পুরো রাষ্ট্রে কি হচ্ছে তা আপনি ব্যক্তিগত গবেষণা দিয়ে ঠাহর করতে পারবেন না।

করোনা নিয়ে আমি তেমন কিছু না বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তার দুইটা কারন, প্রথমটা ব্যক্তিগত।

লকডাউনের সময়ে পরিবার নিয়ে আইসোলেশানের কালে করোনা নিয়ে আমার ইন্টেন্স স্টাডি এবং রিসার্চ আমার মেন্টাল ওয়েল বিইং ইম্প্যাক্ট করেছে মনে হয়েছে। এবং আমার অন্য সকল কাজ থেমে গিয়েছিল, যার দায় এখন আমার নিতে হচ্ছে। ফলে আমাকে থামতে হয়েছে।

দুই, বাংলাদেশে এমন ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে মিথ্যার শাসন তৈরি হয়েছে, এবং সমাজ, রাষ্ট্র, সরকার, গনমাধ্যম সকলেই সেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেল মিথ্যায় এমন ভাবে পারটিসিপেট করেছে তাতে বিচ্ছিন্ন ভাবে ব্যক্তিগত ভাবে যারা সত্যের সন্ধান করেছে- তাদেরকেই বরং প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়। এইটা সম্পূর্ণ দুর্নীতিমগ্ন একটা অফিসে কোন সৎ ব্যক্তি যেমন চাকুরি করতে পারবেনা সেই রকম বিষয়।তার মানে সরকারে যে তথ্য দেওয়ার কথা, সেইটা আপনি ইন্টারনেট থেকে খুচিয়ে খুচিয়ে বের করতে পারবেননা।

ষোল কোটি মানুষ, বা একটা রাষ্ট্র অনেক বড় এন্টিটি। পুরো রাষ্ট্রে কি হচ্ছে তা আপনি ব্যক্তিগত গবেষণা দিয়ে ঠাহর করতে পারবেন না।

কিন্তু কিছু স্যাম্পল আমি দেখেছি। আমার অনেক গুলো প্রফেশনাল সারকেল আছে। কারন আমি অনেক গুলো ক্যারিয়ার চেঞ্জ করেছি। তাদের অনেকের সাথে ফেসবুকে বা ভাইবার গ্রুপে কানেক্টেড। আমার এই ধরনের একটা প্রফেশনাল সার্কেলের ১০০ জন বন্ধুর মধ্যে, ৬ জন বন্ধু বিগত কয়েক মাসে তাদের পিতা মাতাদের কেউ একজনকে হারিয়েছে।(একজন নন করোনা)এইটা একটা স্ট্যাগারিং নাম্বার। একটা মাইনড ব্লোইং রেশিও। অফকোর্স এই খানে কনফারমেশান বায়াস আছে। কারন, আমার অন্যান্য প্রফেশনাল সার্কেলে কোথাও ১০০ জনের মাঝ্যে ৬ জন মারা যায় নাই। কিন্তু, আমার প্রতিটা প্রফেশনাল বা বন্ধুর সার্কেল যাদের সাথে আমি ভাইবার গ্রুপে বা অন্য কোথাও কানেক্টেড যাতে , ১০০ জন থেকে ১৫০ জন আছে তাতে, অন্তত একজন তাদের বাবা মা হারিয়েছে। এইটার মানে কি ? এইটার মানে হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকারের করোনার মৃত্যুর সংখ্যা একটা ফাকিং জোক।

আজকে আমি বিভিন্ন গ্রুপে যে, ১০০ জন দের চিনি সেই টা যদি পুরো দেশে ইন্টারপোলেট করেন, তবে, সেই সংখ্যা কোথায় যাবে আল্লাহ জানে। কিন্তু, মৃত্যুর সংখ্যা এই ভাবে বের করা যায় না। রাষ্ট্রকে এই কাজ করতে হয় । এইটা ব্যক্তিগত ভাবে করা অসম্ভব।

কিন্তু, রাষ্ট্র কিছু জিনিষ লুকাতে পারে নাই। করোনাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। পৃথিবীর যে সকল দেশে, ৮০ জন পর্যন্ত চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে সেই সকল দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা কত একটু হিসেব করে দেখবেন ? সামরিক বাহিনীতে মারা গ্যাছে প্রায় ৮০ জন পরিবার সহ। ১৬ জুলাই প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুসারে পুলিশ মারা গ্যাছে, ৫৩ জন। ইয়েস সারভিং পুলিশ – তাদের পিতা মাতা নয়। এদের সবার বয়স ৫৭ বছরের নীচে। পৃথিবীর কোন দেশে, করোনাতে ৫০ জনের উরধে পুলিশ মারা গ্যাছে? সেই সব দেশে মোট মরটালিটি কত ? বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা হিসেব করতে অনেকে হসপিটাল বা কবরস্থানের মৃত্যুর সংখ্যা দেখেছেন। সেইটা যদিও বিগত বছর গুলো থেকে রেসিও বেশি কিন্তু, তারপরেও বলবো বড় শহর গুলোতে অধিকাংস মানুষ অভিবাসি, তারা পরিজনের লাশ গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। ফলে কবরস্থান দিয়ে আপনি কোন কিছু বের করতে পারবেন না। হসপিটাল গুলোতে অধিকাংস মানুষ এক্সেস করতে পারে নাই। এবং অনেকে ভয়ে হসপিটালে যায় না। আমার নিজের পরিবারে করোনার সংক্রমণ হয়েছে হস্পিটাল থেকে। আমরা চেষ্টা করেছি, হস্পিতালের সাপোর্ট না নিয়ে চিকিৎসা দিতে।

ফলে আজকে করোনার কারনে কি পরিমান মানুষের মৃত্যু হয়েছে সেইটা সরকার যদি না বলে, সেইটা কেউ বের করতে পারবেনা।কিন্তু, আমার একটি প্রফেশনাল সার্কেলে ১০০ জনের মাঝে ৬ জনের পিতা মাতার মৃত্যু একটা ভয়াবহ সংখ্যা। কারন, পুরো দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গ্রামে গঞ্জে, এই মৃত্যুর সংখ্যা কত তা কেউ বলতে পারে না। কিন্তু, এইটা ভয়াবহ একটা সংখ্যায় পৌঁছাবে। এবং করোনা নিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় যে জোচ্চুরি হয়েছে, তার তুলনায় সাহেদ সাব্রিনার জোচ্চুরি অনেক ছোট স্কেলে। অধিকাংস মানুষ করোনা থেকে রিকাভার করেছে, যেইটা করোনার .০০১% থেকে .০০২% ইনফেকশান ফাটালিটি রেট হিসেব করলে, এক্সপেক্টেড । এইটাই হওয়ার কথা। কিন্তু, অনেকের এক্সপেক্টেশান ছিল, প্রতি দিন তারা বাসায় বাসায় মৃত্যুর সংবাদ শুনবেন। ইউ সি, ইনফেকশান ফ্যাটালিটি .০০১ পরিমান মৃত্যু মানে হচ্ছে একটা পাড়াতে যদি প্রায় ১০০০ মানুষ থাকে এবং হয়তো আপনি আপনার পাড়াতে ছয় সাত মাসে, ১ থেকে দুই জনের মৃত্যুর কথা শুনবেন।যেইটা আমার বিশ্বাস সবারই এক্সপেরিয়েন্স।

ফলে, করোনা বাংলাদেশে মোটামুটি প্রেডিক্টেবেল বিহেভিয়ারই করেছে। কিন্তু তারপরেও আমি দেখেছি, আমার স্ত্রীর দিকে নানি শাশুরি এবং দাদি শাশুড়ি উভয়েই ৯০ এর কাছে বয়স কিন্তু করোনা থেকে রিকাভার করেছে। এবং পুরো পরিবারে ই ইনশাল্লায় সবাই রিকাভার করেছে। দুই জন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে।

ফলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, করোনা নিয়ে রাষ্ট্রীয় যে সতর্কতা সেই গুলো কি জাস্টিফায়েড ছিল ? এইটা কমপ্লেক্স এন্সার যা শোনার মত ক্যাপাসিটি অধিকাংশ মানুষের নাই। করোনা ভাইরাসকে মোকাবেলা করার, দুইটা পথ। ১ সাপ্রেশান ২ মিটিগেসশান। সাপ্রেশান মানে, আপনি কন্টাক্ট ট্রেসিং করে, সোশাল ডিস্টেন্সিং করে কয়ারান্টাইন করে সম্পূর্ণ ভাবে করোনা দূর করবেন। যেইটা ভুটান করেছে, ভিয়েতনাম করেছে, জার্মানি করেছে, ইউরোপিয়ান প্রায় সকল দেশ করেছে।

করুনা নিয়ে আমাদের প্রাথমিক যে চিল্লাচিল্লি তার উদ্দেশ্য ছিল সরকার যেন করো নাকি সম্পূর্ণভাবে সাপ্রেশন করে যেটা তখন করা সম্ভব ছিল। সেকেন্ড হচ্ছে কন্টেন্মেন্ট। আপনার দেশে করোনা ছড়িয়ে গ্যাছে আপনি মিটিগেট করবেন। মৃত্যুর সংখ্যা কমানোর জন্যে, প্রাদুরভাবের প্রকোপ কমিয়ে আনার জন্যে বিভিন্ন স্টেপ নেবেন।

আমি কখনই বুঝি নাই, পুরো রাষ্ট্রে ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে, এরপরে সোশাল ডিস্টেন্সিং করে কি হবে । কোন কন্টাক্ট ট্রেসিং করতেছেন না, সঠিকভাবে কোয়ারানটাইন করতেছেন না – এই অবস্থায় লকডাউন অর্থহীন।বাংলাদেশে এই কনফিউজড পলিসিতে গ্যাছে। এবং সারাদেশে ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে সরকার করোনার জায়গায় টারগেট করেছে, তথ্য।এবং তথ্য নিয়ন্ত্রণ এরা খুব ভালোমতোই পারে।ফলে যেইটা হয়েছে, দেশে অনেক গাড়ল জন্মেছে, যারা বলতেছে এবং বলে যাবে লক্ষ লক্ষ লোক মারা যাবে শুনেছিলাম , তারা কই ?

ইন রিয়ালিটি করোনাতে কখনই লক্ষ লক্ষ মানুষের কথা ছিলনা। মডেলিং শুধু মাত্রা একটা সিচুয়েশানের কথা বলে, যে সিচুয়েশান সম্পূর্ণ ভাবে কোন ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাই। কিন্তু, রিয়েল লাইফে যখন ৫০০০ মানুষ মারা যায় তখনই দুর্বল লোকেরা সচেতন হয়ে যায়। ফলে মৃত্যুর সংখ্যা কখনই মডেল অনুসারে হয় না। বিষয়টা লক ডাউনের নয়, বিষয়টা আইসোলেশানের।

আমার বাসা হতে শুরু করে, আমি অনেক ফ্যামিলিকে চিনি যারা তাদের সিনিয়ার সিটিজেনদের রক্ষা করার জন্যে এখনো সম্পূর্ণ ভাবে তাদের বিভিন্ন আলাদা করে রেখেছে। ফলে এই স্টেপ গুলো এখনো অনেক প্রান বাচাচ্ছে। মডেলিং জাস্ট পাবলিক পলিসির ডিসিশান মেকিনের জন্যে কিছু প্রজেকশান দেয়। এবং তারপরেও আমার প্রফেশনাল সার্কেলের একটা সার্কেলে ১০০ জনের মাঝে ৬ জন বিগত তিন মাসে তাদের প্যারেন্টস হারিয়েছে। দুই জন বিগত দুই সপ্তাহে। তার মানে ধীর মৃত্যুর মিছিল এখনো চলছে।

কিন্তু, সরকার এই তথ্য গুলো লুকিয়ে রেখেছে । এবং জনগণের বড় একটা অংশকে সেইটা খাওয়াতেও পেরেছে। আমি অনেক আগেই আমার এক বন্ধুর কথা বলেছিলাম, যে বলেছিল, জিয়া ভাই, আপনি যে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করতেছেন, সেইটা হয়তো অনেকের প্রান বাঁচাবে। কিন্তু, আপনি কি জানেন এর ফলে কি হবে ? এইটা বলদের দেশ। কিছু দিন পরে, অনেকেই এসে বলবে কই বলেছিলেন না, আমি মারা যাবো , কই মরি নাই তো।সেই বলদ গুলোকে এখন নিয়মিত দেখতে পাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.