পুলিশ বা র‍্যাব বিনা বিচারে একজন নাগরিককে মেরে ফেলতে পারে, তবে পুলিশ কেন একজন রিট্যারড অফিসারকে মারতে পারবে না?

বাংলাদেশে এখন আওয়ামী লীগ, পুলিশ ও র‍্যাবের হাতে যে পরিমাণ নাগরিক হত্যা এবং গুম হচ্ছে সেই হিসেবে পুলিশের হাতে প্রাক্তন সেনা অফিসার মেজর রাশেদের হত্যা কোন স্টাটিস্টিকালি এনামলি নয় বরং খুব হাই প্রবেবিলিটি একটি ঘটনা ।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য বিগত কয়েক বছরে, নিয়মিত ভাবে শেখ হাসিনার কিলিং মিশনের পার্ট হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এই অগণিত গুম হত্যার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে সেই ধারাবাহিকতায় মেজর রাশেদের হত্যা একটি দুঃখজনক কিন্তু, প্রেটি এক্সপেক্টেড ফ্রেন্ডলি ফায়ার।

মেজর রাশেদের হত্যা নিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যাদের ক্ষুব্ধ হওয়ার না হওয়ারও কিছু নাই। আমি নিজে সেনা পরিবারের সদস্য। কিন্তু, আমি আলাদা করে ক্ষুব্ধ বা শঙ্কিত নই। যে রাষ্ট্র আমরা তৈরি করেছি, তাতে আমি ধরেই নেই একজন প্রাক্তন সেনা অফিসার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কেউই এই গুম খুনের সম্ভাবনার বাহিরে নয়।

কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর বিএমএ এর প্রাক্তন ক্যাডেট। তার বন্ধুরা এখন ফুল কর্নেল হচ্ছে। আজকে থেকে ১০ বছর আগে যে কার্টুনে রাষ্ট্রের সামান্য মাথা ব্যথা ছিলনা তার চেয়ে অনেক লঘু কার্টুনের জন্যে তাকে জেলে পুরে রাখা হয়েছে। সামান্য ডিসেন্টের কারনে, অজামিনযোগ্য ধারায় এই প্রাক্তন সেনা পরিবারের সদস্যের গ্রেপ্তারে কোন সেনা অফিসার ক্ষুব্ধ হয় নাই, ফলে মেজর রাশেদের হত্যার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া কেন ভিন্ন হবে সেইটা পরিষ্কার নয়।

বিএনপি করার অপরাধে স্কোয়াড্রন লিডার ওয়াহিদকে মিথ্যা মামলা দিয়ে, জেলে ঢুকিয়ে তারপরে দেশ ছাড়া করা হয়েছে। সকলেরই এইটা বোঝার কথা, যে পুলিশ একজন সাধারণ সিভিলিয়ান নাগরিকের বিনা বিচারে কোন ধরনের শাস্তির ভয় বাদে হত্যা করতে পারে , সেই পুলিশ একজন প্রাক্তন সেনা অফিসারকেও গুলি করে মেরে ফেলতে পারে। এবং মেরে তাকে গাজা এবং মদ সেবনকারী বানিয়ে দিতে পারে।

যতই নির্মম শোনাক সেনাবাহিনীর সদস্যরা এই ড্রিলের একটি পার্ট। কিছু দিন আগে শাহেদকে গ্রেপ্তারের সময়ে র‍্যাব তার পকেটে খেলনা পিস্তল গুজে তাকে নিয়ে যে ফটোসেশান করেছে। এই গুলো র‍্যাবে নিয়োগ প্রাপ্ত সেনা বাহিনীর সদস্যরাই করেছে। আলোচিত ‘আব্বু, তুমি কান্না করতেছো যে…’ ক্রসফায়ার সেনাবাহিনীর হাতেই করা। সেনাবাহিনী সদস্যারা যদি আশা করেন, বাংলাদেশের খুনে পুলিশ দেশের বাকি ১৬ কোটি জনগণের উপরে অত্যাচার চালাবে, গুলি করে হত্যা করবে -কিন্তু, ইউনিফর্ম ছেড়ে আসার পরে আমি অফিসার পরিচয় দিলে তাদের ছেড়ে দেবে – সেই প্রত্যাশা ভুল হবে।

আজকে ক্ষোভ টা যদি হয় যে, পুলিশ একজন রিটায়ারড অফিসারকেও মারতে পারলো ? তবে আমি এই ও প্রত্যয়ের ব্যবহার টাতেই ক্ষুব্ধ হব। আমি বরং বলবো কেন নয়? পুলিশ বা র‍্যাব বিনা বিচারে একজন নাগরিককে মেরে ফেলতে পারে, তবে পুলিশ কেন একজন রিট্যারড অফিসারকে মারতে পারবে না? কেন এই রাষ্ট্রে আলাদা করে এই প্রিভিলেজ আমরা চাইছি ?

আমি আশা করবো, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে দেশের সকলের এই উপলব্ধি আসবে যে, র‍্যাব পুলিশের হাতে এই ভাবে নির্বিচার হত্যা পূর্ণ ভাবে বন্ধ না করলে, ১৬ কোটি নাগরিক যদি নিরাপদ না থাকে তবে প্রাক্তন সেনা অফিসার বা কোন ধরনের প্রিভিলেজড গ্রুপ ও নিরাপদ থাকবেনা। আমি জানি কথা গুলো আমার অনেক বন্ধুর কাছে পেইনফুল মনে হবে, কিন্তু, অনেক চেষ্টা করেও এই কথা গুলো অন্য ভাবে বলতে পারলাম না।এবং এই জন্যে সত্যিই দুঃখিত। আমি মেজর রাশেদ সহ সকল বিনা বিচারে হত্যার বিচার দাবী জানাই এবং বাংলাদেশ থেকে র‍্যাব, পুলিশ বিডিআর সহ সকল নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বিনা বিচারের হত্যা পূর্ণ নিষিদ্ধ করার দাবী জানাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published.