রুচির শর্মা কেন রাইজ এন্ড ফল অফ নেশানস গ্রন্থে – গুড বিলিয়নার থেকে ব্যাড বিলিয়নারদের আলাদা করেছিলেন

আমার প্রিয় অর্থনীতিবিদ রুচির শর্মা তার রাইজ এন্ড ফল অফ নেশান্সে- কোন দেশের উত্থান হবে কোন দেশের পতন হবে তা মাপার জন্যে ১০ টা খুবই ইউনিক ইনডিকেটর ব্যবহার করেছিলেন।
এর মধ্যে আমার খুব প্রিয় ইন্ডিকেটর হচ্ছে, গুড বিলিয়নর ভারসাস ব্যাড বিলিয়নার।

রুচিরের আর্গুমেন্ট হচ্ছে – ক্যাপিটালাজিমের মাধ্যমে যদি আপনি রাষ্ট্রের বড় অংশের মধ্যে প্রস্পারিটি আনতে পারেন তবে সেই খানে ধনিক শ্রেণী তৈরি হবে। রাষ্ট্রে যদি ইন-ইকুয়ালিটি কম থাকে তবে ধনিক শ্রেণী তৈরি হওয়া কোন অপরাধ না। বরং প্রয়োজনীয়ও। এইটা সামাজিক চলমানতার নেসেসারি ইনসেন্টিভ তৈরি করে।

রুচির দেখিয়েছেন যে, কিন্তু একটা দেশ কোন ধরনের ধনিক শ্রেণী তৈরি করতেছে সেইটা গুরুত্বপূর্ণ।
এই ধনী শ্রেণীকে রুচির দুই ভাগে ভাগ করেন, একটা হচ্ছে গুড বিলিয়নার আর একটা ব্যাড বিলিয়নার।

রুচিরের মতে গুড বিলিয়নার হচ্ছে, যারা উৎপাদন ভিত্তিক ফ্যাক্টরি, অথবা কোন ধরনের দক্ষতা বা ইনোভেশানের উপরে ভিত্তি করে কোটিপতি হয়।

রুচিরের মতে ব্যাড বিলিয়নার হচ্ছে তারা যারা সরকারের সাথে সম্পর্ক, রিয়াল এস্টেট , উত্তরাধিকারে প্রাপ্ত সম্পদ, অথবা চোরাচালান, মাদক বা অবৈধ ব্যবসা, ফিনান্সিয়াল মার্কেট, অথবা সরকারি টেন্ডার কন্ট্রাক্টে বখেরার ভিত্তিতে কোটিপতি হয়।

Billionaires can be both good and bad. Ruchir Sharma shows how to tell them  apart

বাংলাদেশে বিগত ১০ বছরের আমার অব্জারভেশান হচ্ছে, নতুন যারা উচ্চ বিত্তশালী হয়েছে তারা সকলেই, রুচির শর্মার ইনডিকেটরের ব্যাড বিলিয়নার।
বাংলাদেশের এই দশকের নব্য-ধনীদের প্রায় শত ভাগের প্রধান সম্পদ সরকারের সাথে কন্ট্রাক্ট, অথবা ভূমি দখল অথবা রাজনীতি।

কিন্তু, আশি , নব্বই এবং এমন কি একবিংশ শতকের প্রথম দশকের বাংলাদেশের নতুন ধনীদের অধিকাংশই কোন ধরনের ফ্যাক্টরি অথবা উৎপাদন অথবা এমনকি ট্রেডিং করি সুপার রিচ হয়েছে।

জাস্ট লুটপাট করে, রিচ হওয়া গ্যাছে কিন্তু, লুটপাট দখল করে সুপার রিচ হওয়ার কোন রাস্তা ফরচুনেটলি বাংলাদেশ রাষ্ট্রে ফরচুনেটলি স্বাধীনতার প্রায় ৪০ দশক পর্যন্ত ছিল না। কিছু কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল।

কিন্তু আওয়ামী লিগের এক মুখি শাসন এই প্রতিবন্ধকতা গুলো তুলে দিয়েছি।
এবং শুধু তাই না। আওয়ামী লীগ কোরিয়ার চায়বল মডেলে খুব অল্প কিছু টিয়ার ওয়ান সুপার রিচ তৈরি করেছে, যাদের সাথে রাষ্ট্রের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার সিম্বায়টিক রিলেশনশিপ তৈরি করা হয়েছে।
এই টিয়ার ওয়ানে আছে এস আলম গ্রুপ, সামিট গ্রুপ ,শিকদার গ্রুপ বসুন্ধরা গ্রুপ সহ আরো কিছু গ্রুপ।
সরকার এদেরকে কম্পটিশান বিলীন করে, একছত্র বাজার তৈরি করার সুযোগ করে দিয়েছে। থিংক সামিট। সামিটকে কিভাবে, বাংলাদেশের সব চেয়ে লুক্রেটিভ জ্বালানির বাজার দখল করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
এস আলম বা বসুন্ধরা অথবা শিকদার গ্রুপরাও এই ধরনের অনেক
সুযোগ পেয়েছে যা নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা হয় নাই।

এরা সবাই রুচির শর্মার ব্যাড বিলিয়নার। এদের মুল এসেট সরকারের সাথে সম্পর্ক ও পলিসি মানিপুলেশান। এদের সুযোগ সুবিধার জন্যে ডিউটি স্ট্রাকচার এমন ভাবে সাজানো হয়, যেন তারা কম্পটিশান এলিমিনেট করতে পারে। একই সাথে তারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ- সিকিউরিটি প্রটেকশন পায়। এদের উপরে চাঁদাবাজি করার সাহস কেউ পায় না। এদের ট্রানজেকশন কস্ট কম।

Ruchir Sharma - Wikipedia

রুচির শর্মার মতে ব্যাড বিলিয়ন রাষ্ট্রের স্টাবিলিটিতে দুই ভাবে সমস্যা তৈরি করে।
প্রথমত। গুড বিলিয়নাররা সমাজে শ্রদ্ধা পায়। থিংক, ইলেন মাস্ক অথবা বিল গেটস অথবা স্টিভ জবস এমনকি ওয়ারেন বাফেট (যদিও বাফেট রুচিরের হিসেবে ব্যাড বিলিয়নার , ফিনান্সিয়াল বাজার থেকে এসেছে) । কিন্তু, ব্যাড বিলিয়নারদের কেউ শ্রদ্ধা করেনা। ফলে সমাজে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়।

সেকেন্ডলি, ব্যাড বিলিয়নার বৃদ্ধি পাওয়া হচ্ছে একটা সাইন যার থেকে বোঝা যায়, সমাজে হার্ড ওয়ার্ক করে সোশাল মবিলিটির রাস্তা নষ্ট হয়ে গ্যাছে। ব্যাড বিলিয়নার যদি বৃদ্ধি পায় এবং গুড বিলিয়নার যদি কমে আসে তার থেকে বোঝা যায় রাষ্ট্রে ব্যবসা করার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নাই। সৎ ভাবে উৎপাদন করে, পরিশ্রম করে আর্থিক প্রগতি অর্জনের রাস্তা বন্ধ হয়ে গযাছে।
তার ফলে স্বাভাবিক ভাবেই, সোশাল মবিলিটি এবং পুঁজির বিকাশ একটা ভুল পথে পরিচালিত হবে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ঐ সমাজ উৎপাদন কমে আসবে, কর্মসংস্থান কমে আসবে ও রাষ্ট্রের উত্থান বাধা গ্রস্ত হবে।

বাংলাদেশের ফার্স্ট টায়ার সুপার রিচদের একটা অংশকে সরকার এম্পাওয়ার করেছে, সরকারের জন্যে কন্সেন্ট তৈরি করার জন্যে । এরা হুজুর পালে, মিডিয়া পালে , কবি পালে, সেলিব্রিটি পালে, মাদ্রাসা মসজিদ, স্পোর্টস ইত্যাদি স্পন্সর করে।
এই সব কাজে যে সোশাল ভ্যালিডিটি তৈরি হয়, সেইটা আবার সরকারের পক্ষে কন্সেন্ট তৈরি করে।
জাহাঙ্গীর ভাইয়ের মতে, এদেরকে স্বৈরাচার বিরোধী পলিটিকাল বয়ানে ইনক্লুড করলে সরকারের ভয়াবহ ভায়োলেন্স করার ক্ষমতা কমবে। কারণ তারা তাদের পুঁজির নিরাপত্তার জন্যে সংযত হবে।

রুচিরের এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইনডিকেটরটির ভিত্তিতে আমি বাংলাদেশে ব্যাড বিলিয়নারদের যে উত্থান এবং গুড বিলিয়নিয়ারদের যে পতন দেখেছি –
সেইটা বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন বয়ানের স্থানে কয়েক বছরের মধ্যেই যে একটি ভয়াবহ ফিনান্সিয়াল ক্রাইসিস হবে প্রডিক্ট করি -তার অন্যতম কারণ।

14 Comments

  1. মনে হয়, আগে একবার পড়ছিলাম। আবার পড়লাম।

  2. আওয়ামীলীগ যে সিন্ডিকেটটা তৈরী করেছে তা বর্তমানে অবিচ্ছেদ্য। এবং তাদের ইম্পাওয়ার করার মধ্য দিয়ে তারা নিজেরা শক্তিশালী হয়েছে।তবে বসুন্ধরার উত্থান বিএনপির আমল থেকেই, বাবরকে আর তারেক জিয়া থেকে হত্যা মামলা থেকে বাচার ঘটনা ঐটা প্রথম। বিএনপিকে যদি আপনি নিষ্পাপ মনে করেন সেটা হবে ভুল।বরং তারা নির্বোধ।তারেক জিয়ার ড্যান্ডি ডাই থেকে শুরু করে আরো যত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল সেখানে তার একচ্ছত্র অধিপত্য বিস্তারের মানসিকতাই তাকে ধ্বংস করেছে। একটা রাজনৈতিক পরিবার সবার আগে রাজনীতিকে প্রাধান্য দেবে তা না করে শামীম এস্কান্দার সহ পরিবারের সবাই ব্যবসায় লিপ্ত ছিল। তারা রাজনীতির পরিপূরক শক্তিগুলোকে কাছে ঘেষতে দেয় নাই তাদের জন্য আজকে আমাদের এই দষা।

  3. বইটা অর্ডার দিলাম, পড়া লাগব। থ্যানক্স!

  4. এরা (ব্যাড বিলিয়নার) আসলে ফ্যাসিবাদী সরকারের মূল অস্ত্র।
    ধন্যবাদ, আপনার সুন্দর লেখার জন্যে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.