৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনিতি ছিল কিন্তু মূলত সমাজ তন্ত্রের বিভিন্ন ব্যাখ্যার পলিটিক্স।

বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যার মর্মান্তিক ঘটনাটিকে এক জায়গায় রেখে, ৭৫ এবং ৭৫ পরবর্তী শাসনামলের অবজেক্টিভ মুল্যায়নের প্রয়োজন আছে।

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা। ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত বিশ্ব এবং স্থানীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তিনি সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুকেছিলেন। সেই সময়ের সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি নিয়ে বিগত কয়েক ঘন্টায় ভালো কিছু লেখা পড়লাম। অভিন্যু কিবরিয়া , পিনাকি ভট্টাচার্য ও আরিফুজ্জামান তুহিনের স্ট্যাটাস , মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সাক্ষাতকার , এবং প্রথম আলোর আজকের আরটিকেল “ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরে ফারুক রহমানের চিঠি ইসলামি সমাজ তন্ত্র কায়েম করার জন্যে তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছেন- এই সব গুলো আলোচনা একটা প্রসঙ্গকে আবার সামনে নিয়ে আসে ৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনিতি ছিল কিন্তু মূলত সমাজ তন্ত্রের বিভিন্ন ব্যাখ্যার পলিটিক্স।

সব গুলো রাজনৈতিক পক্ষই ছিল তখন সমাজতান্ত্রিক। প্রথম আলোর আর্টিকেল অনুসারে এমন কি ডালিম -ফারুকরাও ইসলামি সমাজতন্ত্রের আলাপ করতেছে। কর্নেল তাহেরদের স্বপ্ন ও ছিল সমাজতন্ত্র।

কিন্তু জিয়াউর রহমান সাহেব সমাজতন্ত্রের এই পুরো রাজনীতিটাকে বাতিল করে, সম্পদকে ডিসেন্ট্রালাইজ করেছেন। তিনি স্টক এক্সেঞ্জ পুনরায় চালু করেছেন যা এতো বছর বন্ধ ছিল। ইনভেস্টমেন্ট করপোরশান অফ বাংলাদেশ স্থাপন করেছেন। রেডিমেড গারমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি চালু করেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিক চালু করেছেন। ইত্যাদি ইত্যাদি বহুত। সেই গল্পে না যাই। কিন্তু সেন্ট্রালি জিয়াউর রহমান সাহেব সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির এতো বছরে মেইন্সট্রিম ফ্রিঞ্জলাইন সকল ধারাকে বাতিল করেছেন এবং তিনি যে সিস্টেম চালু করে দিয়েছেন সেই সিস্টেমেই এই রাষ্ট্র চলেছে।

এমন কি শেখ হাসিনা তার পিতার স্বপ্ন পুরনে, সংবিধানে সমাজতন্ত্র পুনরায় ফিরিয়ে আনলেও , বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র হয়ে গ্যাছে এই দাবী করলে, কবরের মধ্যে মার্ক্সের লাশও মোচরাই উঠবে।এসেন্সিয়ালি ৭৫ পরবর্তী যে রাষ্ট্র কাঠামো জিয়াউর রহমান তৈরি করে দিয়েছে সেইটা দিয়েই এই রাষ্ট্র চলতেছে এখনো ।

আমার মনে হয়, আজকে মুজিব জিয়া এই ডিকোট্মি বাদ দিয়ে, ৭২-৭৫ কালিন সকল রাজনৈতিক পক্ষের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের এই স্বপ্ন এবং তারপরে সেই ধারা বাদ দিয়ে যে ক্যাপিটালিস্ট রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে সেইটা নিয়ে আলোচনার দরকার আছে।

শেখ মুজিব যদি আরো ১০ বছর বেচে থাকতেন তাহলে সেই রাষ্ট্র কেমন হতো ? অথবা কর্নেল তাহের যদি তার সিপাহি বিপ্লব সফল করতে পারতেন সেই রাষ্ট্র কেমন হতো ? এই গুলো নিয়ে মুজিব জিয়া ডিকোট্মী বাদ দিয়ে অবজেক্টিভ আলোচনার দরকার আছে। কারণ আমাদের সমাজতন্ত্রিদের লেখায় আমরা সেই আফসোস দেখতে পাচ্ছি যে বঙ্গবন্ধুর সমাজতন্ত্র সফল হতে দিলো না হত্যাকারিরা। অথবা কর্নেল তাহেরের স্বপ্ন হতে দিলো না প্রতি বিপ্লবীরা। সেই সফলতাটা আসলে কেমন ? ইউটোপিয়ান জায়গা থেকে না, তৃতীয় বিশ্বের যে সকল দেশে সমাজতন্ত্র হয়েছে সেই সকল দেশ কি হয়েছে ? আমরা সেই তুলনাই কি করেছি কেমন করেছি ? এই গুলো থট এক্সারসাইজ কিন্তু ভালো আলোচনা।

আসলেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বা কর্নেল তাহেরের শোষণ মুক্ত বাংলা অথবা সেলিম সাহেব যদি ক্ষমতা পেত তাদের মার্ক্সবাদ লেনিনবাদের স্বপ্নের বাংলা কি হয়ে দাঁড়াতো ? আপনাদের ধারনা কি ? মতামত দিতে পারেন । কিন্তু প্লিজ কোন গালাগাল এবং ব্যক্তি আক্রমন করবেন না। ভবিষ্যতে এই প্রশ্নটা আমি ডিটেলে আলোচনা করতে চাই, তাই আমার রেফারেন্সের জন্যে এবং বাকিদের পড়ার জন্যে সূত্র গুলো সব কমেন্টে দিলাম।

1 Comment

  1. আমার মতে সমাজতন্ত্রকে চিনতে হবে সমাজতান্ত্রিকদের রাষ্ট্রক্ষমতা কব্জা করার পর তারা নিজ নাগরিকদের সাথে কি কি করেছে তা দিয়ে। পলপট, হে চে মিন, স্টেলিন/লেলিন/মা সে তুন এদের রাষ্ট্র ক্ষমতা পাওয়ার আগের বক্তব্য দিয়ে বিচার করলে হবে না। কারন প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্র ক্ষমতা পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এরা যা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় তা স্কিন সেভারের মত একটা কিছু। মাউস ঘোরালেই হারিয়ে যাবে। আবার সমাজতন্ত্র যা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় তা কোন দিনই দিতে পারবে না কেননা যদিও তারা শ্রেণীহীন সমাজের প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু এই শ্রেণীহীন সমাজের প্রতিশ্রুতি দিতে গিয়ে নিজেরাই একটা শ্রেনী তৈরী করে।
    আমাদের সৌভাগ্য যে আমাদের দেশ সমাজতান্ত্রিকদের খপ্পরে পড়ে নাই তবে ফ্যাসিবাদের ও স্বৈরাচারের খপ্পরে পড়েছে বারবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published.