“পুলিশ আশ্বস্ত করেছে, এটাই শেষ ঘটনা, পুনরাবৃত্তি ঘটবে না: আইএসপিআর”

সাবেক এসপি আল্লাহ বক্স , মেজর সিনহার হত্যার পরে ওসি প্রদীপকে আইনি পরামর্শ দিতে গিয়ে যে বলেছিল, অবসরপ্রাপ্ত (মারলে) এত ডরের কী আছে? – সেইটাই হচ্ছে আসল টকিং। আল্লাহ বক্সের এই বক্তব্যের মধ্যে যে সারকথা আছে, তা এই রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের জন্যে বাস্তবতা।

” অবসরপ্রাপ্ত হলে ডরের কি আছে।” বক্তব্যের মাধ্যমে এসপি আল্লাহ বক্স বুঝিয়েছেন,ইউনিফরম বিহীন যে কোন নাগরিককে তো আপনি গুলি করে মারতেই পারেন , তাতে ভয় পাচ্ছেন কেন। আল্লাহ বক্স সাহেব অবলীলায় যা বলেছেন, তার জন্যে তার উপরে ক্ষুব্ধ হওয়ার কিছু নাই। বিগত এক দশকে জামাত শিবির নিধনের নামে, বিএনপি নিধনের নামে , টেররিজম নিধনের নামে এই রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিচারে খুন করার এবং খুন করে নিহতকে সন্ত্রাসী, টেররিস্ট বা মাদকাসক্ত সহ ইত্যাদি গল্প সাজানোর যে লাইসেন্স পেয়েছে তাতে যে কোন নাগরিককে খুন করার পরে পুলিশের আসলেই কোন ভয় পাওয়ার কিছুই নাই।

বরং সব চেয়ে বেশী যারা খুন করতে পেরেছে, তাদেরকেই সরকার পুরস্কৃত করেছে। কিন্তু, মেজর সিনহার ক্ষেত্রে, গ্যাঞ্জাম টা লাগিয়েছে আসলে সোশাল মিডিয়া। সোশাল মিডিয়াতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার কারনে এই ঘটনাটি বড় হয়ে গ্যাছে। নইলে, পুলিশ ইউনিফর্ম বিহীন যে কোন নাগরিককে খুন করতেই পারে, এইটাতে আসলেই ডরের কিছু নাই। এইটা সবাই জানে।

সামরিক বাহিনীর অফিসারদের মধ্যে একটা ক্ষোভের কথা বলা হচ্ছে। এইটা সত্য। কিন্তু পূর্ণ সত্য নয়। সামরিক বাহিনীর অফিসাররা বর্তমানে স্বাধীনতার পরে সর্বোচ্চ পরিমাণ সুযোগ সুবিধা উপভোগ করতেছে। একজন বা ২০ জন সিনহা খুন হলেও মিলিটারি অফিসারদের কিছু যায় আসেনা। বিগত কয়েক বছরে র‍্যাবে কর্মরত অসংখ্য মিলিটারি অফিসারের হাতে বিনা বিচারে খুন করা নাগরিকের রক্ত লেগে আছে।

মিলিটারি অফিসারদের ক্ষোভ উৎস হইলো , তারা বুঝতে পারতেছে পুলিশ যদি খুন করার সময়ে, “আমি আর্মি অফিসার” পরিচয় দেওয়ার পরেও খুন করে, তবে ইউনিফর্ম ছেড়ে যাওয়ার পরে তাদের নিজের জীবনটাও বিপন্ন হতে পারে। এই জন্যে, তারা গ্যারান্টি চেয়েছে, পুলিশ যাকে ইচ্ছা খুন করুক, কিন্তু “আমি রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার”, এই পরিচয় দেওয়ার পরে ইউনিফর্ম ছেড়ে আসার পরে, কেউ যেন তাদের খুন না করে। তারা যে গ্যারেন্টি চেয়েছেন সেই গ্যারান্টি তাদের দেওয়া হয়েছে।

দুই বাহিনীর বিবিধ মধ্যস্ততার পরে, “পুলিশ আশ্বস্ত করেছে, এটাই শেষ ঘটনা, পুনরাবৃত্তি ঘটবে না: আইএসপিআর”।

অনেকে ভাবতে পারেন, শেখ হাসিনা নিশ্চয়ই খুব দুরূহ সময় কাটাচ্ছেন, তিনি কাকে খুশি রাখবেন এই চিন্তা করে। পুলিশ না, আর্মি। আমার মনে হয়,শেখ হাসিনার চয়েস ক্লিয়ার। তিনি কোন মতেই ওসি প্রদীপকে শাস্তি দিতে পারেন না। কারণ, এইটা ওসি প্রদীপকে শাস্তি দিলে গুম খুন এবং দখলের মাধ্যমে জনপদকে সন্ত্রস্ত করে একটি অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার যে স্ট্রাটেজি সেইটা ভেঙ্গে পরে।

বাস্তবতা হচ্ছে, বর্তমান এই রাষ্ট্রে প্রায় প্রতিটা থানার ওসি সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা এলাকার গুম, খুন, মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। (কিছু ব্যতিক্রম থাকতে পারে, কিন্তু ব্যতিক্রম উদাহরণ হতে পারেনা।) এই গুম খুন মাদক শুধু মাত্র ওসি বা এসআইদের ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক অসদাচরণ নয় – এই হত্যা গুম খুন, বৈধতাহিন একটি সরকারকে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার প্রাতিষ্ঠানিক একটা কৌশল। এই গুম খুন দখল জনগণের মতের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো বর্তমান সরকারকে টিকিয়ে রাখে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রকাশ্যে গুম খুন এবং পুলিশ বাহিনীর শীর্ষ খুনিদের শেখ হাসিনার হাতে রাষ্ট্রীয় পুরষ্কার জনগণের নাগরিকদের সিগনাল দেয় যে, পেটোয়া পুলিশ যেভাবে একজন মাদক ব্যবসায়ীকে অথবা চাদার জন্যে একজন ব্যবসায়ীকে হত্যা করতে পারে, সেই পুলিশ এই নির্বিচার খুনের লাইন্সেন্স ব্যবহার করে সরকার বিরোধী যে কোন রাজনৈতিক অরাজনৈতিক এক্টিভিস্টকেও হত্যা করতে পারে।

এই ভয়টাই জনপদে জনপদে নিরমন অত্যাচার অনাচার এবং ধংসের পরে জন অসন্তোষ দমিয়ে রেখে বর্তমান শাসকদের টিকিয়ে রেখেছে। ফলে, এই ওসি প্রদীপকে শাস্তি দেওয়ার কোন সুযোগ নাই। কারণ, এই ওসি প্রদীপরাই মিড নাইট ইলেকশন করে, বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। এবং ওসি প্রদীপদের এই গুম খুন দখল ম্যান্ডেট বিহীন এই সরকারের ক্ষমতার মুল উৎস। এখন পাবলিক পারসেপ্সান অথবা ডিফেন্স অফিসারদের ক্ষোভের মুখে কিছু শাস্তি শো অফ করতে হবে। এই শো অফটাই ওসি প্রদীপের পুরস্কার।

আমার বন্ধুদেরকেও দেখি,তারা ক্রস ফায়ার বিরোধী আইন চান গুম খুনের বিরুদ্ধে বিবিধ রকম সাংবিধানিক সংস্কার চান। যে মাফিয়া তন্ত্র আজ কায়েম হয়েছে সেই মাফিয়া তন্ত্রকে একটা সাংবিধানিক এবং আইনি সংকট ভাবতে হলে, অনেক বড় রকম ডিলিউশানের দরকার হয়। সেই সুইট ডিলিউশান তাদের আছে দেখে ভালো লাগে।

কিন্তু, আজকে আমরা যদি এই অবস্থার পরিবর্তন চাই তবে, এই সব বালখিল্ল্যতা বাদ দিয়ে সবার আগে, এই পলিটিকাল রিয়ালিটি বুঝতে হবে, এই রাষ্ট্র আর রাষ্ট্র নাই। এইটা সম্পূর্ণ ভাবে একটি মাফিয়া তন্ত্রে পরিণত হয়েছে। বিএনপি আমলের ডেভিডকে হত্যা করা র‍্যাব আর ইয়াস্মিনকে ধর্ষণ করা পুলিশ- আর বর্তমান র‍্যাব পুলিশ একই নয়। বর্তমান র‍্যাব পুলিশ সরাসরি নাগরিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এই রাষ্ট্র জলপাই ব্যবসার আড়ালে সম্পূর্ণ ভাবে একটি মাফিয়া তন্ত্রে পরিণত হয়েছে। কোন গডফাদার এইখানে লুকিয়ে হাটে না।

আপনি মাফিয়াদের হাতে আইনি সংস্কার চাইতে পারেন না। প্রশাসনিক সাংবিধানিক সংস্কার চাইতে পারেন না। সবার আগে, আপনাকে এই মাফিয়াদের অপসারণ চাইতে হবে।এবং এই মাফিয়াদের অপসারনের জন্যে সকল রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এবং এই মাফিয়াদের বিরুদ্ধে দল মত আদর্শ নির্বিশেষে সকল পক্ষের রাজনৈতিক ঐক্য তৈরি করাই হচ্ছে বর্তমান সময়ের পলিটিকাল এক্টিভিস্টদের এক মাত্র রাজনীতি। এর বাদে আর কোন রাজনীতি নাই। এই টুকু যারা না বোঝে, তাদের উচিত বাচ্চাদের গান শেখানো বা ছবি আকা শেখানো। তাদের রাজনীতির নামে জনগণকে বিভ্রান্ত করার কোন অধিকার নাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published.