এই রাষ্ট্র এবং সমাজকে এইটুকু সহনশিলতা অর্জন করতে হবে যে,ভুল উত্তর থাকতে পারে, কিন্ত ভুল প্রশ্ন বলে কিছু নাই।

বিগত কয়েক বছরের খারাপ কয়েকটা জিনিষের মধ্যে একটা হচ্ছে, মানুষের মধ্যে ভয় এবং অতিরিক্ত রেস্পেক্ট ঢুকিয়ে দেয়া।এর মধ্যে একটা হচ্ছে, স্যার ডাকা।

শুরু টা দেখেছিলাম, হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে । নতুন একটা প্রজন্মের মধ্যে নতুন একটা ট্রেন্ড দেখছি , উনাকে সবাই স্যার ডাকা শুর করলো। তারপর দেখলাম, জাফর ইকবাল সাহেবকেও সবাই স্যার ডাকে।

বিষয়টা এখন আর অড নাই। কিন্ত, আজকে থেকে ১০ বছর আগেও বিষয়টা অড ছিল।আমরা কেউ জাফর ইকবাল বা হুমায়ুন আহমেদকে স্যার ডাকি নাই। সুনিল বা শিরশেন্দুকে তো আমরা স্যার ডাকি না। ইনাদেরকে কেন ডাকতে হবে।

অন লাইনে লিখি, বেশ কিছু তরুনকে দেখি- এড্রেস করে স্যার বলে । আমি প্রতিবার শুধ্রে দেই। স্যার কেন ডাকবেন ? আমি কবে আপনার মাস্টার ছিলাম?স্যার ডাকবেন শুধুমাত্র নিজের শিক্ষক কে, অথবা অফিসে বাধ্যবাধকতা থাকলে।

এই অতিরিক্ত সম্মান দেখানোটা এখন অনেক দিকেই ছড়াইছে। বেগম জিয়াকে নামের আগে বেগম বা ম্যাডাম বলতে হবে, প্রধানমন্ত্রীকে মাননীয় বলতে হবে, রাষ্ট্রপতিকে মহামান্য বলতে হবে। শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু না বলে এখন তো গুরুতর অপরাধ।এই গুলো শব্দের ভূষণ হইলে সমস্যা ছিল না।এখন একটা প্রজন্ম দেখতে পাচ্ছি, যারা এই পদের এইসব অলঙ্কারকে একটা -প্রশ্নহীন আনুগত্যের অংশ হিসেবে নিচ্ছে।

এবং মিডিয়াতেও দেখি বড় বড় লেখক এবং আলোচকেরা এখন আনুগত্যের স্বীকৃতি জানিয়ে তাদের আলাপ করেন।এখন আরো একটা বিষয় দেখতে পাচ্ছি, সেইটা প্রশ্ন করা নিয়ে ।এখন বলা হচ্ছে, নিশ্চিত হয়ে প্রশ্ন কর।

মানে টা কি। নিশ্চিত হইলে তো প্রশ্নই করার দরকার নাই। নিশ্চিত না বলেই তো প্রশ্ন করতে হবে।এখন বলা হচ্ছে, প্রশ্ন টা ভুল। বা ভুল প্রশ্ন কইরো না।কি আশ্চর্য। কোন প্রশ্ন কি ভুল হইতে পারে ? প্রশ্ন তো কোন মিমাংসা না উত্তরে মীমাংসা। তাহলে প্রশ্ন কিভাবে ভুল হয়।এখন আমাদেরকে প্রশ্ন করার রাইটটা কেড়ে নেয়া হচ্ছে, একটা ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করে এবং একটা শ্রদ্ধা বা চেতনার আনুগত্য নির্মাণ করে ।

এর বড় একটা অস্ত্র হচ্ছে, নিবরতন মূলক আইনি ধারা।প্রগতিকে অনেক ভাবে মাপা যায়। কিন্ত ইন্ডিকেটর ছাড়া একটা প্রগতি হইলো নতুন প্রশ্ন গ্রহনে একটা রাষ্ট্র বা সমাজ কত উন্মুখ হইলো বা প্রথা এবং সংস্কারকে কত টুকু প্রশ্ন করা শিখলো- সেইটাকে মাপা।

কিন্ত এখন প্রশ্ন করার আগেই, একটা ভয়ের সংস্কৃতি ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে, মানুষের মনে যে “প্রস্নই কইরো না। কারণ, তোমার প্রশ্নটা ভুল”।এখন দেখিয়ে দেয়া হচ্ছে – এই লোক গুলো তোমার স্যার। এদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং আনুগত্যকে প্রশ্ন হীন কর, মাথা অবনত কর, বশ্যতা স্বীকার কর।এই ভুল প্রশ্ন করার ভয় থেকে, আমাদেরকে বের হতে হবে। প্রশ্ন করতে হবে, ভুল হোক, ঠিক হোক।এই রাষ্ট্র এবং সমাজকে এইটুকু সহনশিলতা অর্জন করতে হবে যে,ভুল উত্তর থাকতে পারে, কিন্ত ভুল প্রশ্ন বলে কিছু নাই।লিখছেন Zia Hassan Sir

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.