আল্লামা শফিকে নিয়ে শ্রদ্ধেয় ফরহাদ মজহারের মুল্যায়ন নিয়ে কিছু কথা।

হেফাজতে ইসলামির আমির শাহ আহমদ শফীর আল্লামা শফীর মৃত্যুকে হত্যা বলে অভিহিত করে প্রাতিষ্ঠানিক ঘৃণাজিবিরা তার হত্যার বিচার চাইতেছেন, সেকুলার ঘরানার মাফিয়া পরিচালিত মিডিয়াতে হেডলাইন হচ্ছে, নিভে গ্যাছে অসাম্প্রদায়িকতার বাতিঘর , র‍্যাবের ডিজি শোক-বানি দিয়েছেন, অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে তার আপসহীন ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

এক সময়ে যাকে তেঁতুল হুজুর অভিহিত করে সেকুলার শিবিরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পক্ষ বিপক্ষ নির্ধারণ হয়েছে তার মৃত্যুতে আজকে তাদের এই ১৮০ ডিগ্রি এবাউট টার্ন দেখায় দেয় বাংলাদেশের আওয়ামী রাজনীতির ফুট সোলজারদের ভণ্ডামিটা কত নির্লজ্জ রকম পিচ্ছিল। এদের নিয়ে বলার কিছু নাই

।আমি বরং আল্লামা শফিকে নিয়ে মূল্যায়নে, শ্রদ্ধেয় ফরহাদ মজহারের স্ট্যাটাস টা নিয়ে কিছু কথা যোগ করতে চাই।চিন্তার জগতে ফরহাদ মজহারের অবদান নিয়ে আমার ভক্তি ও শ্রদ্ধা এবং তার রাজনৈতিক এবং চিন্তার সততা নিয়ে আমার চরম অনুরাগ রয়েছে- তা বিভিন্ন সময়ে লিখেছি।কিন্তু সেই অনুরাগ এবং শ্রদ্ধাকে তার নিজের জায়গাতে রেখেই আমি সব সময়ে অনুভব করেছি , শাহবাগ এবং তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ঘটনা নিয়ে জনাব মজহার অতি সরলীকৃত বাইনারির বাহিরে যেতে পারেন নাই, সেই ২০১৪ সালেই। এবং আজকে, ২০২০ সালে এসেও আল্লামা শফীর মৃত্যুর পরেও তিনি সেই অতি সরলীকৃত ন্যারেটিভের ভেতরে আটকে আছেন।

এবং আল্লামা শফীর প্রি এবং পোস্ট ৫ই মের কর্ম কাণ্ডকে তিনি একটা ভুল এক্সপেকটেশন দিয়ে বিচার করেছেন।তার লেখার চুম্বকাংশ উল্লেখ করলে আলোচনা সহজ হয়, তিনি লিখেছেন,—————— “আল্লামা শাহ আহমদ শফী মূলত ধর্মবেত্তা বা ধর্মতত্ত্বে আলেম। সমাজ বিজ্ঞান তাঁর বিষয় নয়, এবং তিনি রাজনৈতিক নেতাও নন।

কিন্তু বাংলাদেশের এক অদ্ভুত ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ তাঁকে একটি বিশাল জাতীয় রাজনৈতিক মঞ্চে টেনে এনেছিল। ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদ এবং ধর্ম নিরপেক্ষতা-বাদীদের আগ্রাসী আস্ফালনের বিপরীতে দুই হাজার তেরো সালে গড়ে ওঠা গণ-মানুষের প্রতিরোধ আন্দোলনের তিনি অবিসংবাদী নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। দুর্নীতিবাজ, অসৎ, ক্ষমতা-লোভী ও গণ-বিরোধী জাতীয় রাজনৈতিক দলের বিপরীতে ‘অরাজনৈতিক’ (?) এবং ‘নির্দলীয়’ (?) হেফাজতে ইসলাম হয়ে উঠেছিল জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের মাধ্যম।কিন্তু তার জন্য আল্লামা আহমদ শফী কিম্বা হেফাজতে ইসলামের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের কেউই প্রস্তুত ছিলেন না।

জাতীয় ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন গড়ে ওঠে। …… দুই হাজার তেরো সালে ইসলাম বিদ্বেষী এবং ইসলাম নির্মূল রাজনীতির বিপরীতে গড়ে ওঠা হেফাজতে ইসলামের প্রতিরোধ সংগ্রাম ও লড়াইয়ের চূড়ান্ত জয় পরাজয় নির্ণয়ের মূহর্ত ছিল শাপলা চত্বর। শাপলা চত্বরে জনগণের লড়াই নতুন রূপ ধারণ করেছিল।সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা শাপলা মঞ্চের তাৎপর্য আল্লামা আহমদ শফী ধরতে পারেন নি। রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং প্রজ্ঞার জন্য যে এলেম, হিকমত ও আমল জরুরি, তিনি সেই পথ ধরে বেড়ে ওঠেন নি। ফলে জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে তিনি সরে এসেছেন। শাপলা চত্বরে তাঁর হাজির থাকা এবং মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শেষ করবার কথা থাকলেও তিনি যান নি। অর্ধ পথ এসে ফিরে এসেছেন।

বাংলাদেশের জনগণকে ফ্যাসিস্ট শক্তি, দিল্লীর আগ্রাসন এবং পরাশক্তির আধিপত্য থেকে মুক্ত করবার জন্য জনগণের অতি প্রত্যাশিত মোনাজাতটি তিনি আল্লাহর দরবারে হাত তুলে জানাতে পারেন নি।আল্লামা আহমদ শফীর আধ্যাত্মিক জীবনের তুঙ্গ মুহূর্তে এটা ছিল করুণ পিছু হটে আসা।এর পরের ঘটনা আমরা জানি। জালিম শাসন ব্যবস্থা ও শাসক শ্রেণী অক্ষত রয়ে গেল, বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট শাসন ব্যবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হোল। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে সবাই বিস্মিত হয়ে দেখলো আল্লামা আহমদ শফী তাদের কাছ থেকেই কওমি মাদ্রাসার সনদ নিচ্ছেন, যাদের গণ বিরোধী ও ইসলাম বিদ্বেষী রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়েই হেফাজতে ইসলাম গড়ে উঠেছিল। সাধারণ মানুষ এবং মাদ্রাসার তরুণ ছাত্ররা এই আপোষ মেনে নেয় নি”।

——————শ্রদ্ধেয় ফরহাদ মজহার রাজনীতিকে দেখেন যে জায়গা থেকে দেখেন সেখান থেকে এই মূল্যায়নটা স্বাভাবিক ও সঠিক। কিন্তু, একটা দূরবর্তী জায়গা থেকে দেখতে গেলে জনাব মজহার প্রেক্ষাপটের যে বিশ্লেষণ করেছেন, সেই বিশ্লেষণ ২০১৪ সালেও ভ্রান্তি-পূর্ণ মনে হয়েছে আমি সেই সময়েই লিখেছি , আজকে ২০২০ সালে এসেও উনার প্রেক্ষাপটকে নিয়ে আমার মূল্যায়ন হচ্ছে- উনার ভ্রান্তি এখনো কাটেনি।

জনাব মজহারের প্রথম ভ্রান্তি হচ্ছে, শাহবাগ আন্দোলন হতে শাপলা পর্যন্ত পরিচালিত ঘটনাবলিকে “ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদ এবং ধর্ম নিরপেক্ষতা-বাদীদের আগ্রাসী আস্ফালনের বিপরীতে গণ-মানুষের প্রতিরোধ আন্দোলন” হিসেবে চিহ্নিত করা।২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ করা শাহবাগ থেকে হেফাজত বইয়ের ফাইনাল চ্যাপ্টারের পুরো বছরের মূল্যায়নে লিখেছিলাম, , শাহবাগ ছিল মূলত যুদ্ধপরাধিদের ক্ষমতা থেকে দুরের রাখার নামে, ২০১৪ সালের সুনিশ্চিত পরাজয়ের সম্ভাবনায় থাকা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্যে সেকুলারদের একটা আন্দোলন এবং শাপলা ছিল শাহবাগের এই ইন্টেনশানকে কাউন্টার দেওয়ার জন্যে ইলেকশন ইয়ারে বিএনপিকে রক্ষা করার জন্যে ইন্টারনেটের কোনায় কাচায় পরে থাকা প্রচণ্ড ঘৃণ্য ইসলাম বিদ্বেষী ও হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বিদ্বেষী কিছু লেখাকে একটা মেইন্সট্রিম পত্রিকার প্রথম পেজে ছাপিয়ে দেশের মানুষকে খুঁচিয়ে ক্ষুব্ধ করার একটা রিএকশান।

আজকে, ২০২০ সালেও আমার সেই মূল্যায়নে এক ইঞ্চি পরিবর্তন হয় নাই।শাহবাগ এবং শাপলা উভয়টিই আমার কাছে ইলেকশন ইয়ারে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির বা বিএনপির পক্ষের লোকদের দুইটা গুটি।এইটা এখন মেনে নিতে অনেকেরই কস্ট হবে, কিন্তু অস্বীকার করলেই বাস্তবতা পরিবর্তন হয় না যে, শাহবাগের প্রাথমিক বিক্ষোভ গুলো ছিল মূলত আওয়ামী লিগের সাথে জামাতের একটা আঁতাত হয়েছে সেই নিয়ে একটা সামাজিক গুজবের মুখে।এইটা ছিল একটা এন্টি এস্টাব্লিশ্মেন্ট টাইপের একটা ছোট আন্দোলন- যা কেউ তখন ভাবেনি যে গুরুত্বপূর্ণ হ্যে উঠবে।কিন্তু, আওয়ামি লীগ এর পটেন্সিয়াল বুঝতে পারে এবং তারা সেইটা দখল করে, তার বিরানি ব্রিগেড দিয়ে।

বিরানি ইমরান আওয়ামী লিগের অনেক পুরাতন ইনভেস্টমেন্ট যার মধ্যে বামপন্থিরা রাজনৈতিক সম্ভাবনা দেখেছিল।যদিও সে শুরু থেকেই কম্প্রোমাইজড ছিল। এই বিরানি ইমরান এবং তার মাঝে রাজনৈতিক সম্ভাবনা দেখে তাকে প্যাট্রোনাইজ করা পেটি বামপন্থি নেতারা এবং প্রধান মন্ত্রীর অফিসের এজেন্টরা মিলে শাহবাগকে দিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ধ্বংস করে, এই রাষ্ট্রকে সম্পূর্ণ ভাবে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এইটা যেমন ঠিক।সাথে সাথে এইটাও ঠিক, শাহবাগ আন্দোলন ছিল, আওয়ামী লীগকে রক্ষার জন্যে ছায়ানট ঘরানার একটা কালচারাল আন্দোলন।

ওয়ার অন টেরর এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নাম দিয়ে আওয়ামি ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখাই এর লক্ষ্য। কিন্তু, এর কোন নাস্তিক্যবাদি রূপ ছিল না। নবী-বিরোধী বা ইসলাম বিরোধী কোন রূপ ছিল না। বাঙালি সেকুলার ছায়ানটিদের যত টুকু ইন্সিন্ট্রিক ইসলাম বিদ্বেষ আছে শাহবাগের নটীদের ততটুকুই ছিল। এই আন্দোলনের কোন বিশেষ আলাদা ইসলাম বিদ্বেষ ছিল না।কিন্তু শুধু মাত্র, আমার দেশের প্রচারণায় ইন্টারনেটের কণায় কাচায় পরে থাকে, অত্যন্ত ঘৃণ্য কিছু লেখাকে প্রথম পাতায় ছাপিয়ে বিএনপিকে রক্ষার করার জন্যে একে একটা নাস্তিক্যবাদি রূপ দিইয়েছে, মূলত আমার দেশ।

অবশ্যই রাজীবের মৃত্যুর পরে, তাকে নিয়ে শাহবাগের তৎকালীন বিরানি ব্রিগেডের রিএকশান ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু, সেইটাও আবার ছিল,আমাদের দেশের আর্টিকেল গুলোর রিএকশান।২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ঘটনা গুলোতে শাহবাগ এবং হেফাজত উভয়েই রাজনৈতিক গুটি হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছে মাত্র।

এইটাকে আওয়ামী লীগ দেখাতে চায়, যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে গন-মানুষের জাগরণ এবং শ্রদ্ধেয় মজহার সাহেব সহ অনেকে চিহ্নিত করেছেন ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদ এবং ধর্ম নিরপেক্ষতা-বাদীদের আগ্রাসী আস্ফালনের বিপরীতে গণ-মানুষের প্রতিরোধ আন্দোলন” হিসেবে- আমার হিসেবে উভয় পক্ষই অবস্থানই প্রোপাগান্ডা মূলক।কিন্তু, আমি সেই সময়ে বালেগ ছিলাম। এবং সেই সময়ে দেখেছি এবং বলেছি, এবং আগামিতেও বলবো । “মৌলানা সায়েদির রায়ের পরে সারা দেশে বিক্ষোভ এবং প্রতি দিন, ইন্টারনেটের কোণায় কাঁচায় ছড়িয়ে থাকে, জিরো ভিজিবিলিটি অত্যন্ত ঘৃণ্য ইসলাম বিরোধী কিছু আরটিকেকেলকে শাহবাগের রিফ্লেকশান হিসেবে কনভার্ট করা আমার দেশের সাফল্য। কিন্তু, এইটা একটা পলিটিকাল গেম ছিল।

শাহবাগের বাংলাদেশের বিচার বিভাগ এবং জাস্টিসকে ধ্বংস করার ফ্যাসিস্টকে কাউন্টার দেওয়ার জন্যে আমার দেশের নেতৃত্বে সফল কাউন্তার রেভুলসিশান।কিন্তু এইটার প্রেমিসটা ছিল ইলেকশান ইয়ারে আওয়ামি লীগকে কাউন্টার দেওয়ার প্রপাগান্ডা। “।ফলে হেফাজত জাস্ট ছিল, আমার দেশের প্রোপাগান্ডার ফলে সৃষ্ট একটা গুটি মাত্র।এই জায়গায়, জনাব মজহার ক্ষেদ প্রকাশ করেছেন যে, আল্লামা শফী শাপলার তাৎপর্য ধরতে পারেন নাই এবং অর্ধপথে এসে ফাইনালি ৫ ই মের শাপলার চত্বরে জয়েন করেন নাই। এবং পিছু হটার মাধ্যমে আন্দোলনকে পরিণত করার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তাকে বিকাশ হতে দেন নাই। এবং তারপরে তিনি বরং তার নিজের, পরিবার এবং এমনকি মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রীদের জন্যে কিছু সুবিধা আদায় করতে আপোষ করেছেন।

শ্রদ্ধেয় মজহার সাহেবের এই আলোচনায় ধরে নেওয়া যায় তিনি মনে করেন, যে আল্লামা শফী যদি ৫ এই মে , শাপলা চত্বরের মিটিঙে জয়েন করতেন তবে ঘটনাবলি অন্যভাবে ঘটতে পারতো।এবং তার পরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটা গন জাগরণ ঘটিয়ে পরবর্তীতে তাদের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল ঠেকানো যেত । তাই, তিনি হেফাজতের আন্দোলনের ব্যর্থতারর পেছনে মৌলানা শফীর পিছু হটাকে দায়ী করেছেন।জনাব মজহারের এই সব গুলো এজাম্পশ্নান আমি ত্রুটি পূর্ণ মনে করি।

আল্লামা শফিকে নিয়ে আমার নিজস্ব সমালোচনা আছে যা আমি পরে লিখবো কিন্তু এই জায়গায় আমি মনে করি পিছু হেটে শফী সাহেব ঠিক কাজটি করেছেন।কারন তিনি বুঝেছেন,অপরিপক্ব একটা শক্তিকে, পরিণত হওয়ার পূর্বেই একটা সংগঠিত বাহিনীর বিরুদ্ধে মুখোমুখি দাঁড় করার যে যুদ্ধ মজহার সাহেবরা চাইতেছেন। সে যুদ্ধের সৈনিক মাদ্রাসার ছেলেরা একটা বাটার স্যান্ডেল পরে পকেটে হয়তো ৫০ কি ২০০ টাকা নিয়ে, ২০ টাকার গুড় মুড়ি খেয়ে আধপেটা অবস্থায় রসুলের ইজ্জত রক্ষার জন্যে দূর দূরান্ত পার দিয়ে শাপলায় জর হয়েছে। শফী সাহেব হয়তো বুঝেছিলেন, যদি সত্যি মজহার সাহেব দের এক্সপেকটেশন মত এই ছেলে গুলো “জালিম শাসন ব্যবস্থা ও শাসক শ্রেণী ” বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দাঁড়ায় তবে, সত্যি সত্যি মাদ্রাসার হাজার হাজার ছেলে মারা পরতে পারে।

ছাড়া ছাড়া ভাবে আমি শুনেছি শফী সাহেবকে পথ থেকে, ইন্টেলিজেন্স বাহিনী সরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সেইটা যদি সত্যি নাও হয়ে থাকে, তিনি যদি নিজের ইচ্ছায়, সেই দিনের মিছিলে যোগদান থেকে বিরত থাকেন তবে মজহার সাহেব, শফী সাহেবের এই পিছু ফেরাকে পরাজয় এবং পলায়নপরতা হিসেবে স্বীকৃতি স্বীকৃতি দিলেও।আমি মনে করি, শফি সাহেব বরং, রিয়েলিস্ট ছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন, তিনি কোন মতেই এই যুদ্ধে বিজয়ী হতে পারবেন না।

এই খানে আমার একটা এসেসেমেন্ট আছে। তা হচ্ছে, বাংলাদেশের ট্র্যাডিশনাল সকল রাজনীতিবিদ এবং বিশ্লেষক, আওয়ামী লিগের ভায়োলেন্সের সক্ষমতা এসেস করতে ভুল করে।তারা সকলেই মনে করেন, বাংলাদেশের বিরোধী দলের ব্যর্থতা হচ্ছে, তারা ১০ লক্ষ বা ২০ লক্ষ মানুষকে রাস্তায় নামাতে না পারা। এবং পারলেই আওয়ামী লিগের পতন হবে। এবং এইটাই তাদের সকল রাজনৈতিক এক্টিভিটির প্রধান লক্ষ্য। এইটাকে তারা বলেন, গনবিপ্লব।

ফরহাদ মজহার থেকে জোনায়েদ সাকি, মাহমুদূর রহমান থেকে মাহমুদূর রহমান মান্না, নুরুল কবির থেকে মির্জা ফখরুল আলমগির সকলেরই এই বিপ্লব ফ্যাটিশ আছে।আমি মনে করি, ইনারা সবাই আওয়ামী লিগের ভায়োলেন্সের পটেনশিয়াল এসেস করতে ভুল করে। আওয়ামী লীগ এখনো তার পটেনশিয়াল ভায়োলেন্সের .০০০০০১% ও ব্যবহার করে নাই। এবং আওয়ামী লীগ কেপেবল, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্যে তাদের এই ক্যাপাসিটির ১০০% ব্যবহার করতে। এবং বাংলাদেশকে আফগানিস্তান হওয়া ঠেকানোর জন্যে ৩ লক্ষ স্বাধীনতা বিরোধী হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিকে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে। এই বয়ান তখনও মাঠে ছিল। একই সাথে ওয়ার অন টেররের বয়ান, এবং ভারতীয় প্রোপাগান্ডায় তৈরি কালচারাল বামের সকল স্তরে ইন্ডিয়ান র এর ইনফিল্ট্রেশান এবং উন্নয়নের বয়ান , শেখ হাসিনার উপরে গ্রেনেড হামলা এবং আওয়ামী লিগের নিশ্চিহ্নকরনের বয়ান সহ কোন কিছু মোকাবেলা না করে শুধু মাত্র সংখ্যার শক্তি দিয়ে, রাস্তায় আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করার যে ভাবনা তাতে শফী সাহেবের পিছু হটা এই দেশ কে হয়তো একটা পটেনশিয়াল গৃহযুদ্ধ থেকে রক্ষা করেছে।

আমি মনে করি, যে কোন বিপ্লবের পূর্বশর্ত দেশের সকল পিলার অফ পাওয়ারের মধ্যে ক্ষমতার অবৈধতা নিয়ে নিরঙ্কুশ বয়ান তৈরি করা।অবশ্যই, জনগণের সম্মলিত ভায়োলেন্সের সক্ষমতা গ্রেটার দ্যান সংগঠিত শক্তির ভায়লেন্স কিন্তু ন্যারেটিভের যুদ্ধে পরাজিত কোন শক্তি কখনই আন্দোলন করতে পারেনা। এবং ২০১৩ সালে অবস্থা আরো মাজুল ছিল।কিন্তু, শ্রদ্ধেয় ফরহাদ মজহারের ভাষায়, আল্লামা শফির পিছু হটা এবং হেফাজতের আন্দোলন সফল না হওয়াতে ” জালিম শাসন ব্যবস্থা ও শাসক শ্রেণী অক্ষত রয়ে গেল, বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট শাসন ব্যবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হোল”।কিন্তু, আমি মনে করিনা, এর জন্যে আল্লামা শফীর পলায়নপরতা দায়ী। কারন শফী সাহেব সেই দিনের মিছিলে গেলেও কিছুই হত না, সরকার তাকে খুব ইজিলি নিউট্রালাইজ করতো।এবং যে কোন মুভমেন্ট খুব ইজিলি ক্রাশ করতো যে ভাবে ৫ ই মে রাতে করেছে।বরং পিছু হটে তিনি কিছু জিনিষ আদায় করে নিয়েছিলেন।যেমন: পাঠ্যপুস্তক সংশোধন, কওমি ডিগ্রির স্বীকৃতি , হাট-হাজারি মাদ্রাসার টাকা-পয়সা-জমি।

ইউ সি, আওয়ামী লিগের আমলেই কিন্তু সেই নাস্তিক ব্লগারেরা দেশ ছাড়া হয়েছে এসাইলাম নিয়ে।এর জন্যে যে রকম দায়ী, বেশ কিছু হত্যাকাণ্ড। এবং একই সাথে এইটাও ঠিক, আওয়ামী লীগ তাদেরকে রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে নাই। কারন এরা কেউ আওয়ামি লিগের কাছে হেফাজতের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলনা।এবং ৫ মে এর পরে বাম সেকুলার ভাব ধারা থেকে বের হয়ে আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ ভাবে, নিজেকে সেমি-ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দল থেকে সম্পূর্ণ ধর্মাশ্রয়ী দলে রূপান্তরিত করেছে।এই গুলো শফী সাহেবের সেই পলায়নপরতার অর্জন।

যদি ভুল না করে থাকি তবে, খুব সম্ভবত কোন একটি জনসভায় মৌলানা শফি নিজের মুখে বলেছেন, শেখ হাসিনা কওমিদের জন্যে যা করেছে, তা তার আগে কোন শাসক করে নাই। এইটা উনি হনেস্টলিই বলেছেন কারন দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তরের (ইসলামিক শিক্ষা ও আরবি) স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয় টা বিএনপির আমল থেকে ঝুলে ছিল। খালেদা জিয়া কিন্তু অনেক বার দাবীর পরেও সেইটা দেন নাই।এবং রসুলের ইজ্জত রক্ষার হেফাজতের যে আন্দোলন সেইটা ব্যর্থ হয়েছে তাও বলতে পারবেন না। ২০১১, ১২ বা ১৩ সালে রসুলকে বা ইসলামকে ক্রিটিসাইজ করে যা লেখার স্কোপ ছিল, বাংলাদেশে বসে এখন কেউ সেইটা লেখার কথা চিন্তাও করতে পারেনা ।যে মিটিঙে শেখ হাসিনা কউমি জননী উপাধি পেলেন সেই মিটিঙেই সারা দেশের কউমি মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে , হেফাজতের আমির আহমেদ শফীর উপস্থিতি হাসিনা বলেছেন,”অপপ্রচার বন্ধ করার জন্য আমরা সাইবার ক্রাইম আইন তৈরি করেছি। কেউ যদি এ ধরণের মিথ্যা অপপ্রচার করে তাহলে এ আইন দ্বারা তাদের বিচার করা হবে, গ্রেফতার করা হবে।””এবং আমাদের ধর্ম ইসলাম ধর্ম এবং নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে কেউ কোন কথা বললে আইন দ্বারাই তার বিচার হবে।” এসময় সমাবেশ থেকে বিপুল হর্ষ-ধ্বনি করা হয়।(বিবিসি)

ফলে ফরহাদ মজহার যেভাবে ব্যাখ্যার করেন না কেন, মৌলানা শাহ আহমেদ শফীর দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি যা চেয়েছেন তা পেয়েছেন, নাস্তিক ব্লগার দেশ ছাড়া করেছেন, এমন একটা দেশ পেয়েছেন যেখানে আসলেই ইসলাম নিয়ে ক্রিটিকাল আলোচনার আর সুযোগ নাই।সো ইউসি ফরহাদ মজহারের চোখে তিনি ব্যর্থ হতে পারেন, কিন্তু তার জায়গায় তিনি রিয়েলিস্ট ভূমিকা রেখেছেন। এবং নিজের দাবী আদায় করেছেন।

কিন্তু প্রশ্ন আসে এই সময়ে আপাত স্বীকৃতি আদায়ের অন্তরালে, বাংলাদেশের ইসলামিষ্টদের উপরে মুসলমানদের আকিদা এবং পরিচয়ের উপরে ওয়ার অন টেররের নামে অত্যাচার আরো কয়েক গুন বেড়েছে কিনা ?এবং একটা দেশের মুসলমানদের একজন তাত্ত্বিক ধর্ম গুরুর জন্যে এই ধরনের বস্তুবাদি দাবী আদায় গুলো ঠিক কিনা ? বিশেষত তার পরিবারের জন্যে তিনি যে বিশেষ সুবিধা গুলো আদায় করছিলেন সেই গুলো নৈতিক কিনা ? বা এই সুবিধা গুলো আদায়ের বিনিময়ে তিনি যেভাবে হেফাজতের রাজনিতিক সম্ভাবনাকে নির্বিষ করেছেন তার কি আর আসলেই কোন অল্টারনেটিভ ছিল না ?

অবশ্যই নয়। এই জন্যেই , মৃত্যুর মাত্র দুই দিন আগে শত বর্ষীয় এই ধর্মীয় নেতা যাকে বাংলাদেশের ধর্মভীরু জনগোষ্ঠীর বড় একটা অংশ তাদের অলিখিত ধর্মগুরু হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে তাকে, এতো দৃষ্ট কটু ভাবে তার নিজের ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে হয়েছে।কিন্তু, দ্যাট ডাজ নোট চেঞ্জ দা ফ্যাক্ট দ্যাট, ২০১৪ সালে আহমেদ শফী যে কম্প্রোমাইজ করেছে সেইটা ছাড়া কোন উপায় ছিল না।এবং উনি রাজনৈতিক গুটি হওয়ার পথ বন্ধ করে, কাতারে কাতারে মৃত্যুর থেকে কউমি ছেলেদের রক্ষা করেছিলেন। ।ইফ ইউ আস্ক মি, আমার কাছে সেইটাই উনার লং টারম লিগাসি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.