২০১৪ সালের পরে বাংলাদেশের অধিকাংশ ধর্ষণ মূলত রাজনৈতিক।

আবরার ফাহাদ হত্যার পরে, বুয়েটের ছাত্র রাজনীতি নিয়ে বুয়েটের একজন প্রাক্তন ছাত্র আমাকে খুব ইন্টারেস্টিং একটা অব্জারভেশান দিয়েছিল।

আমার বন্ধুটা একটি বামপন্থি দলের প্রাক্তন নেতা । তার অব্জারভেশানটা ছিল, বুয়েটে তার ছাত্রত্বকালীন পুরো পিরিয়ডে ছাত্রলীগ, ছাত্র দলের মধ্যে মধ্যে হল দখল, আধিপত্য, দলীয় কোন্দল, টেন্ডার-বাজি ইত্যাদি নিয়ে মারামারি , দখল,জখম সহ বিভিন্ন ধরনের অন্তর্দ্বন্দ্ব ছিল। কিন্তু, ছাত্র দল বা ছাত্র লিগের সাহস ছিলনা সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের উপরে আক্রমণ করার । বরং তারা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সমঝে চলতে।

আমার বন্ধু একটি উদাহরণ দিয়েছিল। বিএনপির শাসন কালীন সময়ে, সনি হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ছাত্র দল নেতা মুকিতের ডান হাত একজন নেতা (এই মুহূর্তে নাম মনে নেই কিন্তু বুয়েটের ছাত্র ছাত্রীরা ঘটনাটা জানবেন) হলের মধ্যে বা ক্যান্টিনে হঠাৎ বিভিন্ন ধরনের মাস্তানি শুরু করেছিল। বিএনপির শাসন কালীন সময়ে কয়েকজন সাধারণ ছাত্র ধরে তাকে ক্যান্টিন এর মধ্যে পিটুনি দেয়। আমি প্রশ্ন করেছিলাম যে ওই ছাত্রদের উপরে পরে কোন আক্রমণ হয় নাই?আমার বন্ধু বলেছিল যে ছাত্রদল সাধারণ ছাত্রদের পেটাবে এই ধরনের সাহস ছিল না। কারণ নির্দলীয় সাধারণ ছাত্রদের একটা সম্মিলিত শক্তি ছিল। ফলে ছাত্রদলের গুণ্ডাদের সাহস ছিল না সাধারণ ছাত্রদের উপর আক্রমণ করার।

আমার বন্ধুর অব্জারভেশানের সব চেয়ে ইন্টারেস্টিং বিষয়টা হচ্ছে, তার মতে ২০১০ সালের পর থেকে এই সিচুয়েশন পাল্টে যেতে থাকে। এই সময়ে বুয়েটে ছাত্র লীগের নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এবং ধীরে ধীরে বিশেষত ২০১৪ সালের পরে গিয়ে, সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরাই ছাত্রলীগের আক্রমণের মুখে পরে। এবং, পুলিশ, প্রশাসন এবং ছাত্র লীগ মিলে এমন এক মাস্তান-তন্ত্র চালু হয়, যার ফলে সাধারণ ছাত্রদের প্রতিরোধের সক্ষমতা ভেঙ্গে পরে । এবং যার ধারাবাহিকতায় আবরার হত্যার মতো একটা ঘটনা ঘটে।

আমার বন্ধুর এই অব্জারভেশানটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমি পুরো বাংলাদেশে রাষ্ট্রেও বুয়েটের মত মাফিয়া তন্ত্র ও পেশি শক্তির আক্রমণের মুখে জনগণের সম্মিলিত শক্তির পতনের বিষয়টা দেখি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পূর্বে বাংলাদেশের জনগণের সম্মিলিত শক্তি , আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি রাজনৈতিক শক্তির থেকে শক্তিশালী ছিল। এই কারণেই, বি এন পির দ্বিতীয় আমলে তারেক রহমানকে ব্যঙ্গ করে বা খালেদা জিয়াকে ব্যাঙ্গ করে শিশির ভট্টাচার্য- যে কার্টুন গুলো এঁকেছে- বি এন পির সাহস হয়নি শিশির ভট্টাচার্যকে জেলে ঢুকানোর । কিন্তু, তার থেকে অনেক নৈর্ব্যক্তিক এবং কম আগ্রাসী কার্টুন এঁকে আমার বন্ধু আহমেদ কবির কিশোর এখন জেলে।

এর কারন, ২০১৪ সালের ভোটার বিহীন ইলেকশনের পরে, ১৯৯০ সালের এলিট স্যাটেল্মেন্টের স্ট্রাকচার সম্পূর্ণ রূপান্তরিত হয়। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে একটি দলকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্যে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে আওয়ামী লিগের বিভিন্ন সিনিয়র নেতার অধিনে মিলিশিয়া বাহিনীর মত বাহিনী গড়ে তোলা হয়। ( ইলেকশ কমিশনে দেওয়া সম্পদের লিস্টে স্বীকৃত কামাল মজুমদারের বৈধ অস্ত্রের মুল্য ৫ কোটি টাকা, এমনি এমনি নয় ।) এবং প্রতিটি এলাকার সব চেয়ে মূল্যবোধ হীন, সব চেয়ে বিবেকহীন, সব চেয়ে নিষ্ঠুর সন্ত্রাসী গুলো আওয়ামী লীগ , ছাত্র লীগ যুব লীগ বা অন্য অঙ্গ সংগঠনে টেনে নেওয়া হয়। এদের ভোগের জন্যে দেশকে উন্মুক্ত করা হয়।এবং এই মাফিয়া বাহিনী এবং গুণ্ডা বাহিনীর আক্রমনের মুখে, এবং তাদের মিডিয়া এবং কালচারাল ব্রিগেডের প্রপাগান্ডার মুখে জনগণের সম্মিলিত শক্তির প্রতিরোধ বিলীন হয়ে গ্যাছে। মানুষের ইজ্জৎ জান এবং সম্পদ আজকে এই মাফিয়া-তন্ত্রের মুঠোয়।

২০১৪ সালের পরে, বাংলাদেশের রাজনীতির এই রূপান্তরের সাথে বাংলাদেশের বর্তমান ধর্ষণ বিশেষত গন-ধর্ষণের বিস্তারের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, এক দশক আগেও ৯৯% ক্ষেত্রে ধর্ষণের উৎস ছিল সামাজিক। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, বা দুর্বৃত্তদের হাতে অথবা বিচ্ছিন্ন ভাবে রাজনৈতিক ,প্রাতিষ্ঠানিক বা বিত্তশালী ক্ষমতাসীনদের হাতে। কিন্তু, ২০১৪ সালের পরে ধর্ষণ মূলত একটি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। এবং ধর্ষণকে জনগণের সম্মিলিত প্রতিরোধের শক্তিকে ক্রাশ করার একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। যে অস্ত্রটি একই সাথে কার্যকরণ এবং পরিণতি।

একটি অবৈধ এবং অ-জনপ্রিয়, মাফিয়া শক্তিকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সারা দেশের প্রতিটি এলাকায় দা, কিরিচ, বন্দুক, জামাত শিবির ট্যাগিং, সহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করে জনমতকে ব্যবহার করে দেশের মানুষের প্রতিরোধের শক্তিকে দমিয়ে রাখা হচ্ছে ঠিক তেমনি ধর্ষণকেও এখন সেই রকম একটি অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। ফলে ২০১৪ সালের পরে বাংলাদেশের অধিকাংশ ধর্ষণ মূলত রাজনৈতিক। এবং এইটা কোন কোইন্সিডেনস বা আওয়ামী লিগের ভেতরে থাকা দুর্বৃত্তদের মনোবিকার নয় । এইটা আওয়ামী লিগের খুবই ওপেন এবং পরিষ্কার একটি স্ট্রাটেজি।

২০১৪ সালের পরে, ক্ষমতার একচেটিয়া করনের কারণে সমাজের সম্মিলিত শক্তি বিলীন হয়ে যাওয়ার কারণে, রাষ্ট্রের পুলিশ রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিক মিলে একটা সম্পূর্ণ মাফিয়া তন্ত্রের একাধিপত্য স্থাপত্য হয়েছে। এই মাফিয়া শক্তির ক্ষমতা প্রদর্শন এবং মনোবিকার এবং রাষ্ট্রের সকল ধরনের আইনি কাঠামো ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে এখন ধর্ষণ মূলত আওয়ামী লীগ ও তার বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। একসময় বাংলাদেশে ধর্ষণ উৎস ছিল যখন সমাজের ভেতরে সে ধর্ষণের উৎস এখন রাজনৈতিক শক্তির ভেতরে। এই হাইপোথেসিস টা যে কোন রাজনৈতিক বয়ান নয় তার একটি পরিষ্কার প্রমাণ আছে।

Bangladesh Shishu Adhikar Forum (BSAF)এর থেকে নেওয়া একটা চার্ট দিচ্ছি। (তথ্যের সোর্স কমেন্টে) । এই চার্টে দেখবেন, জানুয়ারি ১৮ থেকে শুরু করে জুন ২০১৮ পর্যন্ত, বাংলাদেশের শিশু ধর্ষণের পরিমাণ সব চেয়ে কম ছিল, ডিসেম্বর ২০১৮ সালে যা ছিল ইলেকশন পূর্ব মাস। এই সময়ে আওয়ামী লীগ একটু নার্ভাস ছিল। কিন্তু, ডিসেম্বরে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পরেই, জানুয়ারি ২০১৯ এ শিশু ধর্ষণের পরিমাণ হুট করে ডিসেম্বর থেকে প্রায় ৭ গুন বৃদ্ধি পায়। এপ্রিলে গিয়ে একটা ভয়ংকর ১৫ গুন বেশি বৃদ্ধি পায় । ৫ ই জানুয়ারির ভোটার বিহীন ইলেকশনের মাত্র চার মাসের মধ্যে শিশু ধর্ষণ স্বাধীনতার পরে সর্বোচ্চ পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার এক্টাই কারন থাকতে পারে, তা হচ্ছে ধর্ষকদের আওয়ামী লিগের ইলেকশনে বিজয় থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতার সুরক্ষা। বাংলাদেশে এই সময়ে বাংলাদেশে ধর্ষণের বিস্তারের কারন এইটাই যে ধর্ষকেরা রাজনৈতিক পরিচয়ের সুরক্ষা বর্ম নিয়েই ধর্ষণে লিপ্ত হয়।

আমার বয়স চল্লিশের ঘরে। আমি রক্ষীবাহিনীর আমল দেখিনি। কিন্তু, আশির দশক থেকে একবিংশ শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত বাংলাদেশে আমি এমন কোন সময় দেখিনি যেখানে, একটি ঘরে ধর্ষিতার চিৎকার শুনে আসে পাশের মানুষ এগিয়ে আসে নাই কিন্তু কিংবা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ কিছু করে নাই। বা ধর্ষিতা পুলিশ বা অন্য কোন মানবাধিকার সংস্থার কাছে যাওয়ার সাহস পায় নাই। কিন্তু নোয়াখালীর এই গৃহবধূর ধর্ষণের যে বর্ণনা শুনেছি তাতে আমরা জানি উনি ইতোপূর্বেও কয়েক বার ধর্ষিত হয়েছেন এবং এমন কি তার ধর্ষণের সময়ে পাড়া প্রতিবেশী শব্দ শুনেছে কিন্ত এগিয়ে আসার সাহস পায় নাই। ধর্ষণ বাংলাদেশে সব সময়েই ছিল। পৃথিবীর সব চেয়ে মানবিক এবং নারী অধিকারের দেশেও ধর্ষণ হয়ে থাকে। কিন্তু, রাজনৈতিক শক্তির হাতে সারা দেশে ধর্ষণ হয় লিবিয়া, সোমালিয়া বা কঙ্গোর যুদ্ধরত অঞ্চলে – এখন বাংলাদেশে । এইটাই পার্থক্য।

বাস্তবতা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে জনগনের ভোট ব্যতীত ক্ষমতায় এসে সেই নির্বাচনে যুদ্ধে বিজয়ের পরে গনিমতের মালের মত তাকে ক্ষমতা দখল করতে সাহায্য করা সোনাবাহিনী কে পুরো দেশকে ছেড়ে দিয়েছেন ।আজকে, তাই দেখবেন ধর্ষণ করছে পুলিশ, ধর্ষণ করছে ছাত্রলীগ করছে বা আওয়ামী লীগ নেতার পুত্র বা আত্মীয় স্বজনেরা। এই ধর্ষণ রাজনৈতিক- যারা তাকে ক্ষমতায় এনেছে। আওয়ামী লীগ জানে, বাংলাদেশের মানুষের একটি আন্দোলন সংগ্রামের ঐতিহ্য আছে তাই, মানুষের স্পিরিট কে ক্রাশ করতে হলে তাকে ব্রুট হতে হবে। একটি জনপদের নাগরিক শক্তিকে ক্রাশ করতে হলে ধর্ষণ বিশেষত গন ধর্ষণের চেয়ে কার্যকর আর কোন অস্ত্র নেই। এই অস্ত্রের ব্যবহারে শুধু নারী নয়, পুরো সমাজের জন্যে সিগনাল। ফলে এই রাজনৈতিক ধর্ষণকে বন্ধ করতে হলে আপনাকে প্রথমে এই রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। এইটা বাংলাদেশের একজন সাধারণ সিএনজি ওয়ালাও জানে। কিন্তু বাংলাদেশের একটা শ্রেণি এই রাজনৈতিক ধর্ষণকে আইনি সমস্যা বা সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখাতে চায়। তারা ধর্ষণের এই রাজনৈতিক রুপটা দেখে না। বা এইটা তাদের কাছে সমস্যা না। কিন্তু এরাই আবার ধর্ষণ দূর করতে আন্দোলন সংগ্রাম করে।

বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে যতক্ষণ পর্যন্ত শেখ হাসিনা জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ক্ষমতায় থাকবে। কোন আইন, কোন ক্রসফায়ার কোন ধর্ষণ বিরোধী দাবী দাওয়া দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ধর্ষণ বন্ধ হবেনা। কারন, একচেটিয়া ক্ষমতাকে ব্যবহার করে দেশের জনপদে জনপদে মানুষের প্রতিরোধের চেতনাকে ক্রাশ করতে ধর্ষণের যে অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে – এই নিপিড়ন ই এই সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখে। ফলে সজ্ঞানে সরকার এমন কোন কিছু করবেনা, যার ফলে তার ক্ষমতার কাঠামো নস্ট হয়। এই টুকু বাস্তবতা নিজের চোখে দেখেও না বুঝার ভান করে, এই ধর্ষণকে সামাজিক বা আইনি সমস্যা হিসেবে দেখিয়ে তার আইনি সমাধানের জন্যে যারা রাজনীতি বা বিক্ষোভ করছেন তারা জাস্ট জনগণকে ডিপলিটিসাইজ করে আওয়ামী লীগকে রক্ষা করছেন মাত্র।। এবং ধর্ষণকে জনগণের সম্মিলিত প্রতিরোধের শক্তিকে ক্রাশ করার একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। যে অস্ত্রটি একই সাথে কার্যকরণ এবং পরিণতি।

একটি অবৈধ এবং অ-জনপ্রিয়, মাফিয়া শক্তিকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সারা দেশের প্রতিটি এলাকায় দা, কিরিচ, বন্দুক, জামাত শিবির ট্যাগিং, সহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করে জনমতকে ব্যবহার করে দেশের মানুষের প্রতিরোধের শক্তিকে দমিয়ে রাখা হচ্ছে ঠিক তেমনি ধর্ষণকেও এখন সেই রকম একটি অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। ফলে ২০১৪ সালের পরে বাংলাদেশের অধিকাংশ ধর্ষণ মূলত রাজনৈতিক। এবং এইটা কোন কোইন্সিডেনস বা আওয়ামী লিগের ভেতরে থাকা দুর্বৃত্তদের মনোবিকার নয় । এইটা আওয়ামী লিগের খুবই ওপেন এবং পরিষ্কার একটি স্ট্রাটেজি। ২০১৪ সালের পরে, ক্ষমতার একচেটিয়া করনের কারণে সমাজের সম্মিলিত শক্তি বিলীন হয়ে যাওয়ার কারণে, রাষ্ট্রের পুলিশ রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিক মিলে একটা সম্পূর্ণ মাফিয়া তন্ত্রের একাধিপত্য স্থাপত্য হয়েছে। এই মাফিয়া শক্তির ক্ষমতা প্রদর্শন এবং মনোবিকার এবং রাষ্ট্রের সকল ধরনের আইনি কাঠামো ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে এখন ধর্ষণ মূলত আওয়ামী লীগ ও তার বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। একসময় বাংলাদেশে ধর্ষণ উৎস ছিল যখন সমাজের ভেতরে সে ধর্ষণের উৎস এখন রাজনৈতিক শক্তির ভেতরে। এই হাইপোথেসিস টা যে কোন রাজনৈতিক বয়ান নয় তার একটি পরিষ্কার প্রমাণ আছে।

Bangladesh Shishu Adhikar Forum (BSAF)এর থেকে নেওয়া একটা চার্ট দিচ্ছি। (তথ্যের সোর্স কমেন্টে) । এই চার্টে দেখবেন, জানুয়ারি ১৮ থেকে শুরু করে জুন ২০১৮ পর্যন্ত, বাংলাদেশের শিশু ধর্ষণের পরিমাণ সব চেয়ে কম ছিল, ডিসেম্বর ২০১৮ সালে যা ছিল ইলেকশন পূর্ব মাস। এই সময়ে আওয়ামী লীগ একটু নার্ভাস ছিল। কিন্তু, ডিসেম্বরে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পরেই, জানুয়ারি ২০১৯ এ শিশু ধর্ষণের পরিমাণ হুট করে ডিসেম্বর থেকে প্রায় ৭ গুন বৃদ্ধি পায়। এপ্রিলে গিয়ে একটা ভয়ংকর ১৫ গুন বেশি বৃদ্ধি পায় । ৫ ই জানুয়ারির ভোটার বিহীন ইলেকশনের মাত্র চার মাসের মধ্যে শিশু ধর্ষণ স্বাধীনতার পরে সর্বোচ্চ পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার এক্টাই কারন থাকতে পারে, তা হচ্ছে ধর্ষকদের আওয়ামী লিগের ইলেকশনে বিজয় থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতার সুরক্ষা। বাংলাদেশে এই সময়ে বাংলাদেশে ধর্ষণের বিস্তারের কারন এইটাই যে ধর্ষকেরা রাজনৈতিক পরিচয়ের সুরক্ষা বর্ম নিয়েই ধর্ষণে লিপ্ত হয়।

আমার বয়স চল্লিশের ঘরে। আমি রক্ষীবাহিনীর আমল দেখিনি। কিন্তু, আশির দশক থেকে একবিংশ শতকের প্রথম দশক পর্যন্ত বাংলাদেশে আমি এমন কোন সময় দেখিনি যেখানে, একটি ঘরে ধর্ষিতার চিৎকার শুনে আসে পাশের মানুষ এগিয়ে আসে নাই কিন্তু কিংবা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ কিছু করে নাই। বা ধর্ষিতা পুলিশ বা অন্য কোন মানবাধিকার সংস্থার কাছে যাওয়ার সাহস পায় নাই। কিন্তু নোয়াখালীর এই গৃহবধূর ধর্ষণের যে বর্ণনা শুনেছি তাতে আমরা জানি উনি ইতোপূর্বেও কয়েক বার ধর্ষিত হয়েছেন এবং এমন কি তার ধর্ষণের সময়ে পাড়া প্রতিবেশী শব্দ শুনেছে কিন্ত এগিয়ে আসার সাহস পায় নাই। ধর্ষণ বাংলাদেশে সব সময়েই ছিল। পৃথিবীর সব চেয়ে মানবিক এবং নারী অধিকারের দেশেও ধর্ষণ হয়ে থাকে। কিন্তু, রাজনৈতিক শক্তির হাতে সারা দেশে ধর্ষণ হয় লিবিয়া, সোমালিয়া বা কঙ্গোর যুদ্ধরত অঞ্চলে – এখন বাংলাদেশে । এইটাই পার্থক্য।

বাস্তবতা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে জনগনের ভোট ব্যতীত ক্ষমতায় এসে সেই নির্বাচনে যুদ্ধে বিজয়ের পরে গনিমতের মালের মত তাকে ক্ষমতা দখল করতে সাহায্য করা সোনাবাহিনী কে পুরো দেশকে ছেড়ে দিয়েছেন ।আজকে, তাই দেখবেন ধর্ষণ করছে পুলিশ, ধর্ষণ করছে ছাত্রলীগ করছে বা আওয়ামী লীগ নেতার পুত্র বা আত্মীয় স্বজনেরা। এই ধর্ষণ রাজনৈতিক- যারা তাকে ক্ষমতায় এনেছে। আওয়ামী লীগ জানে, বাংলাদেশের মানুষের একটি আন্দোলন সংগ্রামের ঐতিহ্য আছে তাই, মানুষের স্পিরিট কে ক্রাশ করতে হলে তাকে ব্রুট হতে হবে। একটি জনপদের নাগরিক শক্তিকে ক্রাশ করতে হলে ধর্ষণ বিশেষত গন ধর্ষণের চেয়ে কার্যকর আর কোন অস্ত্র নেই। এই অস্ত্রের ব্যবহারে শুধু নারী নয়, পুরো সমাজের জন্যে সিগনাল। ফলে এই রাজনৈতিক ধর্ষণকে বন্ধ করতে হলে আপনাকে প্রথমে এই রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে।

এইটা বাংলাদেশের একজন সাধারণ সিএনজি ওয়ালাও জানে। কিন্তু বাংলাদেশের একটা শ্রেণি এই রাজনৈতিক ধর্ষণকে আইনি সমস্যা বা সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখাতে চায়। তারা ধর্ষণের এই রাজনৈতিক রুপটা দেখে না। বা এইটা তাদের কাছে সমস্যা না। কিন্তু এরাই আবার ধর্ষণ দূর করতে আন্দোলন সংগ্রাম করে।

বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে যতক্ষণ পর্যন্ত শেখ হাসিনা জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ক্ষমতায় থাকবে। কোন আইন, কোন ক্রসফায়ার কোন ধর্ষণ বিরোধী দাবী দাওয়া দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ধর্ষণ বন্ধ হবেনা। কারন, একচেটিয়া ক্ষমতাকে ব্যবহার করে দেশের জনপদে জনপদে মানুষের প্রতিরোধের চেতনাকে ক্রাশ করতে ধর্ষণের যে অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে – এই নিপিড়ন ই এই সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখে। ফলে সজ্ঞানে সরকার এমন কোন কিছু করবেনা, যার ফলে তার ক্ষমতার কাঠামো নস্ট হয়। এই টুকু বাস্তবতা নিজের চোখে দেখেও না বুঝার ভান করে, এই ধর্ষণকে সামাজিক বা আইনি সমস্যা হিসেবে দেখিয়ে তার আইনি সমাধানের জন্যে যারা রাজনীতি বা বিক্ষোভ করছেন তারা জাস্ট জনগণকে ডিপলিটিসাইজ করে আওয়ামী লীগকে রক্ষা করছেন মাত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published.