প্রায় ৮০% কনভিন্সড। কারণ বাংলাদেশে ইনফরমাল এবং ফর্মাল এক্সচেঞ্জ মার্কেটের ডিমান্ড সাপ্লাই ডাইনামিকস নিয়ে কোন রিসার্চ হয় নাই। কিন্তু এনেকডটাল এভিডেন্সের ভিত্তিতে ইট্মেক্স পারফেক্ট সেন্স। আগামী কয়েক মাসে বোঝা যাবে, এগ্রেগেটর দের ব্যাখ্যা নাকি আসিফ ভাইয়ের ব্যখা টা ঠিক ছিল আমার গল্প ফুরোলো। গুড বাই।

3 Comments

  1. বিদ্যা ২ প্রকার, দরকারি বিদ্যা ( যা দরকার লাগে, সিস্টম ও পারসন অনুযায়ী ভেরি করে। আর গড়কারি বিদ্যা ( যা লাগুক না লাগুক , গড়ে সবাই শিখছে) , বর্তমানের অর্থনিতীবিদদের বিদ্যা হইছে গড়কারি বিদ্যা। সবাই যা করবে কবে, তাই করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.