সরকার কেন এই ভাবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে ডাটা ম্যানিপুলেশান করে প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে দেখায়?

বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদেরা করোনাকালের পরিষ্কার ডাটা জোচ্চুরি নিয়ে সচেতন হয়েছেন। ইদানিং তাদের অনেকের আর্টিকেলে তাদের বিস্ময় দেখি, যে সরকার আসলে কি কারনে এই প্রবৃদ্ধির ডাটা বাড়িয়ে দেখায় সেইটা তারা বুঝতে পারেন না।

আসেন আমরা দেখি, সরকার কেন এই ভাবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে ডাটা ম্যানিপুলেশান করে প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে দেখায়?এর কারন একটাই এর ফলে , ক্রেডিট রেটিং ভালো থাকে এবং তার ফলে ঋণ পাওয়া সহজ হয় ।

ইউ সি, একটা সভ্রেন রাষ্ট্র হোক বা একটা কোম্পানি হোক বা এক জন ব্যক্তি হোক, তার ঋণ পাওয়ার হিসেব নির্ভর করে,তার বা তাদের ঋণের সুদ ফেরত প্রদানের সক্ষমতার উপরে ভিত্তি করে। এখন একটা সভ্রেন দেশ ঋণের সুদ ফেরত দিতে পারবে নাকি এই মুলত দুইটি প্রিন্সিপালের ভিত্তিতে হিসেব হয়,১। তার বর্তমান ঋণ এবং সুদ কত। ২। ঐ রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কত । বাংলাদেশের বর্তমানে বৈদেশিক ঋণ সরকার ডাটাতেই, ৫০ বিলিয়ন ডলার থেকে ৬০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত দেখাচ্ছে। এবং আগামি কয়েক বছরে এই ঋণ ১০০ বিলিয়ন নিয়ে যাওয়ার প্ল্যান সরকার নিজেরই। কিন্তু, এই ৬০ বিলিয়ন বা ১০০ বিলিয়ন যেটাই হোক- এইটা বেশি না কম সেইটা হিসেব করতে, ক্রেডিট রেটিন এজেন্সি গুলো মোট দেশজ উদপাদনের সাথে মোট ঋণের রেশিও করে। এবং সেই রেশিওতে যদি মোট জিডিপির থেকে মোট ঋণ একটা সীমিত পরিমানে থাকে তবে সেই দেশকে ক্রেডিট ওর্থী মনে করা হয়

।ধরে নেওয়া হয় একটা দেশের যদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে থাকে তবে তার আয় বৃদ্ধি পাবে এবং ফলে সে বাড়তি ঋণ সুদাসলে পেমেন্ট করতে পারবে। এই কারনে, জিডিপির প্রবৃদ্ধি যত বেশি হবে ক্রেডিট রেটিং ভালো থাকবে ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। বিবিএসের হিসেবে, ২০১৮-১৯ সালে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের ভ্যালু প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার। ফলে যদি সরকারী হিসেবে সরকারের বৈদেশিক ঋণ ৫০ বিলিয়ন ডলার হয় তার মানে, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ মোট জিডিপির মাত্র ১৭%। যেইটা আসলে সুপার। জিডিপির ১৭% বৈদেশিক ঋণ হওয়া খুবী এট্রাক্টিভ ।

এই রাষ্ট্রকে যে কোন বৈদেশিক সংস্থা ঋণ দেবে। এবং এই এট্রাকশান ধরে রাখার জন্যে, ২০১১ সালের শেয়ার মার্কেট পতনের পর থেকেই বাংলাদেশে যে মন্দা দেখা দিয়েছিল সেইটাকে আড়াল করে, মুলত ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে প্রবৃদ্ধি দেখাইতে ডাটা চুরি শুরু হয় যা ২০১৪ সাল থেকে এপিক প্রপোরশনে চলে যায়। যদিও ১৪ সালে ইলেকশানের পরে বিএনপির আন্দোলন সহ বিবিধ কারনে আরেকটা মন্দাভাব ছিল। গত দিনে এডিবি বাংলাদেশকে আগামি তিন বছরে ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রোগ্রাম নিয়েছে এবং আরো ৫ বিলিয়ন ডলার তারা রিজারভে রেখেছে ।

বাংলাদেশে যত গুলো সংস্থা প্রিডেটরি লেন্ডিং করছে তার মধ্যে এডিবি সব চেয়ে এক্টিভ। এডিবির ঋণ পোর্টফোলিয় এই মুহূর্তে ১০ বিলিয়ন ডলারের উপরে। এবং তাদের প্রোজেক্ট গুলো এক্টিভ। আমি যে কারনে চায়নার বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েন্স একজেজারেশান বলি কারন, চায়না থেকে অনেক বেশি ঋণ এডিবি দেয়। সরকার চায়নার কাছে অনেক কিছু চাইতেছে কিন্ত পাওয়ার গ্যারেন্টি নাই কিন্তু এডিবি আগামি তিন বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার দিবে ডিক্লেয়ার দিয়ে দিয়েছে।

এবং বাংলাদেশ সরকারের এই বাড়তি প্রবৃদ্ধি দেখানোর সব চেয়ে বড় বেনেফিসিয়ারি এডিবি। এবং এডিবি নিজেও , বাংলাদেশের প্রব্রিদ্ধি বেশি দেখাচ্ছে। করোনার পরে, যেখানে ওয়ারল্ড ব্যাঙ্কের প্রবৃদ্ধির হিসেব ছিল ১.৬% এডিবির হিসেব করেছে দেশের ৪.৫% প্রবৃদ্ধি হবে। যা সরকারের হিসেবের কাছাকাছি।

তো কেন, এডিবি কেন সরকারের এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে ডাটা জোচ্চুরিতে অংশ নিচ্ছে ? কারন, এডিবির মনমোহন প্রকাশদেরকে বাংলাদেশের ঋণ প্রদান জাস্টিফায়েড করার জন্যে বোর্ডে ঋণ প্রস্তাব গুলো দেওয়ার সময় বড় প্রব্রিদ্ধি দেখাতে হয়। এবং এই বড় প্রবৃদ্ধি দেখিয়ে এডিবি বড় পরিমান ঋণ দিচ্ছে বাংলাদেশকে। শুধু ক্রেডিট রেটিন নয়।

অর্থনীতিবিদেরা একটা দেশের পারফরমেন্স মাপার প্রায় সব গুলো ইন্ডিকেটর মোট জিডিপির সাথে রেশিও করে দেখে, তার ফলে বিভিন্ন দেশের সাথে তুলনা সহজ হয়। কিন্তু মূল টারগেট ক্রেডিট রেটিং। এইটাই বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দেখার মূল কারন। এবং এই ডাটা ম্যানিপুলেশানের বেনেফিট সরকার নিচ্ছে।

গত বছরে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছে। এবং করোনার পরে, মন্দাবস্থা কাটাতে জাপান এইএমএফ ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক সহ বিবিধ সংস্থা থেকে বড় পরিমান ঋণ নেওয়া হচ্ছে। জাপান তিন বিলিয়ন ডলারের প্রোজেক্ট ফাইনালাইজ করেছে। আমি এই জন্যে অর্থনীতিবিদদের নির্দোষ আর্টিকেল গুলো দেখে খুব তাজ্জব হই, তারা জাফর ইকবাল সাহেবের মত অত্যন্ত সাধাসিধা, তারা সরকারের উপরে ক্ষুব্ধ । কি দরকার ছিল এই ভাবে বাড়িয়ে দেখানোর, দেশের উন্নতি ত হচ্ছেই। ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু মূল ধান্দা যা ঋণ নেওয়ার জন্যে ক্রেডিট রেটিং ভালো রাখা এইটা উনারা বোঝেন না। টিনের চালে কাক , আমিও অবাক।

1 Comment

  1. ডাটা এ্যানালাইসিসের সামান্য অভিজ্ঞতা থাকা যে কেউ এই ডাটা গুলো দিয়ে তৈরী গ্রাফ দেখেই বলে দিতে পারবে যে এই ডাটাগুলো ম্যানুপুলেট করা। পরিসংখ্যান অধিদপ্তরের গ্রাফ গুলো আমি যখন দেখি তখনই আমার মনে পড়ে ক্লাস নাইন টেনের গ্রাফের কথা,িএইচ এসসি এর গ্রাফের কথা। এ যেন বই থেকে তুলে আনা একটা আদর্শ উদ্ধমুখী গ্রাফ।
    অথচ যদি সহি তথ্য দিয়ে একটা গ্রাফ তৈরী করা হয় তাহলে এর প্রতিটি পরিবর্তনই এক একটি গল্প উপস্থাপন করবে। এইখানে কমেছিল কি হয়েছিল তখন? ও কোয়ার্টার এন্ড ছিল গ্রাহক ফেইল করছে তাই এনপিএল বেড়েছে। এইখানে ক্লাসিফাইড লোন কমেছে কি কারন? ও এই লোনটা রিশিডিউল হয়ে স্ট্যান্ডাড হয়েছে। এমন এমন গল্প বলে যায় এক একটি গ্রাফ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.